ফাইল ছবি
গৌতম ভট্টাচার্য: কোন রেকর্ডের দিকে তাকাব? গত আঠারো বছরের কোনও আইসিসি (ICC) টুর্নামেন্টে ভারত যে কেন উইলিয়ামসনের দেশকে হারাতে পারেনি সেটা ভেবে অতীব আতঙ্কিত থাকব? নাকি সাম্প্রতিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে আশাবাদী থাকব যে গত আড়াই বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারত একবারও এদের কাছে হারেনি?
Fast & Accurate!#TeamIndia #T20WorldCup pic.twitter.com/g6pVfKDsJ7
— BCCI (@BCCI) October 29, 2021
কোন ভারত রোববার দুবাই স্টেডিয়ামে নামবে? ইতিহাসের কাঁটা ওপড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকা ইউনিট? নাকি ঠকঠকানি ভরা একটা ড্রেসিং রুমের চলমান শো কেস? ভাগ্য সহায়তা করবে এত গুরুত্বপূর্ণ দিনে? টস জিতবেন তো ভারত অধিনায়ক? চলতি বিশ্বকাপের যা অদ্ভুত চরিত্র দাঁড়িয়েছে, টস হারলে বিপক্ষ তোমায় প্রথম ব্যাট করাবে এবং তখন তুমি যত বড় হনুই হও, মরবে। মরুভূমির ধুলোর ঝড়ের ভয়াবহতার কথা লোকে এতকাল জেনে এসেছে। সান্ধ্য শিশিরের কাঁটা যে আরও বড় চোরাবালি কে জানত? কে জানত যে টি-টোয়েন্টিতে (T20) একটা অতর্কিত ভুল যেমন সেদিনের সুখ ছিনিয়ে নিতে পারে তেমনি উদ্বোধনী ম্যাচে তিন ঘণ্টার অস্বস্তি হেভিওয়েটকেও হড়কে দিতে পারে গোটা প্রতিযোগিতা থেকে?
বেশ বোঝা যাচ্ছে, মরুশহরের ভারত-পাক ম্যাচ ইতিহাসে সেই জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার পর শাহিন আফ্রিদির প্রথম ওভারের চেয়ে প্রভাবশালী কিছু আর ঘটেনি। ওই একটা ওভার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (T20 World Cup) অবিসংবাদী ফেভারিট ভারতকে এমন বেআব্রু করে দিয়েছে যে কেউ জানে না, নিউজিল্যান্ড ম্যাচ চলে গেলে কী হবে? ছি ছি, ভুল বললাম-হেরে গেলে কী হবে সবাই জানে। গ্রুপের খেলা আরও পড়ে থাকবে। আফগানিস্তান, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড। কিন্তু ভারত বিদায় নেবে বিশ্বকাপ থেকে। নামে যতই গ্রুপ লিগ হোক, ম্যাচটা অনন্ত প্রভাবশালী কোয়ার্টার ফাইনাল। হারলে রবি শাস্ত্রীকে বিয়োগান্ত পরিণতির মধ্য দিয়ে ভারতীয় কোচের চাকরি শেষ করতে হবে। মেন্টর ধোনিকে ঘিরে হানিমুনের বুদবুদ বন্ধ হবে। বিরাট কোহলি (Virat Kohli) সম্ভবত একদিনের ক্রিকেটেও অধিনায়কত্ব হারাবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁদের চেয়েও বেশি আতঙ্কিত কিছু পেশাদারের খোঁজ পাওয়া সম্ভব। কারা? আইসিসি কর্তারা। স্পনসর। এবং অফিসিয়াল টেলিভিশন চ্যানেলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভরা। এক সপ্তাহ হল শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ। আকর্ষণ টেনে নিয়ে যেতে হবে মাঝ নভেম্বর পর্যন্ত। রোববার ভারত হেরে যাওয়া মানে মহালয়ার পর দশমী ঘোষিত হয়ে যাওয়া। টিম ইন্ডিয়া (Team India) এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলে কে দেখবে বিশ্বকাপ? সাংঘাতিক পড়ে যাবে টিভি রেটিং। স্পনসরদের এত কোটি টাকা দিয়ে করা বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়াবে চ্যারিটি।
We are back!
A fun drill to start our session. #TeamIndia #T20WorldCup pic.twitter.com/lCmla6hcfT
— BCCI (@BCCI) October 27, 2021
অতলান্ত চাপের পরিস্থিতি। সাময়িক মর্যাদাহানিরও কি নয়? রোজ নতুন নতুন নাম নিয়ে লোফালুফি করছে ক্রিকেটরসিকরা। আসিফ আলি। হ্যারিস রউফ। ডেভিড মিলার। আন্দ্রে রাসেল। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। শাদাব খান। ভারত–যারা কিনা আইপিলের দেশ বলে তথাকথিত সসাগরা টি-টোয়েন্টি সাম্রাজ্যের অধিকারী তাদের বহুকথিত ধনুর্ধরদের কেউ নামই নিচ্ছে না। সেই ২৪ তারিখের ম্যাচের পর টিম ইন্ডিয়া নামেনি, ঠিক কথা। কিন্তু জনমানসেও তাদের নিয়ে তাগড়াই আত্মবিশ্বাস কোথায়?
ভারত গোঁয়ার্তুমি বন্ধ করে টিম বদলাবে কিনা সেটাও অপরিষ্কার। কোহলি কার কথায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে দল বাছবেন জানি না। ধোনির (MS Dhoni) না শাস্ত্রীর? ধোনির একটা স্টাইল হল বিপর্যয়েও দুমদাম দল না বদলানো। সিএসকের গৌরবজনক ইতিহাস তো দল নির্বাচনের ধারাবাহিকতা থেকেই তৈরি। কিন্তু আইপিএলের সুবিধে হল ক্যাপ্টেনের হাতে চোদ্দো ম্যাচ থাকে। প্লেয়ারকে সময় দেওয়া যায় যে তোমার ওপর আস্থা হারাচ্ছি না। এখানে তো সেই সুযোগ নেই। ভুবনশ্বর কুমারকে বাদ দিতে হলে এখনই। শার্দূলকে নিতে হলে এখনই। স্পিনার বাড়াতে হলে এখনই। হার্দিককে আর সময় দেওয়ার সুযোগ নেই। বল করতে না পারার মতো ফিটনেসের অভাব দেখলে বাদ দিতে হবে এখনই। আর কে বলতে পারে ধোনি-আদর্শ রোববারের ভারত হয়তো একটা বদলও করল না।
কলকাতা ময়দানে একসময় টিমগুলোকে সহজ দুটো ভাগে চিহ্নিত করা হত খনি আর গাঁট। খনি মানে সেই সময়কার বালি প্রতিভা। কুমারটুলি। এমনকী রাজস্থান। গাঁট মানে টালিগঞ্জ অগ্রগামী । ভ্রাতৃ সংঘ। রেলওয়ে এফসি। এহেন সরলীকরণে নিউজিল্যান্ড (New Zealand) তার মধ্যবিত্ত শক্তি অনুযায়ী খনি টিম হিসাবে চিত্রিত থাকার কথা। কিন্তু শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৭৯ অল আউট। ২০১৯ ওল্ড ট্রাফোর্ড সেমিফাইনালের যন্ত্রণাবিহ্বল স্মৃতি। আর ১৩৫ দিন আগের সাউদাম্পটন বলছে অন্য কাহিনি। কোভিডপূর্ব ওয়ান ডে বিশ্বকাপ হারের স্মৃতি যদি বা আবছা হয়ে যায়, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হার তো দগদগে থাকা উচিত। এটাই তো মোটিভেশন হতে পারে যে দুবাই মাঠে তোদের শুধু হারাব না, সংহার করব।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভাবা যাক। কী দুর্দান্ত শুরুই না করেছিল ভারত। পাকিস্তানকে প্রথম হারানোর ভঙ্গিটা এখনও ভুলতে পারি না। শেষ দিকে যুবরাজের উদ্ধত শটগুলো যেন বলছিল তোরা আর আমরা দুটো আলাদা শ্রেণি। হারাবার কথা মাথাতেই আনবি না। সেই আধিপত্য থেকে কিনা একটা ফাইনাল ম্যাচ খারাপ খেলে ভারত সর্বস্ব খুইয়েছিল। কুম্বলে হারান কোচের চাকরি। এখানে ঠিক উলটোভাবে উত্তরণের সুযোগ রয়েছে। প্রথমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যখন সবাই ভাবছে চূড়ান্ত বিপন্ন, তখন সাফল্যে অতর্কিত টেক অফ করার। এত কঠিন এবং অনিশ্চিত ঝোড়ো হাওয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল ভারত বহু বছর খেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.