রশিদ খানের লড়াইইয়ের পরেও ভ্যান ডার ডুসেনের ব্যাটে স্বস্তি পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আফগানিস্তান: ২৪৪ (আজমাতুল্লাহ ওমরজাই ৯৭*, গেরাল্ড কোয়েৎজা ৪/৪৪, কেশব মহারাজ ২/২৫)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৭/৫ (ভ্যান ডার ডুসেন ৭৬*, অ্যান্ডলি পেচলুকওয়াও ৩৯*, ডি কক ৪১, নবি ২/৩৫, রশিদ ২/৩৭)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও হার। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের পর এবার ব্যাট হাতে লড়াই করলেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। ফলে জোড়া হারের ধাক্কা হজম করে চলতি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল আফগানিস্তান। তবে নকআউটে কোফালিফাই করতে না পারলেও, বাইশ গজের যুদ্ধে আফগানরা লড়াকু মানসিকতা এবং টিম স্পিরিট দেখিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ার মন জিতে নিলেন। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বকাপ জয়ী দলকে হারানোর সঙ্গে নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে আফগানিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে গেল।
১৬ নভেম্বর ইডেন গার্ডেন্সের বাইশ গজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেই ম্যাচ খেলতে নামার আগে আফগানদের লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে হারালেও, কুইন্টন ডি কক-টেম্বা বাভুমাদের ব্যাটিং নিয়ে, বিশেষ করে রান তাড়া করতে নেমে ভেঙে পড়া নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠে গেল। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে ৩২৭ রান চেজ করতে নেমে মাত্র ৮৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। হেরেছিল ২৪৩ রানে। এবারও তেমন কিছু ঘটতেই পারত। যদি না আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রাসি ভ্যান ডার ডুসেন রুখে না দাঁড়াতেন।
ডি কক (৪১) থেকে বাভুমা (২৩)। এইডেন মার্করাম (২৫) থেকে ডেভিড মিলার (২৪)। নামজাদা ব্যাটাররা শুরুটা ভালো করলেও, রশিদ খান-মহম্মদ নবি-মুজিবের স্পিনের কাছে পরাস্ত হয়ে একে একে ফিরে গিয়েছিলেন। প্রবল চাপের মুখে সেই সময় আফগান স্পিনারদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন প্রোটিয়া মিডল অর্ডার ব্যাটার। ৯৫ বলে তাঁর অপরাজিত ৭৬ রানের ইনিংসের জন্যই ৫ উইকেটে কষ্টার্জিত জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। অ্যান্ডলি পেচলুকওয়াও ৩৯ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। নবি ৩৫ রানে ২ এবং রশিদ ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন।
প্রোটিয়াদের বোলিং চাপের মাঝেও বীরদর্পে লড়াই। টপ অর্ডারেরর ব্যাটাররা বড় রান না পেলেও লড়াকু ইনিংস খেললেন আজমাতুল্লা ওমরজাই। শতরান না পেলেও বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফগানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। আর আফগান ব্যাটারের যে দুরন্ত লড়াইয়ে ভর করে শুরুর দিকে খেই হারিয়ে ফেললেও ২৪৪ রানের লড়াকু রান তুলে দিয়েছিল আফগানিস্তান।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগান শিবির। রহমতুল্লা গুরবাজ (২৫) ও ইব্রাহিম জারদান (১৫) আফগানিস্তানের পক্ষে ভালো শুরু করলেও কেউই বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি। প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ (২/১৫)। তারপর আফগান শিবিরে কার্যত কাঁপন ধরিয়ে দেন গেরাল্ড কোয়েৎজা। মাত্র ৪৪ রানের বিনিময়ে ৪ জন আফগান ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান তিনি। আফগানিস্তান ম্যাচে ৪ উইকেটের সুবাদে মোট ১৮ উইকেট নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট শিকারিদের তালিকায় তিন নম্বরে পৌঁছে গিয়েছেন প্রোটিয়া পেসার কোয়েৎজা। পাশাপাশি জোড়া উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিডি।
কার্যত একা হাতে দলের স্কোর টানতে শুরু করেন তিনি। একসময় প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল পরপর দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের কোনও ব্যাটার ফের শতরান হাঁকানোর দোরগোড়ায়। কয়েকদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শতরান হাঁকিয়েছিলেন ইব্রাহিম জারদান। বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনও আফগান ব্যাটারের যা ছিল প্রথম সেঞ্চুরি।
যদিও আফগান শিবির ২৪৪ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ায় শতরান হাঁকানো থেকে বঞ্চিতই থেকে যেতে হয় আজমাতুল্লাকে। ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফগান কোনও ব্যাটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। একটা সময় মনে হচ্ছিল রশিদ খান-মহম্মদ নবির সৌজন্যে জয় দেখতে পারে আফগানরা। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে সব হিসাব বদলে দিলেন ভ্যান ডার ডুসেন। কিন্তু তাতে কি! ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বকাপ জয়ী দলকে হারানোর সঙ্গে নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দিয়ে আফগানিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে চলে গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.