বোরিয়া মজুমদার: ২০২১ ব্রিসবেন টেস্টের আগের দিন। চোটের কারণে সিরিজ নির্ধারক ম্যাচে জসপ্রীত বুমরাহের (Jasprit Bumrah) খেলা যে অনিশ্চিত, লিখে দিয়েছিলাম। মুহূর্তে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল খবরটা। বুমরাহ না খেললে ভারতের (India) কী দশা হতে পারে, তার প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে। স্বয়ং রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) আমাকে মেসেজ না করা পর্যন্ত খুব বেশি গুরুত্ব দিইনি খবরটা নিয়ে। মিডিয়ার কাজ যা, তাই তো করেছি আমরা। সেটা নিয়ে লম্ফঝম্ফের কী আছে?
রোহিতের মনে হয়েছিল যে, বুমরার খবরটা দেখতে পেলে অস্ট্রেলিয়ার সুবিধা হয়ে যাবে। ব্রিসবেন টেস্টের জন্য আরও ভালোভাবে তৈরি হয়ে নামতে পারবে অস্ট্রেলিয়া। রোহিত অনুরোধ করছিলেন যে, খবরটা না করতে। আমি পড়েছিলাম ফ্যাসাদে। মিডিয়ার ধর্মই হল, টিমের হালচাল পাঠকদের কাছে পেশ করা। কিন্তু ও দিকে আবার ভারতের সহ অধিনায়ক (সেই টেস্টে ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অজিঙ্ক রাহানে) অনুরোধটা করছেন, খবরটা না করতে! শুধুমাত্র ব্রিসবেন টেস্টের কথা ভেবে!
প্রশ্ন হল, রোহিত কেন বললেন কথাটা? তিনি কি জানতেন না যে, প্রচারমাধ্যমের কাজই হল টিম সংক্রান্ত খবরাখবর সঙ্গে সঙ্গে পাঠকদের দরবারে পেশ করা? তা ছাড়া রোহিত কথাটা বলে দু’টো জিনিস পরোক্ষে করে দিয়েছিলেন। এক, খবরটা যে সত্যি, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। দুই, ব্রিসবেন টেস্টের আগে টিমের মানসিকতা কোন জায়গায়, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া ক্রিকেটার আর প্রচারমাধ্যমের মধ্যবর্তী সীমানা অস্পষ্ট হয়ে এসেছিল হঠাৎ, যা হয় না সচরাচর।
কিন্তু এটাই রোহিত। টিমের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন, সব কিছু করতে ও সব সময় তৈরি থাকেন। বিশ্বাস না হলে, ভারতীয় টিমের রোহিতের সতীর্থদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন। চিরকালই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করেন রোহিত। টিমের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেষ্টা করেন। টিমে কেউ নতুন এলে তাঁকে স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। ডিনারে নিয়ে যান। যাতে সে সহজ হতে পারে। আসলে রোহিত বিশ্বাস করেন যে, টিমে অধিনায়কই সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যার কাজ হল সতীর্থদের সাহায্য করা।
“নিজে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ঘুরে কখনও ক্রিকেট টিমকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না আপনি। আপনাকে প্রতিটা প্লেয়ারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে বুঝবেন, খেলা নিয়ে কী ভাবছে তারা? মাঠে নেমে কী করতে চাইছে তারা? আপনার যে ধ্যানধারণা, তার সঙ্গে যদি আপনার সতীর্থরা সহমত হয়, তবেই একটা সফল ক্রিকেট টিম তৈরি করা সম্ভব। একজন অধিনায়কের মানুষের মন বোঝা বড় জরুরি। তাকে বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতির মুখোমুখি হতে হয়,” একাধিক আলাপচারিতায় আমাকে এই কথাটা বারবার বলেছেন রোহিত।
শুধু তাই নয়, ভারত অধিনায়ক হিসেবে কী কী বদল এনেছেন, সেটাও বলেছেন খোলসা করে। “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন যে, অধিনায়কই টিমের সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমি সব সময় মনে করি যে, টিমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাতে বাকিদের সমর্থন প্রয়োজন আমার। তাই আমার মতে, অধিনায়কের চেয়ে সব সময়ই বাকি দশ জন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই মনন অনুসরণ করলে, টিমের সেরাটা বার করে আনতে পারব আমি,” বলেছিলেন রোহিত।
এতদিন ধরে জানাশোনা রোহিতের সঙ্গে। কিন্তু কখনও ওঁকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। চলতি বিশ্বকাপে যা বারবার বোঝা যাচ্ছে। বিশ্বকাপে রোহিত দু’টো জিনিস নিয়মিত করছেন। প্রথমত, নতুন বলটা খেলে দিচ্ছেন। যার ফলে পরে যারা ব্যাট করতে আসছেন, তাঁদের সুবিধে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, টিমকে একটা ঝোড়ো শুরু দিচ্ছেন রোহিত। যা রানের ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণের লঞ্চিং প্যাড তৈরি করে দিচ্ছে। ওপেন করতে নেমে যে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন রোহিত, তাতে পরবর্তী ব্যাটাররা অনেক ধীরেসুস্থে ব্যাটিং করতে পারছেন। কিন্তু কী করে সম্ভব হচ্ছে এমন ব্যাটিং? বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের বক্তব্য হল, “কারণ মানসিক ভাবে রোহিত খুব ভালো জায়গায় রয়েছে। তা ছাড়া নিজের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও রয়েছে ওর।”
দ্রষ্টব্য একটাই এবার। ওয়াংখেড়ে সেমিফাইনালে রোহিত গুরুনাথ শর্মাকে একই রকম ধ্বংসাত্মক মেজাজে পাওয়া যায় কি না?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.