৯১ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ছিটকে দিলেন আইডেন মার্করাম। ছবি: টুইটার
পাকিস্তান: ২৭০ (শাকিল ৫২, বাবর ৫০, শাদাব ৪৩, শামসি ৪/৬০, জ্যানসেন ৩/৪৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৭১/৯ (মার্করাম ৯১, মিলার ২৯, শাহিন ৩/৪৫, ওয়াসিম ২/৫০, উসামা মির ২/৪৫)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাহলে কি ১৪ অক্টোবর রাতেই দেওয়াল লিখন পড়ে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের (Pakistan) অধিনায়ক বাবর আজম (Babar Azam)! টিম ইন্ডিয়ার (Team India) কাছে লজ্জাজনক ভাবে হারের পর, অস্ট্রেলিয়ার (Australia) কাছে উড়ে যাওয়া। এর পর অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের (Afghanistan) কাছে ল্যাজেগোবরে হয়ে যাওয়ার পর এবার সেই ভেন্যুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে লড়াই করেও ১ উইকেটে হেরে গেলেন মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan)-শাহিন শাহ আফ্রিদিরা (Shaheen Shah Afrdi)। লেখা ভালো আইডেন মার্করাম (Aiden Markram) ৯৩ বলে ৯১ রান করে শেষ মুহূর্তে আউট হলেও, পাকিস্তানের বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে দিলেন। মারলেন ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা। আর তাই লাগতার চার ম্যাচ হারের জন্য ভারতের মাটিতে আয়োজিত চলতি বিশ্বকাপ (ICC ODI World Cup 2023) থেকে প্রায় ছিটকে গেল ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়নরা। সৌজন্যে কেশব মহারাজের (Keshav Maharaj) ধৈর্যশীল ইনিংস। শেষ দিকে তাবরিজ শামসি ও লুঙ্গি এনগিডিকে নিয়ে লড়াই করে প্রোটিয়া শিবিরে হাসি ফোটালেন তিনি।
কাপ যুদ্ধের ইতিহাসে প্রোটিয়ারা ‘চোকার্স’ তকমা পেলেও, এবার দারুণ ছন্দে রয়েছে ‘সবুজ বাহিনী’। ফলে দুরন্ত বোলিংয়ের পর ২৭১ রান চেজ করা যে তাদের কাছে জলভাত হবে সেটা জানা ছিল। আর সেটাই হল। যদিও রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ফিরে যান এবার তিনটি শতরান করা কুইন্টন ডি কক। তিনি ১৪ বলে ২৪ রানে আউট হন। তাঁকে ফেরান শাহিন আফ্রিদি। এর পর ফিরে যান টেম্বা বাভুমা (২৮)। এবার প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তরুণ পেসার মহম্মদ ওয়াসিম তাঁর উইকেট নেন। ফলে ৬৭ রানে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভ্যান ডার ডুসেনও এদিন বড় রান করতে পারেননি। তিনি ২১ রানে আউট হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে যান ফর্মের তুঙ্গে থাকা হেনরিক ক্লাসেন (১২)। তাঁকেও আউট করেন মহম্মদ ওয়াসিম। ফলে ১৩৬ রানে ৪ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে আগ্রাসী মেজাজে রান তুলতে থাকেন আইডেন মার্করাম। সঙ্গে পেয়ে যান ডেভিড মিলারকে। দুজন পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ৭০ রান। দুই প্রোটিয়া তারকা বাইশ গজে দাপট দেখানোর সময় মনে হচ্ছিল পাকিস্তানের হার শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ৩৩.১ ওভারে ‘কিলার মিলার’ অহেতুক মারতে গিয়ে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। তাঁকে আউট করার পর শাহিনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল দেখার মতো। মিলার ৩৩ বলে ২৯ রানে আউট হন। মিলার আউট হতেই ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান।
কিন্তু লাভ হল না। আইডেন মার্করামের শতরান বাবর আজমদের পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল। মিলারের পর চলে গেলেন মার্কো জ্যানসেন। মারমুখী মেজাজে রান তুলতে শুরু করলেও বেশিদূর নিজের ইনিংসকে এগিয়ে নিতে যেতে পারলেন না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকলেও, এবার সেই তরুণ থামলেন ১৪ বলে ২০ রানে। তবে শেষ দিকে মার্করামের পর ফিরে যান কোয়েৎজে। তবুও রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা।
চাপের মুখে নাকি পাকিস্তানের লড়াকু চেহারা বেরিয়ে আসে! তবে এবারের কাপ যুদ্ধে তেমনটা কিন্তু দেখা গেল না। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমে ব্য়াট করে পুরো ৫০ ওভারও ব্যাট করতে পারল না পাকিস্তান। পাক অধিনায়ক বাবর আজম ৫০ রান করলেও, চাপ বজায় রাখতে ফের ব্যর্থ হলেন। যদিও লোয়ার অর্ডারে রান পেলেন সউদ শাকিল ও শাদাব খান। ষষ্ঠ উইকেটে ৮৪ রান যোগ করলেন দুজন। শাকিল ৫২ রান করে ফিরলেন। শাদাব ৩৬ বলে ৪৩ রান করলেন। তবে ব্যাটারদের বিচক্ষণতার অভাবে ২০ বল বাকি থাকতে ২৭০ রান করে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। তাবরিজ শামসি ৬০ রানে ৪ ও মার্কো জ্যানসেন ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন।
চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে ম্যাচের পরের দিকে সুবিধা পাচ্ছেন স্পিনাররা। যে কারণে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাবর। যাতে প্রতিপক্ষের ওপর বড় রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু মরণ বাঁচন ম্যাচে তেমন আগুনে পারফরম্যান্স একেবারেই দেখা গেল না। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও আগাগোড়া দাপট দেখাল প্রোটিয়ারা।
প্রোটিয়া বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাক শিবির। মাত্র ৯ রান করে ফেরেন আবদুল্লা শফিক। ১২ রান করে হেনরিখ ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমাম উল হক। দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি পেসার মার্কো জ্যানসেন। এরপর পাল্টা লড়াই শুরু করেন বাবর ও মহম্মদ রিজওয়ান। তবে লাভ হল না। কারণ কিন্তু রিজওয়ানকে আউট করে এদিন পাক শিবিরে ধাক্কা দেন জেরাল্ড কোয়েৎজে। তবে শেষ পর্যন্ত সউদ শাকিল ও শাদাব খানের লড়াইয়ের সৌজন্যে ২৭০ রান তোলে পাকিস্তান। কিন্তু ২০ বল নষ্ট করার খেসারত দিল পাক শিবির। সঙ্গে যোগ লাগাতার চার হার। ফলে এবারের কাপ যুদ্ধ থেকে বিদায়ের মুখে ১৯৯২ সালের বিশ্বজয়ী পাকিস্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.