চলতি কাপ যুদ্ধে দারুণ ফর্মে রয়েছেন লোকেশ রাহুল। ফাইল ছবি
আলাপন সাহা, লখনউ: হাতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। চলতি বিশ্বকাপে (ICC ODI World Cup 2023) ‘ছয়ে ছয়’ করার লক্ষ্য নিয়ে লখনউয়ের (Lucknow) একানা স্টেডিয়ামে নামছে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। এবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (England)। এমন একটা দল, যারা চার বছর আগে বিশ্বজয়ী হলেও এবার লাগাতার হেরে যাচ্ছে। জস বাটলার, জো রুট, বেন স্টোকস সম্বলিত তারকাখচিত দল ভারতের জয়রথকে আটকাতে পারবে? সেটা তো সময় বলবে। তবে এর আগে মেগা ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন লোকেশ রাহুল (KL Rahul)। মেগা ম্যাচে নামার আগে প্রতিপক্ষ থেকে চোট সারিয়ে ফিরে আসা। সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার ও ড্রেসিংরুমের বাতাবরণ থেকে হার্দিকের চোট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেন ভারতীয় দলের তারকা। রাহুলের সেই মন্তব্য সংবাদ প্রতিদিন. ইন-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: শুধু ইংল্যান্ড নয়। আমরা সব প্রতিপক্ষকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স দেখে ওদের বিচার করা সঠিক নয়। কারণ ওদের দলের একাধিক ম্যাচ উইনার আছে। ওরাও জেতার জন্যই মাঠে নামবে। তবে আমরাও হাল ছেড়ে দেব না।
মিডল অর্ডার তেমন পরীক্ষিত নয়: মিডল অর্ডার বড় রান না আমরা চিন্তিত নই। বিরাট-রোহিতের মতো সিনিয়ররা রান পেলে সেটা দলের জন্য ভালো। শুভমান, শ্রেয়স অর্ধ শতরান করেছে। আমিও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান করেছিলাম। জাদেজা ফর্মে আছে। সবাই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। যখন যে সুযোগ পাবে, সে নিজেকে উজাড় করে দেবে। আমরা এই মানসিকতা নিয়েই বিশ্বকাপ খেলছি।
চোট সারিয়ে ফিরে আসা: এই ইস্যু নিয়ে আগেও অনেকবার মন্তব্য করেছি। একটা সময় মনে করতাম, বাইরের কথাবার্তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে যাব না। তবে সেই ব্যাপারগুলো আমাকে প্রভাবিত করেছিল। সেইজন্য দলের মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। এছাড়া রানে ফেরার জন্য ব্যাটিং কোচ তো ছিলই। এদিকে কোয়াড্রিসেপের সেই চোটের জন্য যন্ত্রণা তো ছিলই, তবে রিহ্যাব করার সময় সেই ব্যথা আরও বেড়ে যায়। সেই সময় পরিবার ও সতীর্থরা পাশে না থাকলে তলিয়ে যেতাম। সেই কঠিন সময় পার করে এসেছি। সেইজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।
সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার ও ড্রেসিংরুমের বাতাবরণ: মাঠের মধ্যে আমরা যেমন থাকি, আমাদের ড্রেসিংরুমেও কিন্তু আমরা একটা পরিবারের মতোই। গত এশিয়া কাপে কামব্যাক করার পর থেকে বদলে যাওয়া ড্রেসিংরুমের চরিত্র সবাই উপভোগ করছি। আর এবার তো বিশ্বকাপে ফিল্ডারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই উদ্যোগ আমরা সবাই উপভোগ করছি। এবং আর একটা ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। বাইরের কথায় আমরা কেউ কান দিচ্ছি না।
একানা স্টেডিয়ামকে নিয়ে ভালো-মন্দ স্মৃতি: আমি তো সেই রাতটা ভুলতে চাই। কিন্তু আপনারা ভুলতে দিচ্ছেন কোথায়! (মজার ছলে, হাসিমুখে)। আসলে সেই ম্যাচে আমি বল তাড়া করছিলাম। আর তখনই টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়েছে চোট পেয়েছিলাম। পুরোপুরি টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমার কোয়াড্রিসেপ থেকে টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়ে আলাদা হয়ে যায়। যখন এটা ঘটে তখন আমি, আমার পরিবার, ফ্র্যাঞ্চাইজি, দল সকলেই, এটাই ভাবছিল যে, খুব একটা বেশি ছিঁড়ে যায়নি টেন্ডন, অল্পই ছিঁড়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমি ঠিক হয়ে যাব। কিন্তু যখন স্ক্যান রিপোর্ট আসে, তখন বোঝা যায় যে, টেন্ডন পুরোটাই ছিঁড়ে গিয়েছে। তখনই বোঝা গিয়েছিল যে, অস্ত্রোপচার করাতেই হবে। ফিজিয়োরা বুঝে গিয়েছিলেন এই একটা রাস্তাই খোলা রয়েছে আমার। কয়েক’টা দিন লেগেছিল, শুধু এটা ঠিক করতে যে, আমি কোথায় অস্ত্রোপচার করাব, কার কাছে করাব! তবে আমি সেরা চিকিৎসাই পেয়েছি। এর জন্য় বিসিসিআই এবং সকল ফিজিওকে ধন্য়বাদ দেব। খুব দ্রুত সবকিছু হয়েছে। তবে এবার এই মাঠেই ভালো পারফরম্যান্স করতে চাই।
রিহ্যাবের কঠিন সময়: অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে আমাদের ট্রেনার রজনী স্যরকে সেই অভিশপ্ত রাতের কথা বলছিলাম। একটা চোট আমার কেরিয়ারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। চোটের জন্য যন্ত্রণা তো ছিলই, তবে রিহ্যাব করার সময় সেই ব্যথা আরও বেড়ে যায়। সেই সময় পরিবার ও সতীর্থরা পাশে না থাকলে তলিয়ে যেতাম। সেই কঠিন সময় পার করে এসেছি। সেইজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে রিহ্যাব করার সময় ব্যাটিং করার চেয়েও উইকেটকিপিং করা বেশি কঠিন ছিল। তবে দলের স্বার্থেই আমি নিজেকে কিপার হিসাবে মেলে ধরতে চেয়েছিলাম। দল যেভাবে আমার কাছ থেকে সার্ভিস চাইবে, সেইভাবে নিজেকে উজাড় করে দেব।
এই ভারতীয় দলের বিশেষত্ব: কয়েক মাস আগে দল কীভাবে চলত সেটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এশিয়া কাপের পর থেকে সবাইকে খুব কাছ থেকে দেখার পর বলতে পারি, আমরা এবার খুনে ও আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে ক্রিকেট খেলছি। সঙ্গে রয়েছে সঠিক পরিকল্পনা। বিপক্ষ দলগুলোর শক্তি ও দুর্বলতা আমরা খুব ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখছি। টিম ম্যানেজমেন্ট সব ক্রিকেটারকে সুযোগ দিচ্ছে। তাই পাঁচটা ম্যাচ পরপর জিতলাম। বাকি ম্যাচগুলোও এভাবেই খেলতে চাই।
হার্দিকের চোট: হার্দিকের চোট আমাদের দলের কাছে বড় ধাক্কা। কারণ ও আমাদের দলের বড় অঙ্গ। ওকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা থাকে। তবে চোট আমাদের কারও হাতে নেই। ব্যাপারটা আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যজনক হলেও কিছু করার নেই। এই মুহূর্তে সূর্য ওর আদর্শ বিকল্প। সূর্য কতটা বিস্ফোরক ব্যাটার সেটা আমরা সবাই জানি। বাকিটা দেখা যাক। কেমন দল গড়ে মাঠে নামব সেটা টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.