শতরানের পর ব্যাট দেখাচ্ছেন রাচীন রবীন্দ্র। ছবি: টুইটার
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কে বলবে এটা তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ (ICC ODI World Cup 2023)! ইংল্যান্ড (England) থেকে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) মতো বিপক্ষ। বড় দলের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন রাচীন রবীন্দ্র (Rachin Ravindra)। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৬ বলে ১২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন রাচীন। আর এবার অজিদের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৯ বলে ১১৬ রান। ১৩০.৩৩ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে মেরেছিলেন ৯টি চার ও ৫টি ছক্কা। তবে শেষরক্ষা হয়নি। যদিও ভারতের মাটিতে পারফর্ম করে বিশেষ তৃপ্তি পাচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) তরুণ ক্রিকেটার।
২৩ বছরের অলরাউন্ডার ম্যাচের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন। সেখানে রাচীন বলেছেন, “সবাই আমার ক্রিকেটজীবনের শুরুটা দেখতে পাচ্ছেন। এভাবে শুরু করতে পেরে ভালো লাগছে। এখানে বিশ্বকাপ খেলতে আসার অনুভূতি দারুণ। সব কিছু যে ভাবে হচ্ছে, তাতে আরও বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠছে। আমাকে নিয়ে কারও কোনও প্রত্যাশা ছিল না কি না জানি না। আমি অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে বড় কোনও প্রত্যাশা নিয়ে আসিনি। শুধু দেশের জন্য ভালো খেলতে চেয়েছিলাম। তাই এমন পারফরম্যান্স করত পেরে আমি খুশি। দলের প্রয়োজনে রান করছি। দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারছি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হলেও আমরা বিশ্বকাপে ভালো জায়গায় আছি। তাই কিছু প্রত্যাশা করতেই পারি।”
[আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শূন্য করলেও, ‘বিরাটই সর্বকালের সেরা চেজ মাস্টার’, অকপটে জানালেন জো রুট]
দলকে জেতাতে ব্যর্থ হলেও, আউট হওয়ার আগে পর্যন্ত পুরোটাই রাচীন রবীন্দ্র শো। তাঁর নামা রাখা হয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের দুই সুপারস্টারের নাম থেকে! রাহুল দ্রাবিড়ের ‘রা’ এবং শচীন-এর ‘চীন’। দুই মিলিয়ে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ট্রফি নিয়ে মাঠে ঢোকেন শচীন তেন্ডুলকর। যাঁকে এতদিন টেলিভিশনে দেখেছেন, খুব কাছ থেকে দেখার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রবীন্দ্রর। ব্যাটিংয়ের সময় হয়তো এটাও ভাবছিলেন, শচীন তো দেখছেন! ইংল্যান্ডের পর এবার অজিদের বিরুদ্ধে শতরানের পর হয়তো মনে মনে সেটাই ভাবছিলেন ২৩ বছরের বাঁহাতি ব্যাটার।
এবার আসা যাক তাঁর ‘গ্যালারি থেকে খিলাড়ি’ হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে আয়োজক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড। রাচীন রবীন্দ্র তখন বেঙ্গালুরুতে। ভারতের সঙ্গে তাঁর ‘কানেকশন’ বাবার সৌজন্যেই। বাবার ক্রিকেট ক্লাব সংক্রান্ত কাজেই ভারতে এসেছিলেন। ১৪ জুলাই রাতে বেঙ্গালুরুর একটি পানশালায় ‘তাঁর দেশ’ নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল দেখছিলেন। রুদ্ধশ্বাস একটা ম্যাচ উপভোগ করছিলেন। কিন্তু শেষটা যে সুখের হয়নি! নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ টাই। সুপার ওভারও টাই! বাউন্ডারি নিয়মে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ট্রফির এত কাছ থেকে ফিরে আসা কারই বা হজম হয়! উঠতি ক্রিকেটার রাচীন রবীন্দ্রর তখন স্বপ্ন ছিল, দেশের হয়ে তিনিও বিশ্বকাপ খেলবেন। সেই স্বপ্ন ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়েছে। তবে এবার আর তাঁর লড়াই যোগ্য সম্মান পেল না। কারণ তাঁর সঙ্গে আর কেউ সহযোগিতা করতে পারল কোথায়!
তাঁর শিকড় ভারতে রয়েছে। সেটা নিয়ে রাচীনের আলাদা ভালোলাগা আছে। তবে নিজেকে ১০০ শতাংশ কিউই বলেই মনে করেন তিনি। তিনি ফের যোগ করেছেন, “অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট করার সময় ইনিংসের সময়ও কয়েক বার আমার নামে চিৎকার শুনেছি। আমি অবশ্যই ১০০ শতাংশ কিউয়ি। তবে আমার ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়েও আমি গর্বিত। এই দেশে আমার বাবা-মায়ের জন্ম। তাঁদের বড় হওয়া। তাই এখানে পারফরম্যান্স করতে পেরে দারুণ লাগছে।”
চলতি কাপ যুদ্ধের ৬ ম্যাচে ইতিমধ্যেই ৪০৬ রান করে ফেলেছেন। গড় ৮১.২০। সর্বোচ্চ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৩ রান। ১০৭.৬৯ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে করেছেন ২টি শতরান ও ২টি অর্ধ শতরান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.