মাঠে নেমেই সাফল্য। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন মহম্মদ শামি। ছবি: টুইটার
সব্যসাচী বাগচী: উইকেট পিছু এক প্লেট বিরিয়ানির চুক্তিতে একদিন ক্রিকেটজীবন শুরু করেছিলেন। এই মুহূর্তে তিনিই চলতি বিশ্বকাপে (ICC ODI World Cup 2023 Final) টিম ইন্ডিয়ার (Team India) বোলিংয়ের প্রাণভোমরা। সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি এমন এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন। সেই ‘সহেসপুর এক্সপ্রেস’ বলকে অনায়াসে কথা বলান। তাঁর বলের সিম পজিশন দেখে ঈর্ষান্বিত হতে পারেন বিপক্ষ দলের পেস বোলাররা। তবে এবারের কাপযুদ্ধে ‘মিস্টার সাবস্টিটিউট’ থেকে বিপক্ষ ব্যাটারদের যম হয়ে ওঠার উত্থান এত সহজে কিন্তু আসেনি। কারণ সেই ২০১৮ সাল থেকে যে স্ত্রী হাসিন জাহানের (Hasin Jahan) সঙ্গে তাঁর গার্হস্থ্য হিংসার মামলা চলছে। তবে এতকিছুর মধ্যেও শামিকে ভরসা দিচ্ছেন তাঁর দুই আইনজীবী সেলিম রহমান (Selim Rahman) ও নাজমুল আলম সরকার (Nazmul Alam Sarakar)। অনেকটা নেপথ্য নায়কের মতো।
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে আলিপুর কোর্টে এসেছিলেন। মাঝে মধ্যেই স্ত্রীর হুমকি বা কটাক্ষ সামলাতে হচ্ছে। এত সব নেতিবাচক দিকের মধ্যেও শামি কীভাবে বাইশ গজের যুদ্ধে আগুন ঝরাচ্ছেন? এর উত্তর দিলেন তাঁর আইনজীবী। তাঁর কাছ থেকেই মাঠে ও মাঠের বাইরে ধীরস্থির থাকার ভরসা পাচ্ছেন রোহিত শর্মার মূল অস্ত্র।
সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে নাজমুল আলম সরকার বলছিলেন, “২০১৮ সাল থেকে শামির সঙ্গে আমার আলাপ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর আলিপুর কোর্টে শামিকে নিয়ে এসেছিলাম। সেদিনই মহামান্য বিচারক বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে শামিকে জামিন দিয়েছিলেন। তার পর থেকেই ও অনেকটা খোলা মনে রয়েছে। ফলে ভালো খেলাই তো স্বাভাবিক। কারণ ওকে বলেই দিয়েছিলাম এই মামলা নিয়ে একেবারেই চিন্তা করতে হবে না। মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শামির যাতে দুশ্চিন্তা না হয় সেজন্য আমরা সবসময় মামলার বিষয়গুলি থেকে ওকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। খুব প্রয়োজন না হলে মামলার আপডেটও ওকে জানাই না।”
তবে শামি কিন্তু রাতারাতি এতটা স্বস্তি ফিরে পাননি। খেলা তো অনেক দূরের কথা, একটা সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সেটাও জানাতে ভুললেন না তাঁর আইনজীবী। নাজমুল আলম সরকার ফের যোগ করলেন, “হাসিন জাহান ওর বিরুদ্ধে বিসিসিআই-কে চিঠি লিখেছিল। ম্যাচ গড়াপেটার মতো মারাত্মক অভিযোগ তুলেছিল শামির বিরুদ্ধে। সেই সময় শামি খেই হারিয়ে ফেলে। তবে সময়ের সঙ্গে ওর মধ্যে অনেক বদল এসেছে। সেটা এবারের বিশ্বকাপে বোঝাই যাচ্ছে।”
কোচবিহার শহরের দেবীবাড়ির বাসিন্দা নাজমুল। রামভোলা হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এখন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। মামলা সংক্রান্ত ঝামেলার জেরে যাতে শামির পারফরম্যান্সে প্রভাব না পড়ে, তার জন্য প্রথমদিন থেকেই দেখছেন কোচবিহারের ছেলে। প্রবল ইচ্ছে থাকলেও নিজের সন্তানকে দেখতে না পাওয়া। বাবার মৃত্যু। তাঁর ধর্ম নিয়ে কটূক্তি। তবে এতকিছুর মধ্যেও প্রতি মাসে স্ত্রীর জন্য ৫০ হাজার টাকা ও সন্তানের জন্য ৮০ হাজার টাকা খোরপোশ দিচ্ছেন শামি। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও একমাত্র কন্যা আইরাকে দেখতে পান না তাঁর বাবা। সেইজন্য আগুনে জোরে বোলারের মন মাঝেমধ্যে কেঁদে ওঠে। সেটাও জানাতে ভুললেন না তারকা পেসারের আইনজীবী।
কাপযুদ্ধের শুরুতে তাঁর জায়গা হত ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুম। অথচ সেই শামির আগুনে পেসের দাপটেই ফাইনালে চলে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ছ’টি ম্যাচ খেলে তিনটিতেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন এই জোরে বোলার। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫৭ রানে ৭ উইকেট তুলে নেওয়ার সুবাদে এবারের কাপ যুদ্ধে তাঁর ঝুলিতে চলে এল ৬ ম্যাচে ২৩ উইকেট। প্রথম সেমিফাইনালে ৫৭ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার সুবাদে, শামি আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন। তিনি হলেন প্রথম ভারতীয় পেসার যিনি বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বাধিক উইকেট নিলেন। মাত্র ১৭টি ম্যাচে মোট ৫৪ উইকেট নিয়ে পিছনে ফেলে দিলেন জাহির খান, জভাগল শ্রীনাথ, জশপ্রীত বুমরাহ, অনিল কুম্বলের মতো বোলারদের। নিজের ইচ্ছাশাক্তি এবং লড়াকু মানসিকতার উপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছেন ‘সহেসপুর এক্সপ্রেস’। তাঁকে আড়ালে থেকে সাহায্য করে যাচ্ছেন দুই আইনজীবী সেলিম রহমান ও নাজমুল আলম সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.