৪৮তম শতরান করে ব্যাট দেখাচ্ছেন বিরাট ছবি: টুইটার
বাংলাদেশ: ২৫৬/৮ (লিটন ৬৬, তানজিদ ৫১, মাহমুদুল্লা ৪৬, জাদেজা ২/৩৮, বুমরাহ ২/৪১)
ভারত: ২৬১/৩ (বিরাট ১০৩*, শুভমান ৫৩, রোহিত ৪৮, রাহুল ৩৪*, মিরাজ ২/৩২)
ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খুব অঘটন না ঘটলে এই ব্যাটিং অর্ডারকে রুখে দেওয়া একেবারে অলীক কল্পনা। বাংলাদেশ (Bangladesh) ২৫৬ রান তোলার পর পদ্মাপাড়ের দল জয়ের মুখ দেখবে সেটা ছিল দিবাস্বপ্ন। আর সেটাই হল। বাইশ গজে নেমেই ব্যাটিং ঝড় তুলতে শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও শুভমান গিল (Shubman Gill)। আর বিপক্ষকে হেলায় হারিয়ে দেওয়ার কাজটা সারলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। সরি, ‘চেজ মাস্টার’ বিরাট। চলতি বিশ্বকাপে (ICC ODI World Cup 2023) দারুণ ফর্মে আছেন বিরাট। একদিনের ক্রিকেটে ৪৮তম শতরান করলেন। তাঁর ব্যাট থেকে এবার অপরাজিত ১০৩ রান। ফলে ৪১.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৬১ রান তুলে ম্যাচ জিতে এবারের কাপ যুদ্ধে ‘চারে চার’ করল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড।
যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রান চেজ করার রিমেক। প্রথম ওভার থেকেই মারমুখী মেজাজে ব্যাট চালাতে থাকেন রোহিত। শুভমানও পিছিয়ে ছিলেন না। ফলে মাত্র ১২.৪ ওভারেই উঠে যায় ৮৮ রান। সেই সময় পুল মারতে গেলে ডিপ স্কোয়ার লেগে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪০ বলে ৪৮ রানে আউট হন হিটম্যান। তাঁর ইনিংস ৭টি চার ও ২টি ছক্কা মারলেন তিনি। বিপক্ষের বোলারদের ক্লাবস্তরে নামিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম অর্ধ শতরান সেরে ফেলেন শুভমান। ‘নেক্সট বিগ থিং অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’ নিজের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না। ফিরলেন ৫৫ বলে ৫৩ রানে। মারলেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কা।
আর বিরাট। রোহিত আউট হতেই নামলেন। আর ক্রিজে গিয়েই শুরু করে দিলেন বাংলাদেশের বোলারদের নিধন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রবল চাপের মুখে করেছিলেন ৮৫ রান। আফগানদের বিরুদ্ধে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই রাতে ১৬ রানে থামতে হয়েছিল বিরাটকে। তবে এবার তিনি থামলেন না। বরং ৪৮তম শতরান করে বাংলাদেশকেই থামিয়ে দিলেন ‘চেজ মাস্টার’। ৯৭ বলে ১০৩ রান করলেন বিরাট। মারলেন ৬টি চার ও ৪ছক্কা। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন লোকেশ রাহুল (Lokesh Rahul)। এবার তাঁর ব্যাট থেকে এল ৩৪ রান।
পুণের মাঠের বাইশ গজ ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্য। এহেন পাটা পিচে টসে জিতে বাংলাদেশ শুরুটা ভালো করলেও, ফের একবার বোলারদের সৌজন্যে কামব্যাক করেছিল ভারত। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান (Tanzid Hasan) ও লিটন দাস (Litton Das) আগ্রাসী মেজাজে রান তুললেও, ফের একবার দাপট দেখালেন রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja), জশপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah), কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav), মহম্মদ সিরাজরা (Mohammad Siraj)। ফলে শেষ দিকে বহু যুদ্ধের নায়ক মাহমুদুল্লা রিয়াদ (Mahmudullah Riyad) ৩৬ বলে ৪৬ রান করলেও, নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫৬ রানে আটকে যায় টাইগার্সরা। আর এর পর বাইশ গজে রোহিত ও শুভমানের পর ফের একবার দাপট দেখালেন ‘কিং কোহলি’। তাই চলতি বিশ্বকাপে ‘চারে চার’ করে ফের একবার লিগ তালিকার শীর্ষে চলে যেতে ভারতীয় দলকে বেগ পেতে হল না।
শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan) চোটের জন্য খেলছিলেন না। তবে অধিনায়ক বাইরে থাকলেও সেটা বুঝতে দিলেন না তানজিদ ও লিটন। শুরুতে একটু ধীর গতিতে শুরু করলেও, হার্দিক পাণ্ডিয়া গোড়ালির চোটের জন্য মাঠ ছাড়তেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন টাইগার্সদের দুই ওপেনার। ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়ে ব্যাট করার জন্য প্রথম উইকেটে উঠে যায় ৯৩ রান। অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়েছিল ভারতের বোলাররা। এবার পদ্মাপাড়ের দেশের বিরুদ্ধেও কামব্যাক করলেন কুলদীপ-জাদেজা।
বাংলাদেশের রান যখন ৯৩, তখন ব্যক্তিগত ৫১ রানে ফিরে যান তানজিদ। তাঁকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন কুলদীপ। ১১০ রানের মাথায় বিপক্ষকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন ‘স্যর জাদেজা। দ্রুত ফিরে যান ‘স্টপগ্যাপ’ অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত (8)। এর পর এল সেই মুহূর্ত। যেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিল গোটা দেশ। সিরাজের লেগ স্টাম্পের বাইরে যাওয়া ডেলিভারিকে স্টিয়ার করতে গেলে বাঁদিকে উড়ে ক্যাচ ধরেন লোকেশ রাহুল)। ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২৯ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও লিটন দারুণ ফর্মে ছিলেন। সেবারও তাঁর রান আউট হতেই কেঁপে গিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। এবারও অর্ধ শতরান করলেও, দলকে চাপের মুখে ফেললেন লিটন। জাদেজাকে কভারের উপর দিয়ে মারতে গেলে শুভমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ৮২ বলে ৬৬ রানে ফিরে যান এই ওপেনার।
শেষ দিকে মুশফুকির রহিম ও মাহমুদুল্লা রিয়াদ স্কোরবোর্ডে বড় রান গড়ার চেষ্টা করলেও, ফের বিপক্ষের উপর চাপ বাড়িয়ে দেন বুমরাহ। কারণ বুমরাহের অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে স্কোয়ার কাট মারতে যান মুশফিকুর। সেই ক্যাচ উড়ে লুফে নেন পয়েন্টে থাকা জাদেজা। মনে করালেন জন্টি রোডসের স্মৃতিকে। এর পর মাহমুদুল্লা রিয়াদ একা লড়লেও ৮ উইকেটে ২৫৬ রানে আটকে গেল টাইগার্সরা। বুমরাহ ৩৩ রানে ২, জাদেজা ৩৮ রানে ২ ও সিরাজ ৬০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট পেলেন কুলদীপ ও শার্দুল। এর পর বাকিটা সময় বাইশ গজে ভারতের ব্যাটাররা রাজত্ব করে গেলেন। আর তাই অনায়াসে পরপর চতুর্থ ম্যাচ জিতে সেমি ফাইনালের আরও কাছে পৌঁছে গেল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.