দাপটের সঙ্গে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল আফগানিস্তান। ছবি: টুইটার
আফগানিস্তান: ২৮৪ (গুরবাজ ৮০, ইক্রাম আলিখিল ৫৮, আদিল রশিদ ৩/৪২)
ইংল্যান্ড: ২১৫ (মুজিব ৩/৫১, নবি ২/১৬, রশিদ ৩/৩৭)
আফগানিস্তান ৬৯ রানে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এই প্রথমবার চলতি বিশ্বকাপে অঘটনের সাক্ষী থাকল ক্রিকেট দুনিয়া। সব হিসাব উলটে দিয়ে ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল আফগানিস্তান। এর আগে দুবার দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। দুইবার ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। তবে এবার বাজিমাত করলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ-রশিদ খান-মুজিব উর রহমানরা। গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের গর্বকে মাটিতে মিশিয়ে জস বাটলারের দলকে ২১৫ রানে গুটিয়ে এবং তাদের গর্ব মাটিতে মিশিয়ে দিলেন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আফগানরা। এর আগে ব্যাট করে ২৮৪ রান তুলেছিল আফগানিস্তান।
কয়েকদিন আগেই পর পর ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল আফগানিস্তান। প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৪ হাজার মানুষ। সেই বিপর্যয়ের পর সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই এদিন কাবুলিওয়ালার দেশ ফের কম্পন অনুভব করল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৬.৩। দেশের মানুষ যখন বিপদে আছেন, ঠিক সেই সময় দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাইশ গজের যুদ্ধে দাপট দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিল ১১জন আফগান যোদ্ধা।
জনি বেয়ারস্টো থেকে লিয়াম লিভিংস্টোন, জস বাটলার থেকে জো রুট। আফগান স্পিনারদের সামনে কেউ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেননি। ৬৬ রান করে কিছুটা লড়লেন দাউইদ মালান। কিন্তু সেটা জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কারণ আগাগোড়া সাহেবদের তারকাখচিত ব্যাটিংকে চাপে রেখেছিলেন মুজিব, রশিদ খানরা। ফলে ইতিহাস গড়তে অসুবিধা হল না। মুজিব ৫১ রানে ৩ উইকেট নিলেন। রশিদের ঝুলিতে এল ৩৭ রানে ৩ উইকেট। আর এক অফ স্পিনার মহম্মদ নবি ১৬ রানে ২ উইকেট নিলেন।
এক বল বাকি থাকতে ২৮৪ রানেই অল আউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের হয়ে আদিল রশিদ সর্বাধিক তিনটি উইকেট নেন। রহমানুল্লাহ গুরবাজ ব্যাট হাতে আফগানদের হয়ে সর্বাধিক ৮০ রানের ইনিংস খেলেন। তার পাশাপাশি ইক্রাম আলিখিলও ৫৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন।
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে আফগানিস্তান। ইনিংসের শুরুতে ব্যাটে নেমেই দুই আফগান ওপেনার গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান শতরানের পার্টনারশিপ গড়েন। সপ্তম ওভার অর্ধশতরানের গণ্ডি পার করে আফগানরা। দেখতে দেখতেই শতরানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেন দু’জন। ১১৪ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। প্রথম উইকেট হারানোর পরই ১৯তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় আফগানিস্তান। শতরান হাতছাড়া করেন গুরবাজ। আফগান অধিনায়ক হসমতুল্লাহ শাহিদির দোষে তিনি রান আউট হন। এর পর রহমত শাহকেও ফেরান আদিল রশিদ।
আজ়মাতুল্লাহ ওমরজাইকে ১৯ রানে আউট করেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ১৫২ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। পরপর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আফগানরা। মহম্মদ নবি (৯) তেমন রান পাননি। তবে আফগানিস্তানের হয়ে আলিখিল লড়াইটা চালিয়ে যান। তাঁকে সঙ্গ দেন রশিদ খান। ৬২ বলে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন তিনি। রশিদ ২৩ রানের আগ্রাসী ইনিংস খেলে আউট হন। আদিল রশিদের বিরুদ্ধে বড় শট হাঁকাতে গেলেও বাউন্ডারি লাইনে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ ধরে রশিদ খানকে সাজঘরে ফেরান জো রুট।
তবে রশিদ আউট হলেও আফগানিস্তানের রানের গতি কমেনি। মুজিব উর রহমান ব্যাটে নেমেই বড় বড় শট হাঁকাতে থাকেন। তিনটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। ১৬ বলে ২৮ রান করেন তিনি। আলিখিল ৫৮ রান করে আউট হন। শেষমেশ ২৮৪ রানেই শেষ হয় আফগানিস্তানের ইনিংস। তবে সেই রানের মধ্যে অনেক বেশি শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে অল আউট করতে বেগ পেতে হয়নি। আর তাই চলতি বিশ্বকাপ প্রথম অঘটনের সাক্ষী থাকল। বাইশ গজের যুদ্ধে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আফগানদের ‘টিম গেম’-এর জন্য সাহেবদের গর্ব মাটিতে মিশে গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.