আলাপন সাহা: রবিবাসরীয় ইডেনে ঋদ্ধিমান সাহা কোথাও ছিলেন না। রবিবাসরীয় ইডেনে ঋদ্ধিমান সাহা সর্বত্র ছিলেন!
সূর্যকুমার যাদবের তাণ্ডব। উপর্যূপরি ওয়েস্ট ইন্ডিজ (West Indies) বধ করে রোহিতের ভারতের টানা দুই সিরিজ জয়। রবিবার রাতের ইডেনে বসে মনে হচ্ছিল, ঋদ্ধি বিতর্কের গনগনে আঁচে সব কেমন যেন বিবর্ণ, গৌণ হয়ে গেল। ইডেন থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে ছুটি কাটানো ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha) সশরীরে না থেকেও চর্তুদিকে ছেয়ে রইলেন।
রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) বোধহয় ভাবতেও পারেননি সিরিজ জয়ের পর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটাই আসবে ঋদ্ধিমান নিয়ে। রাহুলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ঋদ্ধি যে বলেছেন, তিনি নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষে বঙ্গসন্তানকে ঘুরিয়ে অবসরের ভাবনা ভাবতে বলেছিলেন, সেটা কি ঠিক? জবাবে ভারতীয় কোচ বললেন, “ধন্যবাদ এভাবে আমাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। ঋদ্ধিকে আমি ধোঁয়াশায় রাখতে চাইনি। ঋদ্ধি অনেক কিছু করেছে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য। আমি সে’সব কীর্তির কথা মাথায় রেখে, ঋদ্ধির প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় ওকে কথাটা বলেছি। আর ও যে সেটা প্রকাশ্যে বলেছে, তা নিয়ে আমি দুঃখও পাইনি।”
এখানেই না থেমে ভারতীয় ক্রিকেটের দ্য ওয়াল আরও যোগ করেন, “দেখুন সবসময় আমার বক্তব্যের সঙ্গে প্লেয়ারের মতও যে মিলবে তার কোনও মানে নেই। তবে তার মানে এই নয় যে সবকিছুকে কার্পেটের তলায় ফেলে ধামাচাপা দিয়ে দিতে হবে। প্লেয়ারের সঙ্গে কথা বলা যাবে না। আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি কোনও প্লেয়িং ইলেভেন বাছার সময় যারা খেলছে না, তাদের জানানো উচিত যে তারা কেন খেলছে না। ক্রিকেটারের দুঃখ হবে। কষ্ট হবে। সে যন্ত্রণাও পাবে। আমি শুধু বলতে চেয়েছি ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant) যেহেতু এখন এক নম্বর কিপার, তাই নতুন কাউকে দ্বিতীয় কিপার হিসাবে তৈরি করা হবে। কিন্তু তাই বলে ঋদ্ধির প্রতি সম্মান বা শ্রদ্ধা কোনওটাই আমার কমে যাবে না।”
এত ঝামেলার মধ্যে সিএবি (CAB) সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় আবার হঠাৎ করে প্রেস কনফারেন্স ডেকে দেন। স্নেহাশিস শুধু বলেন, বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কী কথাবার্তা হয়েছে, সেটা বলে ঠিক করেননি ঋদ্ধিমান। আর বলেন, ঋদ্ধির রনজি খেলা উচিত ছিল। বাংলার রনজি টিমে যে কোনও সময় ঋদ্ধিকে স্বাগত। অথচ ঋদ্ধির বক্তব্য, তিনি যদি আর ভারতের হয়ে না-ই খেলেন, রনজি খেলে একজন জুনিয়রের জায়গা আটকে রেখে কী লাভ? স্নেহাশিসের প্রেস কনফারেন্সের মর্মার্থ যে ঠিক কী, তা পরিষ্কার নয়। একবার সিএবি বলছে, ঋদ্ধি যা করেছেন ভুল করেছেন। সেই সিএবি আবার পর মুহূর্তে বলছে, ঋদ্ধি বাংলা খেলতে চাইলে তার চেয়ে ভাল আর কিছু হয় না। কোনটা আসল মনোভাব? যাক গে যাক।
মাঝরাতে দ্রাবিড়ের সাংবাদিক সম্মেলনের পর পুরো ব্যাপারটাই আবার ঋদ্ধির দিকে ঘুরে গেল। তিনি কি আরও কিছু বলবেন? নতুন কোনও অগ্নিসংযোগ ঘটাবেন? কে জানে। তবে যেটা না জেনেও লিখে দেওয়া যায়, ইডেনের বরপুত্র রোহিত শর্মা নির্ঘাৎ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, তাঁরই প্রিয় মাঠে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের গরিমা চাপা পড়ে যাবে এক বঙ্গসন্তানের আলোচনায়!
আর এক বঙ্গসন্তানও রবিবার ইডেনে ছিলেন। খেলা দেখেছেন। মেজাজও ভালই ছিল। তবে ঋদ্ধিমান প্রসঙ্গ ওঠায় শুধু বলে দেন, ‘‘আমি কিছু বলব না।’’ তিনি ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি ঋদ্ধিকে নিয়ে একটা শব্দও বলতে চাননি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.