সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে প্রাক্তন পাক তারকা দানিশ কানেরিয়া। হিন্দু হওয়ায় পাকিস্তান দলে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। কানেরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে এমন বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেছিলেন শোয়েব আখতার। রাওয়ালপিণ্ডি এক্সপ্রেসের এই বক্তব্যকে পুঁজি করে নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে চলেছেন প্রাক্তন পাক স্পিনার। তৎকালীন সতীর্থদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করছেন কানেরিয়া। ফের বোমা ফাটালেন তিনি। জানালেন, বুকিদের বিষয়ে সবরকম তথ্যই পাক ক্রিকেটার এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (PCB) কাছে থাকত। তাঁর এমন অভিযোগে রীতিমতো তোলপাড় পাক ক্রিকেট।
কানেরিয়ার দাবি, পিসিবির আমন্ত্রণেই বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসত বুকিরা। গোটা পাক দল তাকে চিনত। পাকিস্তান দলের একাধিক সফরে তাকে দেখা যেত। প্রাক্তন স্পিনার বলেন, “আমি ওই ব্যক্তিকে (বুকি) ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না। আমাকে একই ধর্মের লোক বলে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” পরে তাঁর বিরুদ্ধে এসেক্স কাউন্টি দলের হয়ে গড়াপেটার অভিযোগ আনা হয়। বলছেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমি মেনে নিয়েছিলাম। ভুল হয়েছিল। কিন্তু নিজের দেশকে তো বিক্রি করে দিইনি। এখানে অনেকেই নিজের দেশকে বিক্রি করে জেলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে দল তাদের স্বাগত জানিয়েছে। আমি কখনও টাকার জন্য দেশকে বিকিয়ে দিইনি।” কানেরিয়ার একের পর এক মন্তব্যে আলোড়ন পড়েছে পাক ক্রিকেট মহলে। হিন্দু হওয়ায় তাঁর প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, তার ক্ষোভ পুরোদমে উগরে দিচ্ছেন কানেরিয়া।
তবে জানেন কি, কানেরিয়া একা নন, এর আগে আরও ছয় অমুসলিম ক্রিকেটার পাক দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন? চলুন তাঁদের বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
রুসি দিনসো (Rusi Dinshaw): দেশভাগের সময় পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫২-৫৩-তে ভারত সফরে পাক দলে সুযোগ পান। যদিও সেই সিরিজে প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি তাঁর। ৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন। পাক টেস্ট দলে একমাত্র পারসি ক্রিকেটার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন প্রয়াত এই ক্রিকেটার। কিন্তু কখনওই কোনও বিষয়ে পিসিবিকে পাশে পাননি।
ওয়ালিস ম্যাথিয়াস (Wallis Mathias): পাক দলের প্রথম অমুসলিম ক্রিকেটার। ২১টি টেস্টে ৭৮৩ রান করেছিলেন। টেস্টে ২২টি ক্যাচ নিয়ে নজর কেড়েছিলেন। বড়মাপের ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলেও ১৯৫৮-৫৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৪৬ ম্যাচে ৭৫০০ রান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
ডানকান শার্পে (Duncan Sharpe): অ্যাংলো-পাকিস্তান ৫০-এর দশকে পাকিস্তানের হয়ে তিনটি টেস্ট খেলেছিলেন। করেন ১৩৪ রান। ৩৭টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ১৫৩১ রান। যার মধ্যে রয়েছে দুটি সেঞ্চুরি ও সাতটি হাফ-সেঞ্চুরি। ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়া চলে যান তিনি।
অ্যান্টাও ডিসুজা (Antao D’Souza): জন্ম গোয়ায়। তবে খেলেছিলেন পাকিস্তান দলেই। ছটি টেস্টে করেছিলেন ৭৬ রান। তুলে নিয়েছিলেন ১৭টি উইকেট। ওয়ালিসের পর দ্বিতীয় গোয়ানিস হিসেবে পাকিস্তানের হয়ে খেলার নজির গড়েছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে সপরিবারে কানাডায় চলে যান তিনি।
অনিল দলপত (Anil Dalpat): পাক দলের প্রথম হিন্দু ক্রিকেটার। কানেরিয়ার আত্মীয় তিনি। ওয়াসিম বারি সরে দাঁড়ানোর পর দলে ডাক পান। ব্যাটসম্যান এবং উইকেটকিপার হিসেবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন। তবে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি। এর জন্য প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইমরান খানকে দায়ী করেছিলেন অনিল।
সোহেল ফজল (Sohail Fazal): খিস্ট্রান এই ক্রিকেটারের কেরিয়ারও বিশেষ দীর্ঘ নয়। পাকিস্তানের হয়ে দুটি ওয়ানডে খেলেছিলেন। করেছিলেন ৫৬ রান। তাঁর সর্বোচ্চ ৩২ রান ভারতের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ৩৮ রানে জিতেছিল পাকিস্তানই। এর পাশাপাশি ৩৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন সোহেল। করেছেন চারটি হাফ-সেঞ্চুরি।
ইউসুফ ইউহানা (Yousuf Youhana): পাক ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল ক্রিকেটার। যিনি বর্তমানে পরিচিত মহম্মদ ইউসুফ নামে। ২০০৫ সালে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। দেশের হয়ে ৯০টি টেস্টে ৭৫৩০ রান ভরেছিলেন ঝুলিতে। হাঁকিয়েছিলেন ২৪টি শতরান। স্যর ভিভ রিচার্ডসের ৩০ বছর পুরনো রেকর্ডও ভাঙেন চতুর্থ খ্রিস্টান হিসেবে পাক দলে খেলা ব্যাটসম্যান। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লজ্জার হারের পর নির্বাসিত করা হয়েছিল ইউসুফকে। পরে নির্বাসন কাটলেও জাতীয় দলে ফেরেননি তিনি। ২৮৮টি ওয়ানডে-তে তাঁর সংগ্রহ ৯৭২০ রান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.