Advertisement
Advertisement

Breaking News

Cricket

সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে নয়, ভারতে! জানুন অজানা ইতিহাস

টাইমলেস টেস্ট থেকে আজকের টি২০, ক্রিকেট হেঁটে এসেছে অনেকটা পথ।

Gillette Cup was the beginning of a new era in cricket
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:June 29, 2024 6:53 pm
  • Updated:June 29, 2024 7:03 pm  

বিশ্বদীপ দে: গত কয়েক দশকে পৃথিবী বদলে গিয়েছে আমূল। যত সময় গিয়েছে তত বেড়েছে গতি। মানুষ হয়ে পড়েছে ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর। আর নিজের প্রয়োজনমতো পছন্দের বিনোদনকে কেটেছেঁটে সাইজ করে নিয়েছে। ক্রিকেটও আজকের রিলসের সঙ্গে পাল্লা দিতে ডানা খসিয়ে কুড়ি থেকে নেমে দশেও নেমেছে। টি১০ অচিরেই জনপ্রিয়তায় বিশ-বিশকে পিছনে ফেলল বলে! অথচ একসময় এমন টেস্ট ম্যাচও খেলা হয়েছে, যার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমাই নেই। যাকে বলা হয়েছিল ‘টাইমলেস টেস্ট’। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে ক্রিকেটের আকর্ষণ। আর জৌলুস ফেরাতেই জন্ম হয় সীমিত ওভারের ক্রিকেটের। যার শুরুয়াৎ… ইংল্যান্ডের জিলেট কাপের কথাই সকলে বলে থাকেন। কিন্তু ভুললে চলবে না, এই আইডিয়ার শিকড় কিন্তু পোঁতা রয়েছে ভারতেই। সদ্য স্বাধীন দেশে, কেরলে হয়েছিল এমন এক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, যেখানে সীমিত ওভারে খেলার নিষ্পত্তি হয়েছিল। অর্থাৎ সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্ম ভারতেই।

জিলেট কাপের (Gillette Cup) বৃত্তান্ত বলতে গেলে তাই এসে পড়েই কেরলের অল ইন্ডিয়া পূজা ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রসঙ্গ। সেটা ১৯৫১ সালে। কোচিনের ত্রিপ্পুনিতুরায় নবরাত্রির সময় আয়োজিত হয়েছিল ওই প্রতিযোগিতা। প্রাক্তন ক্রিকেটার কে ভি কেলাপ্পান থাম্পুরানের মাথায় আইডিয়া আসে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করার। তবে বোলারদের ওভারের কোনও সীমাবদ্ধতা ছিল না। অর্থাৎ যে যত খুশি বল করতে পারবেন। মারকাটারি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ওই প্রতিযোগিতা। পরবর্তী সময়ে যেখানে খেলেছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভি বি চন্দ্রশেখর, সুনীল যোশি থেকে অনিল কুম্বলে, কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত, ভেঙ্কটেশ প্রসাদের মতো ক্রিকেটাররা।

Advertisement

France Cricket organised fake matches to show their commitment to women's cricket in order to get funding from the ICC

[আরও পড়ুন: স্থগিত হওয়া ইউজিসি-নেটের নয়া দিন জানাল NTA, কবে পরীক্ষা?]

এর ঠিক পরে ১৯৬২ সালে এমনই এক প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় ইংল্যান্ডে। লেস্টারশায়ার, ডার্বিশায়ার, নর্দাম্পটনশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ার অংশ নিয়েছিল সেখানে। নকআউট প্রতিযোগিতা। মিডল্যান্ডস নকআউট কাপ। প্রতিটি ম্যাচে দলগুলি ৬৫ ওভার করে খেলেছিল। মনে রাখতে হবে এই ধরনের প্রতিযোগিতার সাফল্যের পরই কিন্তু জন্ম নিয়েছিল সীমিত ওভারের জিলেট কাপের আইডিয়া। সেটা ১৯৬৩ সাল। বদলে যেতে শুরু করল ক্রিকেট। যা আজকের টি২০ ক্রিকেটের বিপুল সাফল্যের ছায়াকেই নির্মাণ করতে শুরু করেছিল।

মিডল্যান্ডস নকআউট কাপের আইডিয়ার পিছনে ছিল ক্রমশ কমতে থাকা দর্শক। সেই সময় লেস্টারশায়ারের সম্পাদক ছিলেন মাইক টার্নার। তাঁরই মাথা থেকে বেরিয়েছিল ৬৫ ওভারের ম্যাচ করার আইডিয়া। পরবর্তী সময়ে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাইক বলেছিলেন, ”ছয়ের দশকের গোড়ায় ক্রিকেট যুদ্ধোত্তর জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছনোর পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দর্শক কমছিল। কিছু একটা পরিবর্তন দরকার ছিল, যেটা খেলাটার আকর্ষণ ফেরাবে। এই নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল।” এমন একটা সময় এসে গিয়েছিল যখন লাগাতার ড্র আর ড্র দেখে দর্শকরা ক্লান্তির চরমে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এক একটা রান করতে বিস্তর সময় নিচ্ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। কাউন্টি ক্রিকেট দেখতে মানুষ আর আগ্রহই অনুভব করছিলেন না। বলা হত, কুকুর আর পাদরি (পাদরিদের ক্রিকেট প্রীতির কথা সর্বজনবিদিত, কিংবদন্তি ক্রিকেট লেখক নেভিল কার্ডাসের লেখাতেও যার উল্লেখ রয়েছে) ছাড়া আর কেউ মাঠে আসে না খেলা দেখতে! এমনই এক পরিস্থিতিতে মাইকের আইডিয়াই জন্ম দিয়েছিল সীমিত ওভারের ক্রিকেটের।

MCC recommends 'significant reduction' of ODI cricket after 2027

[আরও পড়ুন: শপথ ইস্যু: মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়েরের পথে রাজ্যপাল]

জিলেট কাপ থেকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ফিরতে শুরু করে। ১৯৬৩ সালের ১ মে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা ইতিহাসে ঢুকে পড়ে। লিস্ট এ স্টেটাস পাওয়া এই প্রতিযোগিতার খেলাগুলিই প্রথম সরকারি ওয়ান ডে ম্যাচের তকমা পায়। ল্যাঙ্কাশায়ার ও লেস্টারশায়ারের মধ্যে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হয়েছিল প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ। যদিও ৬৫ ওভারের খেলাটি বৃষ্টির জন্য দুদিনে শেষ হয়েছিল। বাকিটা ইতিহাস। ক্রিকেট ক্রমশ টেস্ট ক্রিকেটকে সঙ্গে নিয়েই বাঁক নিল নির্ধারিত ওভারের সীমাবদ্ধতার দিকে।

পরের দশকে খেলা হল প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে তার আগে, ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ডে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল আর এক প্রতিযোগিতা। রবিবার করে খেলাগুলি হত। ৪০ ওভারের ম্যাচ। খেলা শুরুই হত দুপুর দুটোর পরে, যাতে সবাই সকালের কাজ সেরে মাঠে ঢুকতে পারে। ১৯৭২ সালে শুরু হল বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ। ৪০ নয়, এই প্রতিযোগিতায় ম্যাচগুলি হত ৫৫ ওভারের। তবে তার আগেই ১৯৭০-৭১ সালের অ্যাসেজের মাঝামাঝি আচমকাই জন্ম নেয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আসলে ছয় ম্যাচের সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে যায়। মেলবোর্নের সেই ম্যাচটির এমন দুর্দশায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক বিল লরি জানিয়েছিলেন, এহেন অবস্থায় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানই প্রস্তাব দেন একটি একদিনের ম্যাচের আয়োজন করার জন্য। যদিও সিরিজে একটি বাড়তি টেস্ট ম্যাচও খেলা হয়েছিল পরে।

যাই হোক, ডনের প্রস্তাব ছিল সীমিত ওভারের খেলা হলে আর্থিক ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে ওঠা যাবে। তাঁর আইডিয়া ছিল নির্ভুল। ৪৬ হাজার দর্শক এসেছিলেন মাঠে। এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের রোজগার হয়েছিল ৩০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারেরও বেশি। এর পর ১৯৭৫ সালে আয়োজিত হল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। যদিও বলা হয়, এই আইডিয়াও নাকি তার কয়েক বছর আগে থেকেই পাক খাচ্ছিল। বেন ব্রকলেহার্স্ট নামের এক প্রাক্তন ক্রিকেটার ১৯৬৯ সালেই এরকম একটা প্রতিযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটা অনুমতি পায় ১৯৭৩ সালে আইসিসির বার্ষিক অধিবেশনে। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়। খেলাটা যে সীমিত ওভারের ফর্ম্যাট নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে, সেটা কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যান থেকে অখ্যাত ক্রিকেটার, সকলেই বুঝতে পারছিলেন।

তবে ক্রিকেটকে রঙিন পোশাক, সাদা বল, কালো সাইটস্ক্রিন উপহার দিয়ে একেবারে ঝাঁ চকচকে বাণিজ্যিক মোড়কে মুড়ে দিয়েছিলেন যিনি, তিনি ক্যারি প্যাকার (Kerry Packer)। প্রতিটি দলের জন্য আলাদা অ্যান্থেম, ফিল্ড রেস্ট্রিকশন, ফ্লাডলাইটে ক্রিকেট- আজকের আইপিএল, বিগ ব্যাশ মনে পড়ে যাচ্ছে কি? বহু বছর আগেই কেরি প্য়াকার এসব চালু করে দিয়েছিলেন তাঁর তৈরি ক্রিকেট লিগে। প্রচুর অর্থ দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন তৎকালীন বিশ্বের তাবড় ৫১ জন ক্রিকেটারকে। সেই ‘বিদ্রোহী’ ক্রিকেটাররা নিজেদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আড়ি করে প্যাকারের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে প্রতিযোগিতা খেলেছিলেন পরবর্তী দুবছর। সেসময় বিশুদ্ধবাদীরা একে ‘পাজামা ক্রিকেট’ বলে কটাক্ষ করতেন বটে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের সমান্তরালে সীমিত ওভারের টিকে থাকা এবং ক্রমশ ছোট ফর্ম্যাটে জনপ্রিয় হতে থাকাই প্রমাণ করে, প্যাকার ভুল করেননি। উনিশ বছর আগে প্রয়াত মানুষটি তাই রয়ে গিয়েছেন ‘ক্রিকেটের ঠাকুর্দা’ হয়েই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement