সুনীল নারিন। ফাইল চিত্র
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: টিম মেন্টরের গুরুদায়িত্ব নিয়ে কেকেআরে যোগদানের পর গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) একটা কাজ করেছিলেন। নিজের প্রচলিত কঠোর ভাবমূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন!
আসলে প্রাক্তন কেকেআর (KKR) অধিনায়ক নিয়ে একটা সার্বিক ভ্রম কাজ করে জাতীয় ক্রিকেট সার্কিটে। বলা হয়, গম্ভীর প্রকৃতিগত ভাবে আগ্রাসী। আক্রমণাত্মক। গরগরে স্বভাবের। কিন্তু গম্ভীরের সঙ্গে জানাশোনা আছে যাঁদের, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন সেটা কতটা ভুল। এঁরা বলেন যে, আদতে গম্ভীর প্রবল অন্তর্মুখী। নিকটজনদের সামনে সচরাচর তাঁর আবেগ-বহিঃপ্রকাশ তেমন ঘটে না। লোকে যা দেখে, তা হল প্যাশন। ক্রিকেট নামক খেলার প্রতি তাঁর বন্য আবেগ। যা আগ্রাসনের সঙ্গে প্রায়শই তারা গুলিয়ে ফেলে!
তা, গম্ভীর কেকেআরে মেন্টরের বেশে ফিরে আসার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, বিবিধ পরিবর্তন ঘটবে। পুরনো অধিনায়ক টিম মেন্টর হিসেবে ফিরে বুলডোজার চালিয়ে দেবেন! নিজের কঠোর ক্রিকেট দর্শন আমদানি করবেন। তাঁর অতীব ‘প্রিয়পাত্র’ বলে পরিচিত বিজয় দাহিয়াকে নিয়ে আসবেন কেকেআর সাপোর্ট স্টাফ গ্রুপে। গম্ভীর এ সমস্ত গুজব-জল্পনা নাকি শুনতেন সব। শুনে মুচকি হাসতেন। কারণ, এর একটাও কিছু ঘটেনি। একটাও কিছু ঘটবে না!
শোনা গেল, দীর্ঘ সময় পর গম্ভীর কেকেআরে ফিরে আসার পর বিশাল কেন. ছুটকো পরিবর্তনও আনতে যাননি। যা ছিল, যা আছে, তাই দিয়েই চলতে চেয়েছিলেন বরং। এমনিতে গম্ভীরের দর্শন হল, টিম খারাপ খেললে তিনি নিজে সামনে যাবেন। বুলেট নেবেন। আর ভালো খেললে পারফর্মার যাবে। মিডিয়ার শংসা নিয়ে ফিরবে। ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বলছিলেন যে, গম্ভীর দায়িত্ব নেওয়ার পর নাকি বুঝে গিয়েছিলেন সর্বাগ্রে টিমের সিনিয়রদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাদের আস্থা পাওয়া প্রয়োজন। যে কারণে প্রথম সুযোগেই প্রকাশ্যে তাঁদের কথা সর্বসমক্ষে বলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
সুনীল নারিন (Sunil Narine) নিয়ে। আন্দ্রে রাসেল নিয়ে।
এবার মরশুম শুরুর আগে ক্রিকেট জনতা ও সাংবাদিকদের ডেকে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল কেকেআর। যেখানে পুরো টিমকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কথোপকথনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। যাতে সমর্থকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয় কেকেআর ক্রিকেটারদের। চর্মচক্ষে আরাধ্য ক্রিকেটারদের দেখে, তাঁদের কথাবার্তা শুনে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যেতে পারেন তাঁরা। শোনা গেল, গম্ভীর নাকি সেই মঞ্চকে ব্যবহার করেন সিনিয়রদের আস্থা অর্জনে। সোজাসুজি তাঁদের কথা, জনতার সামনে বলে। যা ঘটনা। গম্ভীর সেই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে পরিষ্কার বলে দেন, প্যাশন কাকে বলে, তা তাঁকে শিখিয়েছেন রাসেল। আর সুনীল নারিন শিখিয়েছেন আত্মত্যাগের অর্থ। গম্ভীর বলে দেন, ‘‘কেকেআর জার্সি পরে কম কিছু সহ্য করতে হয়নি নারিনকে। ওর অ্যাকশন রিপোর্টেড হয়েছে, অ্যাকশন বদলাতে হয়েছে। কিন্তু তার পরেও নারিন আইপিএল ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোলার হয়েছে।’’
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গম্ভীরের যে মন্তব্য ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হয়ে দাঁড়ায় শেষে! চলতি আইপিএলে বোলার নারিনের মহড়া তবু নেওয়া গেলেও, ওপেনার নারিনকে থামানো সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত ৪ ম্যাচ খেলে ৪ ইনিংসে নারিন করেছেন ১৬১ রান। ৪০ গড়ে। ১৮৯ স্ট্রাইক রেটে। সর্বোচ্চ ৮৫। আরসিবি-র বিরুদ্ধে চিন্নাস্বামীতে ইনিংস ওপেন করতে নেমে এমন মার মারেন নারিন যে, আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ স্কোর তুলে ফেলে কেকেআর। কেউ কেউ বললেন যে, গত বছর ওপেনার নারিনের উপর সে ভাবে আস্থাই দেখানো হয়নি। ওপেনিংয়ে নেমে তিনি যে নেমেই মারমার করার ক্ষমতা এখনও রাখেন, তা কেউ বিশ্বাস করেনি। কিন্তু গম্ভীর এবার সুচতুর ভাবে তাতিয়ে দিয়ে যান নারিনকে।
প্লাস, ওপেনিংয়ে ফিরিয়ে আনেন বিশ্বাস রেখে। যে বিশ্বাসের মর্যাদা দিচ্ছেন নারিন। পুরনো অধিনায়ককে তাঁর ভরসার দাম ফিরিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বলা হল, ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে নিছকই পেশাদারি কারণে এক জিনিস। আর প্রাণের টানে, মন থেকে খেলা আর এক জিনিস। যে ভয়ঙ্কর নারিনকে এখন দেখছে আইপিএল, তাঁর প্রহারের যে ‘গরলে’ নীল হয়ে যাচ্ছে বিপক্ষের দেহ, তিনি খেলছেন দ্বিতীয় কারণে। যা লেখা হল উপরে।
কী, গৌতম গম্ভীর ঠিক কত বড় মেন্টর অনুমান করা গেল?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.