অভিনব বিন্দ্রা: আমি চিরকালই শচীন তেণ্ডুলকরের বড় ভক্ত। সত্যি বলতে, আমার ক্রিকেট চেতনা, ক্রিকেট দেখা সবই শচীনকে জুড়ে। আমি বড় হয়েছি শচীনকে দেখে, আর শচীন অবসর নেওয়ার পর আমি ক্রিকেট দেখা ছেড়ে দিয়েছি। খেলাধুলোকেই আঁকড়ে বড় হয়েছি যখন, শচীনই আমার অনুপ্রেরণা ছিল। মনে আছে, ১৯৯৮ কমনওয়েলথ গেমসের সময় শচীনের সঙ্গে দেখা করেছিলাম একবার। এখনও তার স্মৃতি থেকে গিয়েছে। শুটিং লঙ্কাভিতে ছিল, আর আমরা সবাই কুয়ালা লামপুরে এসেছিলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য। আমার বয়স তখন পনেরো। পুরোটাই আমার কাছে পুরোদস্তুর ফ্যানবয় মোমেন্ট ছিল।
কেরিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত ভেতরে শিশুসুলভ উৎসাহ বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম আমি। আসলে সেটা যদি আপনার না থাকে, দীর্ঘদিন ধরে খেলে যাওয়া সম্ভব নয়। শচীন যা করে দেখিয়েছে। ভাবতে পারেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চব্বিশ বছর ধরে রাজত্ব চালিয়ে গিয়েছে শচীন! সেটা সম্ভবই হত না যদি খেলাটার প্রতি ওর অসামান্য প্যাশন না থাকত, যদি না শিশুসুলভ ভাললাগা খেলাটার প্রতি বাঁচিয়ে ও না রাখতে পারত। এটা ঠিক যে, সময়ের সঙ্গে খেলাটার প্রতি আপনার অ্যাপ্রোচ বদলাতে পারে। কিন্তু খেলাটার প্রতি প্যাশনকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখত শচীন (Sachin Tendulkar)। আর যত দিন সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি, হাল ছাড়েনি ও। বাইশ বছর লেগেছে শচীনের, নিজের স্বপ্নপূরণে। যা সম্ভব হত না, খেলাটার প্রতি ভালবাসা প্রথম দিনের মতো জীবন্ত না থাকলে। আর শচীনের উপর পারফর্ম করার বহির্জগতের চাপ ছিল যতটা, আমি নিশ্চিত অভ্যন্তরীণ চাপও ঠিক অতটাই ছিল। নিজের একটা অতুলনীয় মানদণ্ড সৃষ্টি করেছিল শচীন। যার সঙ্গে ওকে নিজেকে লড়ে যেতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। খেলাধুলোয় প্রথমে প্লেয়ারকে যেটা মানতে শিখতে হয়, তা হল ব্যর্থতা। বুঝতে হয় যে, সব সময় তুমি জিতবে না। কিন্তু তার পরেও গা ঝাড়া দিয়ে উঠে নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে হয়। আর প্রতিদিন সেটা করে শচীন বুঝিয়ে দিয়েছে যে, খেলাটার প্রতি ওর দায়বদ্ধতা কতটা।
আর কেরিয়ার আপনার যত লম্বা হবে, তত লাগবে চোট। তত ব্যর্থতার গিরিখাদ অপেক্ষা করবে। শচীনকেও সে সব সামলাতে হয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মানসিকভাবে সেই সময় খুব বিধ্বস্ত লাগে। কিন্তু ওই যে, দিনের শেষে নেতিবাচক মানসিকতাকে জিততে দেওয়া যায় না। শচীন চিরকাল সমস্ত বাধাবিপত্তিকে কাটিয়ে উঠে সাফল্যের সরণিতে ফিরে আসতে পেরেছে একটাই কারণে-ক্রিকেটের প্রতি সৎ থেকেছে বলে।
একই সঙ্গে নিজেকে বোঝা, নিজেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখাটাও সমান জরুরি। সবার আগে নিজের চেতনা প্রয়োজন হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশোটা সেঞ্চুরি করা বোঝায় যে, শচীন সব সময় নিজের মন বর্তমানে রেখেছিল। ও জানত, ওর থেকে কী প্রত্যাশা করা হয়, আর দিনের পর দিন সেই প্রত্যাশা পূরণ করে গিয়েছিল শচীন। মনে রাখতে হবে, লক্ষ লক্ষ লোক খেলা দেখত শচীনের। সেই চাপ সামলানো সহজ নয়। আর তাই শচীন চিরন্তন রোলমডেল হিসেবে বিশ্বের সমস্ত ক্রীড়াবিদের কাছে সব সময় থেকে যাবে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ চার বছর পরপর আসে, হুবহু অলিম্পিকের মতো। কিন্তু প্রস্তুতিটা নিতে হয় রোজ। একদিনও ঢিলে দেওয়া যায় না, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে হয়। অলিম্পিকেও তাই। আমি যেমন। প্রতিদিন ট্রেনিং করতাম। আর দিনের শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আমি জিজ্ঞাসা করতাম যে, নিজের সেরাটা আজ দিলাম কি না? উত্তর যদি হ্যাঁ হত, তা হলে ঘুমাতে যেতাম নিশ্চিন্তে। শচীনের ক্ষেত্রেও তাই। যত দিন ও মাঠে নেমেছে, সব সময় নিজের সেরাটা দিয়েছে।
পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে শচীনকে অফুরান শুভেচ্ছা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.