রনজি ফাইনাল খেলবেন বলে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি। সেই অনুমতি মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। জয়দেব উনাদকট আসছেন বাংলার বিরুদ্ধে ইডেনে রনজি ট্রফি ফাইনাল খেলতে। যিনি শুধু সৌরাষ্ট্রের এক নম্বর পেস-অস্ত্র নন, টিমের অধিনায়কও বটে। ফাইনাল খেলতে যিনি শহরে আসছেন আজ, মঙ্গলবার। তার আগে নাগপুর থেকে ফোনে জয়দেব উনাদকট দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: জয়দেব (Jaydev Unadkat), শুনলাম আপনি নিজেই নাকি ভারতীয় টিমের কাছে আর্জি পেশ করেছিলেন রনজি ফাইনাল খেলা নিয়ে? সত্যি নাকি?
উনাদকট: সত্যি বলতে, কালেক্টিভ সিদ্ধান্ত ছিল পুরোটা। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলাম আমি। টিমও মনে করেছে যে, রনজি ফাইনাল খেললে আমি কিছুটা গেম টাইম পেয়ে যাব। দেখুন, পরিবেশ যদি একই থাকে, তা হলে আমার পক্ষে ভারতীয় টিমে সুযোগ পাওয়া কঠিন হত। সেখানে রনজি খেললে আমি ম্যাচ খেলতে পারব। টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ যে, ওরা আমাকে খেলার অনুমতি দিয়েছে।
প্রশ্ন: তা ছাড়া সৌরাষ্ট্রকে রনজি (Ranji Trophy) জেতানোর ফের সুযোগও আছে। সেটাও একটা ফ্যাক্টর নিশ্চয়ই।
উনাদকট: অবশ্যই। রনজি ফাইনাল (Ranji Trophy Final) খেলা সব সময় বড় কীর্তি। তা ছাড়া টিমটা যে ভাবে গোটা মরশুম ভাল খেলে ফাইনালে উঠেছে, বাহবা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমি কিন্তু পুরো মরশুমে গোটা তিনেকের বেশি ম্যাচ খেলিনি। কিন্তু টিমের যারা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে, তারা দায়িত্ব নিচ্ছে। আর একটা কথা। গত সাত-আট বছরে বিভিন্ন ফর্ম্যাট মিলিয়ে ছ’সাতটা ফাইনাল আমরা খেলেছি। তাই বড় ম্যাচের উত্তেজনাটা আমরা উপভোগই করি।
প্রশ্ন: ইডেন ফাইনালে আসি। ২০১৯-’২০ মরশুমে শেষবার বাংলা (Bengal vs Saurashtra) যখন ফাইনালে ওঠে, প্রতিপক্ষ আপনারাই ছিলেন। এবারও তাই। শুধু খেলা এবার ইডেনে। রাজকোটে নয়। ইডেনে কিন্তু সবুজ উইকেট থাকবে। বাংলা বলছে, ইডেনে খেলা বলে অ্যাডভান্টেজ তাদের।
উনাদকট: মনে রাখবেন, গত পাঁচ-ছ’টা মরশুম ধরে আমরা যে ভাল করেছি, তা শুধুমাত্র রাজকোট পিচে খেলে আসেনি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন পিচে খেলে আমরা সেটা করেছি। আমার তো মনে হয় না, অ্যাওয়ে ম্যাচে সৌরাষ্ট্রের চেয়ে বেটার রেকর্ড কারও আর আছে বলে। যা বোঝায়, আমরা যে কোনও পিচে ভাল টিম। আর কী জানেন, পরিবেশ যা-ই হোক, দু’টো টিমের জন্য একই থাকে। রাজকোটে তিন বছর আগে তাই ছিল। এবারও ইডেনে তাই থাকবে।
প্রশ্ন: বাঁ হাতি পেসার চেতন সাকারিয়ার ফর্ম স্বস্তি দিচ্ছে আপনাদের? কর্নাটক সেমিফাইনালে যিনি দুর্ধর্ষ খেললেন। ম্যাচে সাত উইকেট নেওয়ার পর চাপের মুখে ২৪ রান করলেন।
উনাদকট: দারুণ লাগছে দেখে। ওদেরকেই তো সৌরাষ্ট্র ক্রিকেটের পরম্পরা বহন করে নিয়ে যেতে হবে। চেতনকে আমি অনেক ছোট থেকে দেখছি। ছেলেটার শেখার ইচ্ছে মারাত্মক।
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। তিন বছর আগের চেয়ে এই বাংলা কি আরও শক্তিশালী নয়? লক্ষ্মীরতন শুক্লা কোচ হয়ে আসার পর তো চেহারাই বদলে গিয়েছে টিমের! রনজি চ্যাম্পিয়ন মধ্যপ্রদেশকে তাদের মাঠে গিয়ে সেমিফাইনালে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবারের ফাইনাল কি আরও ধারালো হবে না?
উনাদকট: রনজি ফাইনাল দুর্বল টিম কখনও খেলে না। বাংলা দুর্ধর্ষ টিম বলেই ফাইনাল খেলছে। ওরা ভাল টিম বলেই তিন বছর আগে রাজকোটে আমাদের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলেছিল। দেখুন, রনজি লম্বা সময় ধরে আপনার পরীক্ষা নেয়। গ্রুপ পর্বে আট-ন’টা ম্যাচ খেলতে হয়। তারপর কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, ফাইনাল। অন্তত সাত থেকে আটটা ম্যাচ আপনাকে জিততে হবে। ধারাবাহিক ভাবে ফর্ম দেখাতে হবে। আর দেখতে গেলে সৌরাষ্ট্র আর বাংলা, দু’টো টিমের কোর গ্রুপ একই থেকে গিয়েছে। রাজকোটের চেয়ে খুব পাল্টেছে কী? এটুকু বলতে পারি, মারাত্মক লড়াই হবে ফাইনালে।
প্রশ্ন: আপনি নিজে যখন ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের অনুমতি নিয়ে রনজি ফাইনাল খেলতে আসছেন, কিছু বাড়তি মোটিভেশন আছে নিশ্চয়ই।
উনাদকট: আমি রনজি ট্রফি খেলতে সব সময় পছন্দ করি। সেমিফাইনাল, ফাইনাল এই সমস্ত যুদ্ধ আমাকে মারাত্মক টানে। এটুকু বলতে পারি, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী রিঅ্যাক্ট করব। টিমের জন্য যা ভাল মনে হয়, করব। আর অধিনায়কত্ব? ওটা আমার স্বাভাবিক ভাবে আসে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে করছি। টিম আমাকে বিশ্বাস করে, আমিও টিমকে ভরসা করি।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। বাংলার নির্দিষ্ট কোনও বিভাগের দিকে কি আলাদা নজর দেবেন? ব্যাটিং, বোলিং-যা কিছু?
উনাদকট: আমার মতে, ওরা পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে ভালবাসে। টিমের পেসারদের উপর নির্ভর করবে ওরা, পরিবেশের ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে। সে ঠিক আছে। আমরা বাংলার দুর্বল দিকগুলো খেয়াল রাখব। আর সেটা থেকে ফায়দা তুলে ফাইনাল জেতার চেষ্টা করব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.