ফ্ল্যামবয়েন্ট ব্যাটার আর বিদ্যুৎক্ষিপ্র উইকেটকিপার বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন তাই। নায়কোচিত চেহারা, আগ্রাসী ব্যাটিং আর অতুলনীয় রিফ্লেক্স- ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে বড় আকর্ষণীয় করে তুলেছিল ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল দেখতে আসছেন তিনি। তার আগে সংবাদ প্রতিদিন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যা বললেন ভারতের কিংবদন্তি উইকেটকিপার। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ওভালে আসছেন নাকি খেলা দেখতে?
ইঞ্জিনিয়ার: অবশ্যই। ইন্ডিয়া খেলতে আসছে এখানে। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল। আর আমি যাব না?
প্রশ্ন: ফারুখ সাহেব, আপনি এত দিন ধরে লন্ডন নিবাসী। ওভালের মাঠ-পিচ সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে আপনার। ফাইনালে কী হবে বলে মনে হচ্ছে আপনার? বিলেতে খেলা বলে অনেকে ধরেই নিয়েছে যে, ভারত পারবে না।
ইঞ্জিনিয়ার: কারা বলছে, জানি না। কিন্তু আমি এটুকু বুঝি, ওভাল ভারতের ঘরের মাঠ যেমন নয়, তেমন অস্ট্রেলিয়ারও নয়। ঘরের মাঠে সুবিধে এখানে কেউ নিতে পারবে না। তা হলে ভারত পারবে না, ধরা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? আর এটা আর পাঁচটা টেস্ট সিরিজ নয়। এটা ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল (World Test Championship Final)। এই একটা টেস্ট জিতলে টেস্ট ক্রিকেটের তাজ পাবে তুমি। জান-প্রাণ লড়িয়ে দেওয়ার মতো মঞ্চ। আমি কিন্তু নিশ্চিত যে, ভাল করবে। মন বলছে, টেস্ট ফাইনাল আমরাই জিতব। আর ওভাল আমাদের কাছে বরাবরের পয়া জানেন তো? ১৯৭১ সালে আমরা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিদেশে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতি কিন্তু ওভালে। আমি আর চন্দ্র ভাল পারফর্ম করেছিলাম ম্যাচটায়।
প্রশ্ন: আপনি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন প্রথম ইনিংসে।
ইঞ্জিনিয়ার: ইয়েস। আমি ষাট রানের কাছাকাছি করেছিলাম যত দূর মনে পড়ে। চন্দ্র আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিল।
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। ভারত জশপ্রীত বুমরাহকে পাচ্ছে না। সেটা কি বড় ধাক্কা নয়?
ইঞ্জিনিয়ার: মানছি, বুমরাহর না থাকাটা বিশাল শূন্যতা। কিন্তু তার পরেও বলব, বুমরাহ ছাড়াও আমাদের বোলিং যথেষ্ট শক্তিশালী। বেঞ্চ স্ট্রেংথ দেখুন আমাদের। শামি আছে। সিরাজ আছে। উমেশ আছে। যারা প্রচণ্ড গতিতে শুধু বল করে না, বল ‘মুভ’ও করাতে পারে। আর অলরাউন্ডার ছেলেটাও তো আছে। কী যেন নাম?
প্রশ্ন: শার্দূল ঠাকুর?
ইঞ্জিনিয়ার: ইয়েস। ঠাকুর। বললাম না, বুমরাহ না থাকলেও আমাদের হাতে অনেক ভাল ভাল পেসার আছে। স্রেফ লাক, স্রেফ একটু ভাগ্য প্রয়োজন আমাদের।
প্রশ্ন: ঋষভ পন্থও তো নেই।
ইঞ্জিনিয়ার: শুনলে ভাল লাগে যে, ঋষভ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। পুওর বয় মিসড সো মাচ। কেরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুর্ঘটনাটা ঘটল ওর সঙ্গে। জানেন, পন্থের খেলা আমাকে আমার নিজের খেলা মনে করিয়ে দেয়। যে অকুতোভয় ব্যাটিংটা পন্থ করে, আমিও ঠিক একই রকম অকুতোভয় থাকতাম। একই রকম আগ্রাসী ব্যাটিং করতাম। ঋষভকে না পাওয়া দুঃখের। কিন্তু কেএস ভরত আছে না? শুনেছি, ছেলেটা ভাল।
প্রশ্ন: একটা বিতর্ক চলছে যে, কেএস ভরত না ঈশান কিষান। কাকে খেলানো উচিত? আপনার কী মত?
ইঞ্জিনিয়ার: দেখুন, আমি ভরতের খেলা দেখিনি। তাই ও ভাবে বলাটা উচিত হবে না। কিন্তু ঈশান কিষানকে দেখেছি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। ফ্যান্টাস্টিক ব্যাট করে। কিপিংও বেশ ভাল। আমি জানি, টেস্টে সব সময় বলা হয় উইকেটকিপার-ব্যাটার নাও। ব্যাটার-উইকেটকিপার নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি বলব, ঈশান একটু হলেও খেলার ব্যাপারে এগিয়ে।
প্রশ্ন: ইয়ান চ্যাপেল-রিকি পন্টিংদের মতো কোনও কোনও অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি কিছুটা হলেও অস্ট্রেলিয়াকে (India vs Australia) এগিয়ে রাখছেন। কিছু বলবেন?
ইঞ্জিনিয়ার: রাখুন তো ওদের কথা। অস্ট্রেলীয়রা বকবকটা একটু বেশিই করে। ওদের স্বভাবই সেটা। এসব নিয়ে ভাবার মানে হয় না। সব বস্তাপচা মাইন্ডগেম। উই আর টু প্রোফেশনাল ফর দ্যাট। মাইন্ডগেম দিয়ে এই ভারতকে ভয় পাওয়ানো যাবে না। দেখুন, ভারতীয় হিসেবে আমরা অহিংসায় বিশ্বাস করি। মাটিতে পা রেখে চলতে পছন্দ করি। কিন্তু সহ্যের শেষ সীমানায় নিয়ে গেলে, আমরাও পাল্টা দিতে জানি। আমাদের উচিত, অস্ট্রেলীয়দের এ সমস্ত কথাবার্তায় একচোট হেসে ওদের একরাশ বিস্ময় উপহার দেওয়া। আমি নিজেও এখানে যখন কাউন্টি খেলতাম, একই ফর্মুলায় চলেছি। পাল্টা দাও। পাল্টা দিলে সব চুপ থাকবে। আর অস্ট্রেলীয়দের বিরুদ্ধে সেই পাল্টা দেওয়া ছাড়া রাস্তাও নেই। তোমাকে ওদের বিরুদ্ধে বিশ্বাস দেখাতে হবে। নইলে তোমাকে কড়মড়িয়ে চিবিয়ে খাবে ওরা!
প্রশ্ন: বিরাট-শুভমানের ফর্ম ভারতকে স্বস্তি দেবে নিশ্চয়ই। রোহিত শর্মার ফর্ম যতটা অস্বস্তিতে রাখবে।
ইঞ্জিনিয়ার: দেখুন, ফর্ম্যাট যা-ই হোক, রান সব সময় বিশ্বাস জোগায়। বিরাট-গিলকেও জোগাবে। আর তোমার সিন্দুকে যদি পরের পর সেঞ্চুরি থাকে, পুরো ব্যাপারটাই পাল্টে যায়। আমি নিশ্চিত, আইপিএলে পরপর সেঞ্চুরি করে বিরাট এখন ফুটছে। আর এই শুভমান! উফ, কী প্লেয়ার! কী সব স্ট্রোক খেলে! আর সেঞ্চুরির পর গ্যালারিকে যে ভাবে মাথা নুইয়ে অভিবাদন করে, সেটাও দেখার মতো। চোখের আরাম বলতে পারেন।
প্রশ্ন: রোহিতটা বললেন না।
ইঞ্জিনিয়ার: ও হ্যাঁ। আমাকে বলুন তো, রোহিত কি জানে না মঞ্চটা কী? শুনুন, রোহিত বিশাল প্লেয়ার। ও জানে কখন কী করতে হবে। কয়েকটা ম্যাচে রান পেল কী পেল না, তাই দিয়ে রোহিত শর্মার বিচার করা যায় না। শুধু একটাই জিনিস খচখচ করছে।
প্রশ্ন: কী?
ইঞ্জিনিয়ার: আমাকে বলুন তো, ইন্ডিয়ার স্পিন সেট আপটা কী? লেগস্পিনার আছে?
প্রশ্ন: না। লেগস্পিনার স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
ইঞ্জিনিয়ার: ওভালে লেগস্পিনার প্রয়োজন ছিল একজন। যুজবেন্দ্র চাহাল বা কুলদীপ যাদবের মধ্যে একজনকে রাখাই যেত স্কোয়াডে। এই একটা খুঁতখুঁতানি বাদ দিলে আর কোনও কিছু নিয়ে আমার মনে সংশয় নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.