Advertisement
Advertisement
Manoj Tiwary

Exclusive: ‘কেরিয়ারে বঞ্চনার শিকার হয়েছি, আত্মজীবনীতে লিখতে চাই’, একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট মনোজ

বাইশ গজ থেকে বিদায়ের আগেও সোজাসাপটা মনোজ।

Exclusive: Bengal captain Manoj Tiwary opens up about his future after retirement from first class cricket। Sangbad Pratidin

মনের কথা উজাড় করে দিলেন বঙ্গ অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি।

Published by: Sabyasachi Bagchi
  • Posted:February 16, 2024 8:36 pm
  • Updated:February 16, 2024 8:36 pm  

বাবা প্রয়াত শ্যামশংকর তিওয়ারি ছিলেন রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন হাওড়ার রেলের আবাসনে। নামেই আবাসন। আসলে ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট পাম্প রুম। সেই ছোট্ট ঘর থেকেই শুরু হয়েছিল ওঁর ক্রিকেটের পাঠ। সেখান থেকেই ২২ গজে প্রতিষ্ঠা। দেশের (Team India) হয়ে ওডিআই-তে শতরানের সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মালিক। তিনি এক ও অদ্বিতীয় মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary)। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর। ইডেন গার্ডেন্সে দিল্লির বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল। দেখতে দেখতে কেটে গেল ২০টা বছর। কেরিয়ারের সায়াহ্নে ক্রিকেট-রাজনীতি-সহ নানা বিষয় নিয়ে অকপট বাংলার (Bengal) অধিনায়ক মনোজ। সংবাদ প্রতিদিন.ইন-এর তরফ থেকে শুনলেন সব্যসাচী বাগচী

প্রশ্ন: আজ বাড়ি থেকে ইডেন আসার সময় বিশেষ কিছু মনে হচ্ছিল?

Advertisement

মনোজ: বিশেষ কিছুই মাথার মধ্যে ঘুরপাক করেনি। তবে অন্য দিনের তুলনায় আজ বাড়ি থেকে বেরতে একটু দেরি হয়ে যায়। তবে রিপোর্টিং টাইমের আধ ঘণ্টা আগেই ইডেনে চলে এসেছিলাম। আসলে আমি এদিন টসটা জিততে চেয়েছিলাম। কারণ টসে জিতে বোলিং করলে ইডেনে অ্যাডভান্টেজ পাওয়া যায়। আমি সেটা হারাতে চাইনি। এবার রনজিতে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো নয়। তবে বিহারের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটা জিততে চাই। আপাতত সেটা নিয়েই ভাবনাচিন্তা করছি।

প্রশ্ন: দীর্ঘ ২০ বছরের প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে মাত্র চারদিন বাকি! আলাদা কোনও অনুভূতি হচ্ছিল না?

মনোজ: সারাদিন তো মনের অবস্থা একরকম থাকে না। বিভিন্ন সময় মনের অবস্থার বদল ঘটে। আজ সকালেও মন খারাপ করিনি। তবে ম্যাচের আগে টিম মিটিং করার সময় কেঁদে ফেলেছিলাম। আজ আর খারাপ লাগেনি। আমাদের খেলা দেখতে ইডেনে অনেক লোকজন এসেছিল। গ্যালারিতে অনেক পরিচিত মুখ দেখলাম। নিজের নামের প্ল্যাকার্ডও চোখে পড়ল। সেসব দেখে ভালোই লাগছিল।

[আরও পড়ুন: মুকেশের দাপটে ৯৫ রানে শেষ বিহার, বাংলার লিড বাড়াচ্ছেন অভিমন্যু-অনুষ্টুপ]

প্রশ্ন: রাতে ঘুমোতে পেরেছিলেন?

মনোজ: দারুণ ঘুম হয়েছে। কাঁধ থেকে অনেক বড় বোঝা নেমে যাচ্ছে। অনেক হালকা লাগছে। কারণ অবসর নিয়ে বেশি ভাবলে মনের কষ্ট, অনেক না পাওয়ার জন্য হতাশা আরও বাড়বে। এর চেয়ে বাড়িতে শান্ত থাকাই ভালো।

Manoj Tiwary Century
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শতরানের পর মনোজ। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: আপনার জীবনে অনেক বিতর্ক, অনেক মশলা। সেগুলো সামনে আনার জন্য আত্মজীবনী লিখবেন?

মনোজ: অবশ্যই লিখব। ২০ বছরের কেরিয়ারে অনেকবার বঞ্চনার শিকার হয়েছি। আমার সঙ্গে অনেক অবিচার হয়েছে। সেগুলো তুলে ধরতেই হবে। সত্যিটা সবার জানা উচিত। সেই সময় আমার মনের অবস্থা কেমন ছিল সেটা জানানোর তাগিদ আমার রয়েছে। আমার ভালোবাসার মানুষদের জন্য সত্যি সামনে আনতে চাই। আমার সঙ্গে যে অবিচারের ঘটনাগুলো ঘটেছে। সেগুলোই লেখা থাকবে। তবে বই বিক্রি করার জন্য কোনও বাড়তি মশলা থাকবে না।

প্রশ্ন: আত্মজীবনীর প্রচার নিয়ে বিশেষ কোনও প্ল্যান?

মনোজ: আমার আত্মজীবনী বিক্রি হলে সেই অর্থ বিভিন্ন চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দিয়ে দেব।

প্রশ্ন: আপনার মা ও স্ত্রী সুস্মিতা আপনার লড়াইয়ের সঙ্গী। এমন সময় তাঁদের মানসিক অবস্থা কেমন?

মনোজ: মা বাড়িতে পুজো দিয়েছিলেন। আমার খেলা থাকলেই মা বাড়িতে পুজো দেন। এটা আমার অনেক বছরের অভ্যাস। আজ ছোটভাই ইডেনে এসেছিল। খেলার দ্বিতীয় দিন য়ুভানকে নিয়ে ওর মা ইডেনে আসবে।

প্রশ্ন: দিল্লির বিরুদ্ধে ইডেনে অভিষেক ম্যাচটা মনে আছে? নিজের পুরনো আগ্রাসী ইনিংসকে আজকের মনোজের মনে পড়ে?

মনোজ: অনেক না পাওয়ার মধ্যে এটা কিন্তু আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। যে ইডেন থেকে ২০ বছর আগে জার্নি শুরু হয়েছিল, সেই মাঠেই কেরিয়ারের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলব। এটাও তো প্রাপ্তি। দিল্লির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে লক্ষ্মী দা (পড়ুন লক্ষ্মী রতন শুক্লা) আমার সঙ্গে ছিল। সে এখন আমাদের কোচ। এগুলো আমার কাছে খুবই কাছের। সবসময় মনে পড়ে।

Mahendra Singh Dhoni and Manoj Tiwary
মহেন্দ্র সিং ধোনির আমলে ম্যাচের পর ম্যাচ ব্রাত্য ছিলেন মনোজ। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: চারটি রনজি ফাইনালে হার। এবার ট্রফি জয়ের আশা করলেও সেটা গঙ্গার জলে তলিয়ে গেল। কতটা হতাশ?

মনোজ: ক্রিকেট আমার কাছে অনেক কিছু হলেও, সবকিছু নয়। চারটি রনজি ফাইনালে হারের সঙ্গে এবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়। কিংবা জাতীয় দলে খেলার সময় বঞ্চনা। বারবার চোট-আঘাতের জন্য বাদ যাওয়া। এগুলো নিয়ে আর মন খারাপ করে লাভ নেই। এই খেলার সুবাদে আমাকে দেশের সব জায়গার লোকজন সম্মান করে। ভালোবাসে। ছবি তুলতে চায়। এটাও তো বড় প্রাপ্তি। সেটা কীভাবে অস্বীকার করতে পারব না। আমি রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এগুলোও অনেক বড় প্রাপ্তি।

প্রশ্ন: ক্রিকেট খেলেই আপনি আপনার পরিবারকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছিলেন। মনে পড়ে সেই দিনগুলো?

মনোজ: ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করেছি। বাবা ছিলেন রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। মা ও আমাদের তিন ভাইকে নিয়ে হাওড়ার রেলের আবাসনে থাকতাম। সেই ছোট্ট ঘর থেকেই ক্রিকেটার হয়ে ওঠার লড়াই শুরু হয়েছিল। ক্রিকেট খেলেই আর্থিক সুরক্ষা এসেছে। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। পরিবারের সব ধার শোধ করতে পেরেছিলাম। ভালো থাকতে পারছি। চারবেলা খেতে পারছি। এগুলোও তো আমার কাছে প্রাপ্তি।

প্রশ্ন: তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নাকি হাঁটুর চোট? ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার নেপথ্যে কোনটা বড় কারণ?

মনোজ: শুধুমাত্র হাঁটুর চোট কারণ নয়। চোট তো আমার আজীবনের সঙ্গী। ২০১৮ সালে শেষবার আইপিএল খেললাম। এর পর আমাকে আইপিএলে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করার পরেও আমার জন্য ভারতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সেটাও অন্যতম কারণ। আগেও বলেছি ক্রিকেট আমার ভালোবাসা। কিন্তু ক্রিকেট তো সবকিছু নয়। আমি সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। তাই নিজের ইচ্ছায় বাইশ গজকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

প্রশ্ন: এখন আপনাকে মেজাজ হারাতে দেখা যায় না। এর নেপথ্যে বিশেষ কোনও কারণ?

মনোজ: খুব সহজ উত্তর। বয়স বাড়লে বোধবুদ্ধি বাড়ে। বয়স কম থাকার সময় অনেক ভুল করেছি। অনেকেই আমার ভালোমানুষির সুযোগ নিয়েছে। অনেক সময় মনে হত আমাকে অহেতুক টার্গেট করা হচ্ছে! তবে সময় ও স্ত্রী সুস্মিতা আমাকে শান্ত করেছে।

প্রশ্ন: মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি কি কোচ কিংবা নির্বাচক হিসেবে আপনাকে দেখা যাবে?

মনোজ: আপাতত কোচিং নিয়ে কিছুই ভাবনাচিন্তা করছি না। এখন শুধু পরিবারকে অনেক সময় দিতে চাই। নির্বাচক হওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার। সেটা তো অন্যদের উপর নির্ভর করছে। তবে ধারাভাষ্য দিতে ভালো লাগছে। সেটা চালিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার জীবন নিয়ে বায়োপিক হলে কে অভিনয় করতে পারবেন?

মনোজ: আমার জীবন নিয়ে বায়োপিক কে করবে! এইসব নিয়ে ভাবতেই চাই না। আপাতত আত্মজীবনী লেখা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।

[আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান, ৫০০ উইকেট নিয়ে কুম্বলের তালিকায় নাম লেখালেন অশ্বিন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement