গৌতম ভট্টাচার্য: বাংলাদেশ তাদের কোচ স্টিফেন জন রোডসকে বরখাস্ত করেছে। পাকিস্তান কোচ মিকি আর্থারকে জানিয়ে দিয়েছে চুক্তির নবীকরণ তাঁর সঙ্গে করবে না। নতুন কোচের জন্য বিজ্ঞাপন বেরোবে। তখন আপনি আবার আবেদন করে দেখতে পারেন। যা শর্ত হিসেবে চূড়ান্ত অপমানজনক।
ভারত কিন্তু বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল হারের পরেও হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ও তাঁর সাপোর্ট স্টাফদের ওপর আশা রাখছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রবিই টিম নিয়ে যাচ্ছেন। তারপর ঘরোয়া আন্তর্জাতিক মরশুমের আগে কোথাকার জল কোথায় গড়ায় কেউ জানে না। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে টিম ন’টার মধ্যে পাকিস্তান-সহ সাতটা ম্যাচ সংশয়াতীত প্রাধান্য নিয়ে জেতায় শাস্ত্রী এখন ভাল উইকেটে।
রোহিত শর্মাকে সাদা বলের ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন করা উচিত এমন ধ্বনি ইতিমধ্যেই পশ্চিম ভারত থেকে হালকাপুলকা উঠতে শুরু করেছে। রোহিত ক্যাপ্টেন হলে তিনি শাস্ত্রীকেই কোচ হিসেবে চাইবেন কি না সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন। কিন্তু কোহলি এত শক্তিশালী ব্র্যান্ড যে তাঁর বিরুদ্ধে যে কোনও বিরোধী হাওয়া অন্তত এ মুহূর্তে উড়ে যেতে বাধ্য। আর কোহলি ক্যাপ্টেন থাকলে রবির কোচের পদ থেকে সরার প্রশ্নই নেই।
সবচেয়ে বড় কথা ভারতীয় ক্রিকেটে এখন এমন পরিস্থিতি যে সবকিছু পজ বাটন টেপা। সুপ্রিম কোর্টে বোর্ড মামলার শুনানি রয়েছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে যদি আদালত অবিলম্বে নির্বাচন করতে রায় দেন, তখন শাস্ত্রীর ভবিষ্যৎ ঠিক করবে নবগঠিত বোর্ড। কিন্তু সে তো হতে হতে কমপক্ষে সেপ্টেম্বর যাবে।
আর একটা প্রশ্ন, সেই বোর্ড যদি এখনকার মতো রিমোটে এন শ্রীনিবাসন কন্ট্রোল করেন তা হলেও শাস্ত্রীর থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শ্রীনি তাঁর ঘনিষ্টমহলে ধোনি বাদ দিয়ে ক্রিকেট চিন্তনে একমাত্র দু’জনেরই প্রশংসা করেন। দ্রাবিড় ও শাস্ত্রী। এর মধ্যে দ্রাবিড় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সর্বাত্মক দায়িত্বে চলে গিয়েছেন। মানে বেঙ্গালুরু থেকে চালাবেন। ট্র্যাভেল করবেন কম। কাজেই কোচের দৌড় থেকে দৃশ্যত নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্বকাপের আগে শোনা গিয়েছিল যে কঠিন লিগ থেকে ভারত যদি শেষ চারে যেতে না পারে, শাস্ত্রীর অপসারণ ঘটবে। বিরাটেরও গদি থাকবে কি না সন্দেহ। সেমিফাইনাল উঠে হেরে গেলে? বলা হয়েছিল নিশ্চিত নয়। পঞ্চাশ—পঞ্চাশ। তবে ফাইনালে উঠলে দ্রুত শাস্ত্রীর সঙ্গে নতুন চুক্তি হবে। অন্যথা ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি বলবে কোচের জন্য নতুন আবেদন পত্র বেরোবে। তখন শাস্ত্রী আপনি চাইলে অ্যাপ্লাই করতে পারেন। ঠিক মিকি আর্থারকে যা বলা হয়েছে।
এই মুহূর্তে সেই গুমোট তৈরি নয়। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ধোনির ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যতই তীক্ষ্ম সমালোচনা করুন। অন্যবারের মতো এ বার বিশ্বকাপ বিদায়ে দেশজুড়ে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়নি। বরঞ্চ ক্রিকেটাররা প্রশংসা কুড়োচ্ছেন বিভিন্ন মহলের। পূর্ব ভারতে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে তীব্র ক্ষোভ ঘনীভূত হলেও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খোঁজ নেই। প্লাস বোলিং ও ফিল্ডিং ইউনিট বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে বোলিং। যেখানে ভরত অরুণকে এনে নিজের মতো করে তৈরি করেছেন শাস্ত্রী। টুর্নামেন্টে পেসাররা এত ঝলমল করেছেন যে শেষ ম্যাচে তাজ্জব ভাবে মহম্মদ শামিকে বসিয়ে দেওয়া হলেও, ঘটনাটা আলোয় আসবে কি না সন্দেহ।
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাকি থাকলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ একে এখন দিল্লি ক্যাপিটালসের দায়িত্ব নিয়ে সাম্রাজ্য গোছাচ্ছেন। তার ওপর শ্রীনি শাসিত বোর্ড থেকে তিনি সমর্থন আদায় করতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি বকলমে অনেকটাই বিজেপি প্রভাবিত। খোদ প্রধানমন্ত্রী যেখানে টিমের প্রশংসা করেছেন। যেখানে বিদায়ের পরেও ব্যাপক উথালপাতালের খোঁজ নেই সেখানে স্থিতাবস্থা বজায় থাকার থাকার সম্ভাবনা। প্রশ্ন বরঞ্চ হতে পারে যে বোর্ডের নির্বাচন যদি আরও পিছিয়ে যায় তখন সিওএ কি শাস্ত্রীকে নিজেরাই আগামী বছর অক্টোবরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অবধি চুক্তি দিয়ে দেবে? নাকি একটা নিয়মরক্ষার আবেদন করতে বলবে? যেটায় হ্যাঁ করা থাকবে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.