আলাপন সাহা: আমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে গ্যালারির যেদিকেই চোখ রাখুন না কেন, নজরে আসবে শুধু নীল রং। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সির ভিড়ে গ্যালারি যেন হয়ে উঠল ভারত মহাসাগর! আতসকাচ দিয়ে দেখলে হয়তো ইতিউতি একটা-আধটা সবুজ জার্সি চোখে পড়লেও পড়তে পারে। আসলে ওয়াঘার ওপারের জনা পাঁচেক সমর্থকই যে মাঠে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিলেন শনিবাসরীয় মহাযুদ্ধে!
ম্যাচ হেরে সেটাই ‘কারণ’ হিসাবে তুলে ধরে বিসিসিআইকে নিশানা করলেন মিকি আর্থার। ভদ্রলোকের পরিচয়– পাকিস্তান ক্রিকেটের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট। শনিবার বুমরাহ-রোহিতে (Rohit Sharma) বিপর্যস্ত মিকির দিকে সমর্থক না থাকা নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেই যেন বিস্ফোরণ ঘটল! “আজকে গ্যালারিতে একটা দলের সমর্থকরাই ছিলেন! একবারের জন্যও মনে হয়নি আমরা বিশ্বকাপ (Cricket World Cup 2023) খেলছি। বিশ্বকাপ বাদ দিন, কোনও আইসিসি (ICC) টুর্নামেন্টেও এমন প্রথমবার হতে দেখলাম। মনে হচ্ছিল আমরা যেন কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারতে এসেছি। বিশ্বকাপ খেলতে এসে এমন অভিজ্ঞতা হবে আমরা আশা করিনি,” পরাভূতের নিস্ফলা আক্রোশ নিয়ে শুনিয়ে গেলেন মিকি। তবে কি গ্যালারির শব্দব্রহ্মই কাঁপিয়ে দিল বাবর-শাহিনদের হাঁটু? সাবধানী আর্থারের জবাব, “এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। বললে আমার চাকরিটা থাকবে না!”
আহমেদাবাদের গ্যালারির যুদ্ধ নিয়ে ‘অজুহাত’ দিলেও বাইশ গজে যে তঁার দলকে সব বিভাগে টেক্কা দিয়েছে ভারত, মেনে নিয়েছেন মিকি। স্বীকার করলেন, “আমাদের খেলা একেবারেই পাকিস্তান-সুলভ হয়নি। আমরা এই ম্যাচের চাপ নিতে পারিনি। কোনও ভাবেই ১৫৫/২ স্কোর থেকে ১৯১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার সাফাই দেওয়া যায় না।” বাবর-রিজওয়ান জুটিতে ভর করে বড় রানের স্বপ্ন দেখছিল পাক-শিবির। কিন্তু ভিত ভাল হলেও তাতে বহুতল গড়তে পারেননি তাঁরা। সিনিয়র হিসাবে দুই ব্যাটারের কি আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল না? বাবরদের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট এবারও জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানী, “ওরা দু’জনই দীর্ঘসময় ধরে পাকিস্তানের সেরা পারফর্মারদের তালিকায় রয়েছে। আজকে ওদের আরও ভালভাবে প্রতিপক্ষের স্পিন অ্যাটাকের মোকাবিলা করা উচিত ছিল। তবে আমাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে, আজকের ম্যাচে ভারতীয় স্পিনাররা দুরন্ত বোলিং করেছে।”
সেই ’৯২ সাল থেকে কাপ-যুদ্ধে শুরু হয়েছে ভারত-পাক লড়াই। আট-আটবার মুখোমুখি হলেও এখনও পর্যন্ত হতাশার অন্ধকার ছাড়া কিছুই জোটেনি পাকিস্তানের ভাগ্যে। মিকি (Micky Arther) অবশ্য ৩১ বছরের টানা ব্যর্থতা নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। বলে গেলেন, “দেখুন, কবে কী হয়েছে সেটা আমাদের অজানা নয়। তবে অতীতে তো আর আমি দলের দায়িত্বে ছিলাম না। এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম। আর এবার।” তবে এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়েও আশাবাদী মিকি। “আমরা অন্তত ৩৩০ রান করার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। সেটা হয়নি। তবে লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বকাপে এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। আমি আশাবাদী এখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমরা ফাইনাল খেলব। আর সেই ম্যাচটা পাকিস্তান খেলবে ভারতের বিরুদ্ধে, এই আমেদাবাদেই” বলে গেলেন তিনি। শুরুতে বিসিসিআই-কে কাঠগড়ার তুললেও শেষে যেন ওয়াঘার দু’পারের কয়েক কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মনের কথাটাই শুনিয়ে গেলেন মিকি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.