রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদের পঁচিশ বছরের জন্মদিন ছিল। জাতীয় দলের ক্রিকেটার পুত্রের জন্মদিন অনুষ্ঠান যথেষ্ট আড়ম্বর-সহ হবে, দামী উপহার আসবে, এটাই প্রত্যাশিত। পদ্মাপাড়ে ফোন করে শোনা গেল, তাসকিন নাকি উপহার হিসেবে দ্রব্যাদি চাননি পিতার কাছ থেকে। শুধু পিতাকে অনুরোধ করেছিলেন যে, আমাকে শুধু একটাই উপহার দিন। করোনা আক্রান্ত দেশের এই কঠিন সময়ে আমাদের যত ভাড়াটে আছে, তাদের এক মাসের ভাড়া মকুব করে দিন! ওটাই আমার পঁচিশ বছরের জন্মদিনের সেরা উপহার হবে!
মাশরাফি মোর্তাজা ইতিমধ্যেই একটা উপহার দিয়ে দিয়েছেন নড়াইলবাসীকে। ভ্রাম্যমান একটা অ্যাম্বুল্যান্স চালু করেছেন জানা গেল। মাশরাফি বর্তমানে সাংসদ। তাঁর ক্ষমতা আছে। কিন্তু দেশের এ হেন সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে সেই ক্ষমতার প্রয়োগও করছেন দারুণ ভাবে। শোনা গেল, নড়াইলবাসীকে এখন আর ডাক্তার-বদ্যি দেখাতে হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে না। মাশরাফির উদ্যোগে ডাক্তাররাই পৌঁছে যাচ্ছেন লোকের বাড়ি-বাড়ি! করোনার প্রধান প্রতিষেধক সামাজিক দূরত্ব রাখা- অগত্যা!
শাকিব আল হাসান দেশে নেই। মানে, বাংলাদেশে এখন নেই। তিনি এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। কিন্তু তাতে কী? করোনা যুদ্ধে তিনি কাজ করছেন নিষ্ঠাবান যোদ্ধার মতো, তা সে ধাত্রীভূমিতে বর্তমানে থাকুন চাই না থাকুন। করোনা ওপার বাংলায় বিস্তার করতে না করতে খুলে ফেলেছেন শাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন। যে ফাউন্ডেশন অর্থসংগ্রহ করে ইতিমধ্যে করোনা পরীক্ষার কিট তুলে দিয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালের হাতে! কী করা যাবে, করোনা শনাক্তকরণই যে হালফিলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উপমহাদেশের।
তিনটে নাম উপরে লেখা হল। তিন জনের অবদানের কথা বলা হল। কিন্তু ওপার বাংলার ক্রিকেটমহলের সঙ্গে কথা বলে অন্তত গোটা দশেক নাম পাওয়া গেল যাঁরা এই মুহূর্তে করোনার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে বসে আছেন। এবং এঁরা সবাই ক্রিকেটার। কেউ পুরুষ। কেউ মহিলা। যাঁরা নাকি নিজেদের তহবিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষ না চিন্তা করে একযোগে নেমে পড়েছেন করোনা মোকাবিলায়।
বাংলাদেশের জাতীয় দলের মহিলা ক্রিকেটার জাহানারা আলম যেমন। বোর্ডের থেকে খুব বেশি বেতন যে পান, তা নয়। কিন্তু পঞ্চাশটা দরিদ্র পরিবারের দায়দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন। পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে রনি তালুকদারকে ধরা যাক। এই মুহূর্তে পাঁচশো পরিবারের দায়িত্বে। শোনা গেল, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একটা সংগঠন তৈরি করেছেন- ফ্রেন্ডস ডটকম। যে সংগঠন পাঁচশো পরিবারের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে চাল-ডাল-তেল-আলু-পেঁয়াজ। মোসাদ্দেক হোসেনকে পাওয়া যাবে উদাহরণ হিসেবে যিনি দু’শো পরিবারকে খাওয়ানো-দাওয়ানো ছাড়াও ভার নিয়েছেন বৃহন্নলা সমাজের। লোকে বেরোচ্ছে না। গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ। তাঁরাও বা খাবেন কী? এরপরেও রুবেল হোসেনের মতো কেউ কেউ আছেন। যাঁরা প্রাণপাত করে দিচ্ছেন দুঃস্থদের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পৌঁছে দিতে। আর এঁদের কিছু জিজ্ঞাসা-টিজ্ঞাসা করলে নাকি উত্তর আসছে যে, টাকা এত দিন আল্লাহ দিয়েছিলেন। সব ঠিক হয়ে গেলে তিনি আবার দেবেন। এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার।
আর এ হেন পাশে দাঁড়ানোর উদাহরণ আরও আছে। শোনা গেল, বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ইতিমধ্যে নিজেদের বেতনের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছেন করোনা প্রতিরোধে। বাংলাদেশ বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৯১ জন ক্রিকেটার নিজেরা একটা তহবিলও করে ফেলেছেন। যেখানে জমা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ। যার উদ্দেশ্য একটাই।
টার্গেট একটাই। করোনাকে হারিয়ে বাঁচিয়ে রাখো সোনার বাংলা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.