রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আবু ধাবিতে কেকেআর যে হোটেলে আছে, তা থেকে সমুদ্র দেখা যায়। পুরোদস্তুর ‘বিচ ফ্রন্ট প্রপার্টি’। ছ’বছর আগে আইপিএল প্রথম বার আমিরশাহী যাত্রা করেছিল যখন, আবু ধাবির এই রিৎজ কার্লটনেই ছিল কেকেআর। অর্থাৎ, ২০১৪ সাল। যে বার গৌতম গম্ভীরের কেকেআর টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে পর্যদুস্ত হয়ে টানা জিতে আইপিএল জয়ী হয়েছিল। সে দিক থেকে দেখলে আবু ধাবির রিৎজ কার্লটন নাইটদের ‘পয়া’ ছাউনিও বটে! রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও উঠছে আবু ধাবির আর এক ‘বিচফ্রন্ট প্রপার্টি’তে, সেন্ট রেগিসে। রাজস্থান রয়্যালস যে হোটেলে উঠেছে, সেখানে সাধারণত টাইগার উডস-টুডস এলে থাকেন! অজিঙ্ক রাহানে-রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের দিল্লি ক্যাপিটালস থাকবে বুর্জ খলিফার পাশের হোটেলে। বিরাট কোহলিরা উঠলেন জুমেইরার ওয়াল্ডরফ অ্যাস্টোরিয়ায়। সেই ‘বিচ ফ্রন্ট প্রপার্টি’। ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ আসছে রবিবার, থাকবে পালাজো ভার্সাচে। আর এ দিন রাত সাড়ে ন’টায় দুবাইয়ে নামা মহেন্দ্র সিং ধোনিরা উঠছেন তাজে।
এত পর্যন্ত পড়লে মনে হবে, কোথায় করোনা প্রভাব? কোথায় গতিরুদ্ধ স্বাভাবিক জীবন? এটা তো আইপিএলের চেনা সেই ‘পশ’ পৃথিবী, যা প্রতি বছর দেখা যায়। মুশকিল হল, এটা বহিরঙ্গ মাত্র। আমিরশাহীতে আইপিএলের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, সেখানে করোনা ঘিরে যথেষ্ট টেনশন ও কাঁপুনি– দু’টোই আছে।
এ দিন দুবাইয়ে ফোন করে জানা গেল, গত এক সপ্তাহ ধরে আমিরশাহীর করোনা গ্রাফ আবার ঊর্ধ্বমুখী। দিন প্রতি তিনশো-চারশো জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা সে দেশের আয়তন বিচারে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কেকেআর যেখানে আছে, সেই আবু ধাবি থেকে দুবাই ঢুকতে গেলে ঝাড়া তিন ঘণ্টা লাইন দিতে হচ্ছে করোনা পরীক্ষার জন্য! স্থানীয় সাংবাদিকরাও শোনা গেল, টিম হোটেলের আশেপাশে তেমন ঘেঁষতে পারছেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের তরফে বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘নো ইন্টারভিউ’, ‘নো পার্সোনাল ইন্টারাকশন।’ যা হবে, ভার্চুয়াল!
আমিরশাহীর জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে যে খোঁজ পাওয়া গেল, সেটাও বেশ অবাক করা। এমনিতে আমিরশাহীর এয়ারপোর্টে নেমে করোনা পরীক্ষা। নিয়ামবলী মেনে ছ’দিনের কোয়ারেন্টাইন। সেই ছ’দিনের মধ্যে তিন বার পরীক্ষা– সে সব তো আছেই। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে সুরক্ষা বলটার একটা নাম দেওয়া হয়েছে– ‘থ্রি ডি সিকিওরিটি’। যার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগে কাজ করবে দুই সংস্থা। একটা লন্ডনের সংস্থা রিস্ট্রাটা। যারা ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজের জৈব সুরক্ষা বলয়ের দায়িত্বে ছিল। তারা আইপিএলের সুরক্ষা বলয়ের দায়িত্বে শুধু থাকছে না। ক্রিকেটারদের জন্য একটা ‘চিপ’ তারা সরবরাহ করবে যা ক্রিকেটারদের গতিবিধির উপর নজর রাখবে। কেউ সুরক্ষা বলয় ভেঙে বেরোলে সঙ্গে সঙ্গে সেই ‘চিপ’ রিপোর্ট করে দেবে। ঠিক যে ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে জোফ্রা আর্চার জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙে ধরা পড়েছিলেন। তৃতীয়ত, দুবাইয়ের একটা মেডিক্যাল সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে যারা হোটেলে ক্রিকেটারদের করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকটা দেখবে। আগামী আড়াই মাসে আট ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটারদের যাবতীয় করোনা পরীক্ষা, টুর্নামেন্টের মাঝে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি– সব কিছুর দায়িত্বে থাকবে এই সংস্থা। আমিরশাহীতে আইপিএল না কুরুক্ষেত্র– কীসের আসর বসছে, এর পর বোঝা যাচ্ছে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.