জ্যাক ক্রলিকে আউট করার পর আকাশ দীপের সেলিব্রেশন। ছবি: X হ্যান্ডেল
সব্যসাচী বাগচী: দুজনের মধ্যে কোনও মিল নেই। একজন বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক। আর একজন সবেমাত্র টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সি গায়ে চাপিয়ে রাজকীয় মেজাজে টেস্ট অভিষেক ঘটিয়েছেন। প্রথমজন মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি ভারতের নতুন পেস সেনসেশন আকাশদীপ (Akash Deep)। যিনি কিনা ক্যাপ্টেন কুলের হোমগ্রাউন্ড রাঁচির জেএসসিএ স্টেডিয়ামের বাইশ গজে নেমেই ইংরেজ ব্যাটারদের বুঝে নিলেন।
দুজনের মধ্যে অবশ্য দুটি মিল রয়েছে। দুজনেরই উত্থান টেনিস বলে ‘খেপ’ খেলে হয়েছিল। দুজনেই একটা সময় আসানসোল ও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় টেনিস বলে দাপট দেখাতেন! এবং প্রবীণ-নবীনের দুজনেরই উত্থানের ক্ষেত্রে আরও একজনের ‘কমন’ অবদান রয়েছে। তিনি এক ও অদ্বিতীয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)!
গত কয়েক বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে বিপক্ষের ব্যাটারদের কাছে তিনি যমের মতো! আগুনে পেসের সঙ্গে বিষাক্ত সুইং। এই হাতিয়ারে প্রতিপক্ষকে বারবার বধ করেছেন বাংলার আকাশ। ফলও পেলেন হাতেনাতে। রনজি ট্রফিতে দাপট দেখানোর পর সুযোগ পেলেন ভারত এ দলে। সেখানেও আকাশ একেবারে উজ্জ্বল। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিহারের গোপালগঞ্জ থেকে উঠে আসা আকাশ এবার টেস্ট দলের জার্সি গায়ে চাপালেন। ইংল্যান্ডের (England) বিরুদ্ধে তাঁর পারফরম্যান্স সবাই দেখেও নিয়েছেন।
প্রিয় ছাত্রের এমন সাফল্যে স্বভাবতই উচ্ছ্বাসে মাতলেন সৌরাশিস লাহিড়ী (Souraish Lahiri)। সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে টেলিফোনে তিনি বলেন, “সেটা ২০১৭-১৮ মরশুমের কথা। আমি সেই সময় অনূর্ধ্ব-২৩ বাংলা দলের কোচ। ময়দান ঘুরে খুঁজে পেলাম আকাশকে। প্রথম দর্শনেই ওকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। রেঞ্জার্স মাঠে সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। অন্য বোলার বল করার সময় উইকেটকিপার উইকেটের থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে বল ধরলেও, আকাশের ক্ষেত্রে উইকেটকিপার প্রায় ৩০-৩৫ গজ দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল! সেটা দেখে মাঠ থেকেই ফোন করেছিলাম দাদিকে (পড়ুন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়)। স্পষ্ট বলেছিলাম, ‘এই ছেলেটাকে সুযোগ দাও। বাংলাকে অনেক বছর সার্ভিস দেবে।’ ব্যস সেই শুরু হল ওর যাত্রা।”
WWW 🤝 Akash Deep!
Follow the match ▶️ https://t.co/FUbQ3Mhpq9#TeamIndia | #INDvENG | @IDFCFIRSTBank pic.twitter.com/YANSwuNsG0
— BCCI (@BCCI) February 23, 2024
সৌরাশিসের ছায়ায় আকাশ নতুন জীবন ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু থাকবেন কোথায় ছেলেটা? প্রাক্তন বঙ্গ অফ স্পিনার যোগ করলেন, “আমার সঙ্গে কথা বলার পর দাদি ওর জন্য সিএবি-র ডর্মিটরিতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মাথার উপর ছাদ পাওয়ার পর আকাশকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ভিশন ২০২০ প্রকল্পতে এসে নিজেকে আরও ঘষেমেজে গড়ে তুলেছিল আকাশ।”
কোন মন্ত্রে জ্যাক ক্রলিকে তিনি ফেরালেন? সৌরাশিস যোগ করলেন, “ভারতের উইকেটে সাফল্য পেতে হলে পেসের সঙ্গে সুইং করতে পারার দক্ষতা থাকা দরকার। কারণ পাটা পিচে খেলা হয়। আকাশের বোলিংয়ে পেস ও সুইং দুটিই রয়েছে। ও একইসঙ্গে ইন সুইং এবং লেগ কাটার দুটোই করতে পারে। তাই কোনও ব্যাটারকে বোন্ড কিংবা কট বিহাইন্ড আউট করা ওর জন্য জলভাতের মতো। তাছাড়া আকাশ টানা ৮-১০ ওভার একই গতিতে বল করতে পারে। যেটা টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার জন্য খুব দরকার। সেইজন্য সকালের দিকেই ইংল্যান্ডের টপ তিন ব্যাটারকে আউট করতে পারল।”
লক্ষীরতন শুক্লা (Laxmi Ratan Shukla) একইরকম ভাবে উচ্ছ্বস্বিত। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে স্পট বোলিংয়ের উপর জোর দিয়েছিলাম। অনুশীলনে মুকেশ, আকাশরা লাগাতার স্পট বোলিং করে যেত। রাঁচিতেও সেই নীতি বজায় রেখেই আকাশ বোলিং করে গেল। তাই সাফল্য পাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। আর তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ভারত এ, সব জায়গায় আকাশ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে। তাই ওর ড্রিম ডেবিউ দেখে আমি একেবারেই অবাক নই।”
তাঁর অধিনায়কত্বেই ডানা মেলে ধরেছিলেন আকাশ। এহেন সদ্য প্রাক্তন হওয়া মনোজ তিওয়ারিও (Manoj Tiwary) গর্বিত। বললেন, “ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকেই পারফর্ম করে। সেখান থেকে ভারত এ দলেও সুযোগ পায়। কিন্তু টেস্ট দলে সুযোগ পেতে হলে বিশেষ গুণ থাকা দরকার। সঙ্গে কিছুটা ভাগ্য প্রয়োজন। আকাশ পারফর্ম করেছে। ওর ওয়ার্ক এথিক্স খুবই ভালো। এবং কপাল চওড়া। কারণ জশপ্রীত বুমরাহ বিশ্রাম না পেলে, ওর ডেবিউ হওয়ার কোনও প্রশ্নই উঠত না। তবে যাই হোক বরাবরের মতো স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিং করে গেল। সঙ্গে ভয়ংকর গতি। দুনিয়ার যেকোনও ব্যাটার আউট হতে বাধ্য।”
সাফল্যের সঙ্গে ঘটল টেস্ট অভিষেক। ধোনির রাঁচির বাইশ গজে উজ্জ্বল বাংলার দীপ। এবার তিনি কতদূর এগোবেন সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.