চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত: সিনিয়ররা মিলে একটা জুনিয়র ছেলেকে রান আউট করানোর প্ল্যান করছে। ভাবতে পারেন! তাহলে একটা গল্প শুনুন। রমাকান্ত আচরেকর স্যরের যে কোনও কথা আমাদের কাছে ছিল বেদবাক্য। যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চুটিয়ে খেলছি, জাতীয় দলের ডাক পাব-পাব। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটের তখন দ্রুত উত্থান। আমি তখন কামাথ ক্লাবের অধিনায়ক। স্যর নিজেই এই ক্লাবটা চালাতেন।
খেলা পড়েছে নিউ হিন্দ ক্লাবের বিরুদ্ধে। পুরোপুরি সিনিয়রদের খেলা। এমন সময় স্যর বললেন, চান্দু শচীনকে বসিয়ে রাখার কোনও মানে হয় না। ওকে দলে নাও। আমি শুনে অবাক। একটা বারো বছরের ছেলে পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলতে পারবে নাকি! শুধু আমি নই, আমার দলের দু-তিনজন সিনিয়রও আমার সঙ্গে একমত হল। কিন্তু স্যরের কথা তো অমান্য করা যায় না। অতএব ঠিক হল, শচীন দলে থাকবে। কিন্তু দ্রুত ওকে রান আউট করিয়ে দেওয়া হবে। শচীন যখন ব্যাট করতে নামল আমারই নির্দেশে একজন সিনিয়র তাই রানের জন্য ওকে ‘কল’ দিল। সে রান আদতে হয় না। শচীন কোনোক্রমে নিজের উইকেট বাঁচাল। ব্যাপারটা আরও এক-দুবার হতেই শচীন বুঝে ফেলল আমাদের ফন্দিটা। তারপর ও যা করল তাতে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া। একটু পরে ও রানের কল দিয়ে একজন সিনিয়রকেই রান আউট করে দিল। সাময়িক রাগ হয়েছিল বটে, তবে সেদিনই বুঝেছিলাম, এ ছেলে ইস্পাতের মতো কঠিন।
শচীনের মতো প্যাশন আমি আর দেখিনি। আমি তখন ভারতের হয়ে খেলছি। সময় পেলেই স্যরের ওখানে চলে যেতাম, নেট প্র্যাকটিস করার জন্য। গিয়ে দেখতাম শচীন ঠিক প্যাড পরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্র্যাকটিস করছি, আর ২০ মিনিট ছাড়া ছাড়া ও এসে খোঁজ নিচ্ছে। একটাই কথা, কখন আমার শেষ হবে, ও তাহলে শুরু করতে পারবে। আমি বাচ্চা শচীনের কথায় গুরুত্ব না দিলে ওর কিছু যেত-আসত না। দশ মিনিট পর ফিরে এসে আবার জিজ্ঞেস করত, শেষ হল? শ্রীলঙ্কা টুরের আগে দেখতাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইয়র্কার সামলানোর প্র্যাকটিস করছে। তখন ও বিশ্বে বিখ্যাত। কিন্তু কথা একটাই, মালিঙ্গা খতরনাক ইয়র্কার দিতে পারে। তাই ওর প্রস্তুতি পাকা হওয়া চাই। ঠিক যেন সেদিনের সেই কিশোরটি যে ক্রমাগত নেট প্র্যাকটিস করে যেতে চায়।
সত্যি বলতে বুকের ভিতর এই প্যাশনের প্রপাত না-থাকলে আর যাই হোক শচীন তেণ্ডুলকর হওয়া যায় না। শচীন মানে আমার কাছে চিরকাল তাই প্যাশনের এক অনির্বাণ অগ্নিশিখা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.