স্টাফ রিপোর্টার: ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে অশান্তির জেরে লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণকারী বাকি সাত দেশের পতাকা থাকলেও, ভারতের পতাকা রাখল না পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ভারত যেহেতু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছে না, নিজেদের ম্যাচ খেলছে দুবাইয়ে, তাই। যা নিয়ে মহাবিতর্কও বেঁধে গেল। কিন্তু তার পরেও ভারতকে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের আওয়ামের মনন থেকে মুছে ফেলতে পারল কি পাক বোর্ড?
উত্তর–না এবং না। বরং পাকিস্তানে বিরাট কোহলিরা না থেকেও রয়েছেন! পাকিস্তানে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও রয়েছেন রোহিত শর্মারা!
বিশ্বাস না হলে পাকিস্তানের বিখ্যাত জায়নাব মার্কেটের দোকানদার মইজ আহমেদের কথা শুনুন। যিনি বলছেন, ‘‘ভেবে খারাপই লাগছে যে, ভারত এখানে খেলতে আসবে না। অথচ ভারতীয় প্লেয়ারদের কী অসম্ভব সম্মানই না করে আমাদের দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিশেষ করে বিরাট কোহলি।’’ মইজ চমকে যাচ্ছেন, পাকিস্তানি যুবক-যুবতীদের মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটারদের জার্সি নিয়ে অসীম আগ্রহ দেখে। যে উন্মাদনা দেখে মইজ ফের বললেন, ‘‘বিরাট কোহলির বিশাল সমর্থককুল রয়েছে পাকিস্তানে।’’ পাশ থেকে কাশিফ নামের এক কলেজপড়ুয়া আবার বললেন যে, ‘‘শুধু ব্যাটিংয়ের জন্য কোহলিকে আমার ভালো লাগে, তা নয়। ওকে মানুষ হিসেবেও বড় ভালো লাগে। মিডিয়ায় যে ধরনের কথাবার্তা কোহলি বলে, তা থেকে বোঝা যায় ও মাটির মানুষ।’’
জায়নাব মার্কেটের বিশেষত্ব হল, সেখানে দেশ-বিদেশের প্লেয়ারদের জার্সি পাওয়া যায় অকাতরে। ক্রিকেটের। ফুটবলের। আর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান হওয়ায়, টুর্নামেন্টের প্রাক্ লগ্নে জার্সি বিক্রিও ঢালাও বেড়ে গিয়েছে। আর কী আশ্চর্য, সেখানেও একাধিপত্য দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশের, পাকিস্তান আর ভারতের! জাভেদ পাখালি নামের এক দোকানদার বলছিলেন যে, বিগত তিন দিনে তিনি হাজার চার-পাঁচ জার্সি বিক্রি করেছেন। আর সে সবই পাকিস্তান আর ভারতীয় টিমের! দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়। ভারতের খেলার দিন ‘এনক্লোজারে’ কোহলির জার্সি পরে পাকিস্তানি যুবক-যুবতীরা যে খেলা দেখতে আসবেন, তা-ও তাঁরা জানিয়ে দিলেন প্রকাশ্যে! কোনও রকম রাখঢাক না করে।
ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে না গেলেও ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওয়াঘার ওপারে টুর্নামেন্ট চলাকালীন কতটা আরাধনা চলবে, এরপর সহজেই অনুমেয়। সার্বিক ক্রিকেট-জ্বরের পারদও চড়বে কতটা, তা-ও গোটা কয়েক তথ্যপ্রমাণাদিতে স্পষ্ট হয়ে যাবে। পাকিস্তান টিম সোমবার গদ্দাফি স্টেডিয়ামে ট্রেনিং করছিল। পেসার হ্যারিস রউফ এ দিন থেকে নেটে বোলিং শুরু করে দিলেন। সাংবাদিকদের বলেও দিলেন, ‘‘বোলিং করতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না আমার। এবার প্রথম ম্যাচ খেলব কি না, সেটা ঠিক করবে টিম ম্যানেজমেন্ট।’’ প্রিয় তারকাদের এক ঝলক দেখতে প্রচুর সমর্থক জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন এ দিন মাঠে। অনলাইন-অফলাইন সর্বত্র টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। পাকিস্তান বোর্ডের প্রধান মহসিন নকভি এ দিন সগর্বে ঘোষণাও করে দিলেন যে, ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের জন্য আমরা তৈরি। যা যা শর্ত ছিল আইসিসি-র পক্ষ থেকে সবই আমরা পূর্ণ করেছি।’’ পাক বোর্ডের এক কর্তা আবার বলছিলেন, তিনি শুধু প্রার্থনা করছেন, পাকিস্তান শুধু ভালো খেলুক টুর্নামেন্টে। টিকিট বিক্রি নিয়ে তখন আর ভাবতে হবে না।
স্বাভাবিক। ভারতের মতো পাকিস্তানেও ক্রিকেট নিছক একটা খেলা নয়। সে আদতে এক উত্তরাধিকার, যার ব্যাটন অতিবাহিত হয় প্রজন্মের পর প্রজন্মে। যা দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে এক গ্রন্থিতে বেঁধে রাখে। যে মোহনায় এসে ক্রিকেটার আর সাধারণ মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। করাচির চা ধাবা থেকে শুরু করে লাহোরের ছোট-বড় ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র–সব যেন একযোগে খেলাটাকে পাকিস্তান নামক দেশটার জাতীয় পরিচয় করে দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও পাকিস্তান কখনও ক্রিকেটীয় মানচিত্রে তার প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি। গোটা একটা প্রজন্ম জানতে পারেনি, দেশের মাটিতে বিশ্বপর্যায়ের টুর্নামেন্টের আসর বসলে, তার অনুভূতি কেমন হয়। মাঠে বসে, দেখতে কেমন লাগে। ১৯৯৬ ওয়ান ডে বিশ্বকাপের পর কখনও যে আর কখনও বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর দেশের মাটিতে দেখেনি ওয়াঘার ওপার! যা দেখবে এবার। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। যে টুর্নামেন্ট শুধুমাত্র ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের সম্মান পুনরুদ্ধারই নয়। একই সঙ্গে ক্রিকেট পৃথিবীতে পাকিস্তানের প্রভাব কতটা, সেটা বোঝানোর জন্যও। বাবর আজম-শাহিন শাহ আফ্রিদিরা আগামী ৯ মার্চ ট্রফি তুলুন বা না তুলুন, পাকিস্তান দেশটার সামনে কোনও বিকল্প নেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন নামক মর্যাদার ট্রফিটা তাদের জিততেই হবে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.