দুবাই মাঠে একান্ত আলোচনায় বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা।
আলাপন সাহা, দুবাই: দুবাই শহরটার এক-এক জায়গা এক রকম। মোটর সিটি কিংবা স্পোর্টস সিটি অনেকটা সল্টলেক কিংবা নিউটাউনের মতো। আল বারশা একদম ধর্মতলা। ডাউন টাউন দুবাই ঠিক পার্ক স্ট্রিটের মতো। অনেক রাত পর্যন্ত জাগে। মিনা বাজারকে অনায়াসে বড়বাজার বলা যায়। উৎসবের আবহে বড়বাজারে যেমন ভিড় থাকে, মিনা বাজারেও ঠিক তাই। বিভিন্ন ধরনের দোকান।
কোথাও সুগন্ধী পারফিউম পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও চকোলেট। কোথাও আবার ব্রান্ডেড টি-শার্ট। মিনা বাজার থেকে খানিক দূরত্বেই দুবাইয়ের বিখ্যাত ‘গোল্ড সুক’ (সোনার মার্কেট)। যেখানে কিছুদিন আগে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা স্বয়ং ঘুরে গিয়েছিলেন। মিনা বাজার থেকে ‘গোল্ডসুক’ যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ইঞ্জিন চালিত নৌকা। ক্যানেলের এপার থেকে ওপার যেতে এক দিরহাম লাগে। গোল্ডসুক দুবাইয়ে অত্যন্ত বিখ্যাত। বলা হয়, দুবাই মরুশহরে ঘুরতে এলে পর্যটকরা একবারের জন্য হলেও গোল্ডসুক যাবেনই। গয়নার বিশাল বিশাল দোকান। দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন এই সময়টাতে। জানুয়ারি থেকে মার্চ-এখানকার শীতকাল। আবহাওয়াও বেশ মনোরম। গরম একেবারে নেই। কিন্তু ফাইনালের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে দুবাইয়ে পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও রবিবারের ফাইনাল নিয়ে কোথাও আলোচনা শোনা গেল না। এক-আধ সময় মনে হচ্ছিল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ঘিরে কি তাহলে সত্যিই সেই উৎসাহ কমে যাচ্ছে?
ভুল ভাঙল আইসিসি অ্যাকাডেমির প্র্যাকটিস মাঠে এসে। ভারতীয় টিমের জন্য ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সমর্থকরা অপেক্ষা করছিলেন। আইসিসি-র লোকজন হন্তদন্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। টিকিটের চাহিদা ক্রমশ আকাশ ছুঁচ্ছে। চেনা পরিচিত এক ভারতীয় সাংবাদিকের মোবাইলে সকাল থেকে অনর্গল ফোন এসেই চলেছে। দাবি একটাই- যদি ফাইনালের টিকিট ম্যানেজ করে দিতে পারেন। গ্রুপ পর্যায়ে ভারত বনাম পাকিস্তানের পর টিকিটের সবচেয়ে বেশি দাম রাখা হয়েছে রবিবারের মেগা ফাইনালে। কিন্তু তাতে কী। লোকজন ওসব নিয়ে ভাবছে না। দাম যতই হোক, টিকিট লাগবে। ভারত থেকে সমর্থকরা ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করে দিয়েছেন। হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর, কলকাতা- দেশের বিভিন্ন শহর থেকে লোকজন আসছেন ফাইনাল দেখতে। সবাই যেন ধরেই নিয়েছেন ভারত জিতছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রতিশোধ দুবাইয়ের মাঠে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে হারিয়ে একটা বদলা হয়েছে। আর একটা হবে রবিবার। আইসিসি ইভেন্টের নকআউট পর্বে নিউজিল্যান্ড বরবার ভারতকে ভুগিয়ে এসেছে। ২০০০ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল হোক কিংবা ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল বা ২০২১-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল।
প্র্যাকটিসে রোহিত, বিরাট কোহলিদেরও একেবারে ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল। সেমিফাইনালের পর দু’দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল পুরো টিমকে। শুক্রবার সন্ধে ছ’টার টিম এলেও লোকেশ রাহুল আধঘণ্টা আগে চলে আসেন। ফাইনালের আগে বাড়তি ট্রেনিং করে গেলেন কেএল। ব্যাটাররা যেরকম পরিবেশ-উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে, বেজায় খুশি টিমের ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক। অস্ট্রেলিয়া সফরের বিপর্যয়ের পর কোটাককে টিমের ব্যাটিং কোচ হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কোটাক বলছিলেন, “আমাদের ব্যাটাররা যেভাবে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে তার প্রশংসা করতেই হবে।”
শুক্রবার ঘণ্টা তিনেকের প্র্যাকটিসে ফাইনালের জন্য রেঞ্জ হিটিংয়ের মহড়াও সেরে রাখলেন বিরাট, রোহিতরা। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহাতারকা বিরাট আর রোহিতকে দেখা গেল আলাদা করে আলোচনা সারতে। দু’জন প্রায় মিনিট পনেরো মিটিং করলেন। হয়তো নিউজিল্যান্ড-বধের পরিকল্পনা চলছিল। তবে ফাইনালের আগে বেশ সমস্যায় নিউজিল্যান্ড। টিমের মেন পেসার ম্যাট হেনরির চোট। সেমিফাইনালে কাঁধে চোট পান হেনরি। তবে তিনি ফাইনালে আদৌ খেলতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। চার ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছেন হেনরি। আপাতত টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাঁর। যার মধ্যে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধেই পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ড কোচও বুঝতে পারছেন না, তাঁর টিমের সেরা পেস অস্ত্রের এখন ঠিক কী অবস্থা। শুক্রবার সকালে কিউয়ি কোচ গ্যারি স্টিড বলে গেলেন, “ম্যাট যদি খেলতে পারে, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পজিটিভ ব্যাপার হবে। ওর স্ক্যান হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা হয়েছে। জানি না কী হবে। আমাদের কাছেও সবকিছু এখন অজানা। পুরোটা অস্পষ্ট।”
হেনরি শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে, ফাইনালে আরও বেশি অ্যাডভান্টেজ নিয়েই নামবেন রোহিতরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.