অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: করোনার কবলে গোটা বিশ্ব। প্রতি মুহূর্তে দুঃসংবাদের মধ্যেও রাজ্যবাসীর জন্য এক অন্য রকম খুশির খবর। ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস‘-এ স্থান পেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার খাকুড়দার সুমন মান্নার কীর্তি। ছোট্ট ওয়ার্ল্ড কাপ রেপ্লিকা (SMALLEST ICC WORLD CUP REPLICA) তৈরি করে শিরোনামে জাতীয় রেকর্ড সংস্থায় (National Record) জায়গা করে নিয়েছে তাঁর কাজ।
কেবলমাত্র একটি দেশলাই কাঠি দিয়ে বানানো আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ রেপ্লিকা (ICC World Cup Replica)। যার উচ্চতা ১২ মিলিমিটার। মাত্র ৫০ মিনিট সময়ে তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। পেশায় স্কুল শিক্ষক হলেও নেশা সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মে। সেই নেশার টানে সবসময় চেষ্টা ছিল এমন কিছু করার। একটু অন্যরকম অর্থাৎ ব্যতিক্রমী হবে। যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে চিত্রকর হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে তা সফল হয়ে ওঠেনি। তবে মনের মধ্যে আলাদা কিছু করার তাগিদ জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। সে দিক থেকে প্রথম সাফল্য আসে একজন কৌতূকশিল্পী হিসাবে। একটি জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেলের হাসির শো’তে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে অংশগ্রহণ করেন। তারপর জেলা স্তরে পরিচিতি আসে তাঁর। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। লেখালিখির পারদর্শীতাকে কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চ্যানেলে স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের কাজ করছেন।
তবে মনের মধ্যে একটি সুপ্ত ইচ্ছা ছিল শুধু জেলা নয়, রাজ্য বা দেশের মুখ উজ্জ্বল করার মতো কিছু একটা করার। সেই প্রচেষ্টারই সাফল্য এল এবার। ইচ্ছাশক্তির জোরে একটি মাত্র দেশলাই কাঠি দিয়ে বানিয়ে ফেললেন ছোট্ট আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ রেপ্লিকা (ICC CRICKET WORLD CUP TROPHY REPLICA)। যেটি মূল ট্রফির মতোই হুবহু দেখতে। কাজটি করার পরেই নিজের কাজ ই-মেল মারফত জানান এশিয়ান বুক অফ রেকর্ডসের আওতাভুক্ত জাতীয় রেকর্ড অন্তর্ভুক্তকারী সংস্থা ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস সংক্ষেপে IBR-কে। কয়েকদিনের মধ্যেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ই-মেল মারফত গাইডলাইন দিয়ে জানান হয় কীভাবে কাজটি করে দেখাতে হবে।
সেই গাইডলাইন মেনে চলতি বছর ৩ মার্চ ক্যামেরার সামনে ৫০ মিনিট সময়ে একটি মাত্র দেশলাই কাঠি দিয়ে আবারও একটি রেপ্লিকা বানান তিনি। সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে উচ্চতা পরিমাপ করে দেখা যায় ১২ মিলিমিটার। সেই সঙ্গে অন্যান্য নির্দেশ মেনে সমস্ত তথ্য ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের দপ্তরে পাঠান তিনি। রেকর্ড অন্তর্ভুক্তকারী সংস্থার বিশেষজ্ঞ দল সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করে ৬ মার্চ, ই-মেল মারফত জানায় সুমনবাবুর কাজটি ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে।
তার স্বীকৃতিস্বরূপ IBR মেডেল, স্মারক ও সার্টিফিকেট ২৯ এপ্রিল তাঁর কাছে এসে পৌঁছেছে। বিপর্যস্ত এই সময়ে লকডাউনের জন্য এই মেডেল, সার্টিফিকেট ও স্মারক আসতে দেরি হল। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে পশ্চিমবঙ্গের নাম তুলতে পেরে তিনি তৃপ্ত। এই দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে এহেন কীর্তির গৌরব সুমনবাবু মায়ের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। মা তাঁকে এই কাজে উৎসাহ জুগিয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও সুমন জানান, তিনি শুধু এখানেই থেমে থাকছেন না। আরও দুটি দেশীয় রেকর্ডের কাজ এগিয়ে রাখছেন তিনি। তাঁর লক্ষ্য গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলা। করোনা কবলে যখন সারা বিশ্বের সঙ্গে এই দেশ লকডাউনে থমকে। ঘরবন্দি মানুষের দমবন্ধ অবস্থা। কীভাবে সময় কাটাবেন ভেবে পাচ্ছেন না অনেকেই। সেই অবসর সময়কেই কাজে লাগিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন সুমন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.