গৌতম ভট্টাচার্য: গত দিন দ’শেকে যে ভাবে বিশ্বের সর্বত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক স্পোর্টস শুরু হয়ে গিয়েছে। বা শুরুর নকশা তৈরি হয়ে গিয়েছে তার ঢেউ লেগেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অন্দরমহলেও। বোর্ডকর্তারা দেখছেন বুন্দেশলিগা যে দরজাটা খুলে দিয়েছিল তার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়েছে বিশ্বের সব বড় বড় স্পোর্টিং টুর্নামেন্ট। স্প্যানিশ লিগ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার (EPL) শুরু হয়ে গিয়েছে। সেরি আ শনিবার শুরু হচ্ছে। ইউএস ওপেন (US Open) নিউইয়র্কের মতো করোনা বিধ্বস্ত শহরে অগাস্টেই খেলা করবে বলছে। ফ্রেঞ্চ ওপেন নতুন ফিক্সচার জানিয়ে দিয়েছে। এমনকী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট টিম পৌঁছে গিয়েছে ইংল্যান্ডে।
করোনাকে হারিয়ে চারপাশের এই বিশ্বব্যাপী স্পোর্টেস দরজা খোলার আওয়াজে ভারতীয় বোর্ডও (BCCI) সামিল হতে চায়। তারা প্রাণপণে চায় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে আইপিএল শুরু করতে। নানান কথা রটছে। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়া বা কাগজেও বেরোচ্ছে যে আইপিএল (IPL) ভারতে না করা গেলে শ্রীলঙ্কা বা আমিরশাহিতে চলে যাবে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তার কোনও সম্ভাবনা নেই। বোর্ড প্রেসিডেন্টকে ফোনে না পাওয়া গেলেও তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের আভাস আইপিএল হলে ভারতেই হবে। অন্য কোথাও নয়।
আইএসএল শুরু হবে ২১ নভেম্বর। এর ব্রডকাস্টিং স্বত্বও স্টার স্পোর্টসের হাতে। আইপিএলও দেখাবে তারা। ইন্টারন্যাশনাল টিভি প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক টুর্নামেন্ট হলে মাঝখানে অন্তত সাত দিনের গ্যাপ রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে আইপিএল শেষ করতে হবে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে। অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর/ ১অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে খেলা শেষ করতে হবে। মাঝে রটেছিল আইপিএলকে সঙ্কুচিত করে আনা হবে। এ দিন জানা গেল সেটাও ঠিক নয়। আইপিএল হলে পুরোটাই হবে। বিশ্বের সমস্ত টুর্নামেন্টের মতোই আইপিএলও হবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। প্লেয়ারদের কোনওভাবে যাতে জনসাধারণের থেকে সংক্রমণের সমস্যা না হয় সেই জন্য তাদের এক শহর থেকে আরেক শহর চার্টার্ড ফ্লাইটে নিয়ে যাওয়ার কথা আপাতত ভেবে রাখা হচ্ছে।
প্রশ্ন হল খেলা কোথায় হবে? একে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর জুড়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বর্ষা চলে। তার উপর মুম্বই এবং চেন্নাইতে কোভিড পরিস্থিতি খারাপ। আপাতত সবার আগে ভেবে রাখা হয়েছে বেঙ্গালুরুর কথা। দ্রাবিড়ের শহরে ওই সময় সাধারণত বৃষ্টি হয় না। আর কোভিড পরিস্থিতিও আপাতত অপেক্ষাকৃত নিয়ন্ত্রণে। হায়দরাবাদ দ্বিতীয় পছন্দ। ইডেনেও অক্টোবরের শেষে ম্যাচ হতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হল অন্যবারের মতো এ বার নয়। তাই প্রাথমিক ক্রীড়াসূচি করে কর্তাদের বসে থাকতে হবে। অগাস্টের আগে ঠিক করাই সম্ভব হবে না কোন কোন শহরে খেলা হবে। পুরোটাই নির্ভর করছে কোভিড পরিস্থিতির উপর।
বোর্ড কর্তারা ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, একে ১০ জুলাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সরাসরি ভাবে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সরকারিভাবে এগোতে পারছেন না। দুই কোভিড পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে? প্লেয়াররা কীভাবে সেটাকে নেবে? কোনও কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এশিয়া কাপ হওয়ার কথা শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু তাঁরা শুনছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেকে শ্রীলঙ্কা যেতে রাজি হচ্ছেন না। এশিয়া কাপ ওই সময় না্ করা গেলে তখন ক্রীড়াসূচি কী দাঁড়ায় সেটাও দেখার। দ্বিতীয়ত দেখার যে মুম্বই আর চেন্নাইতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কিনা। আর পনেরো দিন কেন এক মাস বাদেও আইপিএল শুরু করা হলে মুম্বই আর চেন্নাই অবধারিতভাবে কোনও ম্যাচ পেত না । প্রশ্ন হচ্ছে সেই সময় এই শহর দুটোর পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়? বোর্ড কর্তাদের অবস্থা তাই। প্রথম ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো। কত ওভার খেলা হবে জানেন না। কত ওভারে কত রান তোলা যথেষ্ট জানেন না। পুরোটাই অনিশ্চয়তা। তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী সংগঠকদের দেখে বোর্ডকর্তারা নিজেদের মনোবল অনেক বাড়িয়ে নিয়েছেন। ধরে নেওয়া যায় কোভিড নতুন মারাত্মক আঘাত না আনলে আইপিএল হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.