ফাইল ছবি
গৌতম ভট্টাচার্য: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠরা বারবার বলেন, তাঁর স্ক্রিপ্ট নিশ্চয়ই বিশেষ কোনও জায়গায় লেখা হয়! নইলে সাতচল্লিশ বছর বয়সে ২০২০-র মে, তাঁর কাছে তিনটে ভিন্ন এবং একইরকম লোভনীয় বিকল্প নিয়ে কখনও আবির্ভূত হয়? সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ রাস্তা আগামী মাসে আইসিসি চেয়ারম্যান হতে চেষ্টা করা।
লর্ডসে সেঞ্চুরি দিয়ে যাঁর টেস্ট জীবন শুরু হয়েছে, আইসিসি চেয়ারম্যানশিপ তাঁর মাথাতে যথোপযুক্ত চূড়ান্ত মুকুট। হিসেব শুরু থেকে শেষ অবধি মিলে যাওয়া। বিকল্প দুই, চেয়ারম্যানের দৌড়ে গা না ভাসিয়ে ভারতীয় বোর্ড প্রধানের পদেই বহাল থাকা। বোর্ডে তাঁর সচিব জয় শাহর মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুন মাসে। সৌরভের জুলাইয়ে। কিন্তু ধরে নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত থেকে বাড়তি সময়ের ছুটকারা তিনি পেয়ে যাবেন। দু’বছরের বেশি তিনি ও তাঁর সচিব শাসন করতে পারবেন ভারতীয় বোর্ডকে। বিকল্প তিন, রাজনীতির ময়দান থেকে আসা হাতছানিকে সম্মান জানিয়ে আগামী বছরের নির্বাচনে নেমে পড়া। তিনটে বিকল্পের মধ্যে এটা সবচেয়ে খাড়াই এবং বিপজ্জনক। তাঁর ঘনিষ্ঠরা চান না। সৌরভ নিজেও বলেছেন, রাজনীতিতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। হাতছানির ডাক তাতেও কিন্তু আমফান বিধ্বস্ত সময়েও গঙ্গার বুকে মিলিয়ে যায়নি।
তিনটে বিকল্পের মধ্যে প্রথমটা নিয়ে বেশি ভাবার সময় নেই। কারণ এক মাসের মধ্যে নতুন আইসিসি প্রধান বেছে ফেলা হবে। বর্তমান চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর মেয়াদ শেষ করছেন জুনের শেষ দিন। বাড়তি কথা বলতে তীব্র অনিচ্ছুক শশাঙ্ক ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে ফোনে এটুকু বললেন, তাঁর কার্যভার ওই দিনই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কী রূপরেখা হবে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ কীভাবে চলবে, সেগুলো ঠিক করবে পরের চেয়ারম্যানের অধীনে থাকা এক্সিকিউটিভ বোর্ড। তিনি নন। সাদা বাংলায়, সুযোগ থাকলেও নাগপুরবাসী পুনর্নির্বাচনে আগ্রহী নন। আইসিসি তাই নতুন চেয়ারম্যান পাচ্ছেই। সে সৌরভ হোন বা ইংল্যান্ড থেকে কেউ।
বৃহস্পতিবার আইসিসি এক্সিকিউটিভ বোর্ডের জরুরি মিটিং বসছে। এই প্রথম মিটিং রুমে নয়। হবে জুম অ্যাপে। সৌরভ যোগ দেবেন বেহালার বাড়ি থেকে। মুম্বইয়ে ফোন করে জানা গেল, এই বৈঠকেই হয়তো অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাতিল হয়ে যাবে। সেটা পিছিয়ে চলে যাবে ২০২২-এ। আর ২০২১-এর টুর্নামেন্ট ভারত যেমন সংগঠন করবে ঠিক ছিল, তাই হবে। কিন্তু আইসিসি-র নতুন চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। ওটার জল সম্ভবত মধ্য জুন পর্যন্ত গড়াবে।
আইসিসিতে দশটি পূর্ণ সদস্য দেশ, বিশেষ কিছু দেশ ও চেয়ারম্যান-সহ ভোট আছে মোট ১৭। পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের ডিরেক্টর প্রকাশ্যে সৌরভকে সমর্থন জানিয়ে রেখেছেন। ডেভিড গাওয়ার ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা না হলেও দিনের শেষে তিনি ডেভিড গাওয়ার। তিনি যদি বলেন আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে সৌরভ আদর্শ হবেন, তার একটা প্রভাব ভোটে পড়তে বাধ্য। সব শেষে ভারতের বিশ্বক্রিকেটে প্রতিপত্তি। ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট তিনি যে-ই হোন না কেন, আইসিসিতে আসবেন ঠিক করলে রোখা মুশকিল। সৌরভ হলে তো আরওই মুশকিল। ক্রিকেট সার্কিটে অনেকের বেশ চমকপ্রদই লাগছে খেলোয়াড়জীবনের অনেকটা সময় যিনি প্রতিষ্ঠান বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কথায় কথায় বিদ্রোহ করেছেন। শচীন-রাহুলদের মতো তথাকথিত গুডবয় ছিলেন না। সেই তাঁকেই কি না বিশ্বক্রিকেটের প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার জন্য আগাম রেড কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে এ তো স্বপ্নের মতো। আর বাস্তব হল প্রকল্পটা যতই আকর্ষণীয় আর ঝাঁ চকচকে হোক না কেন, শেষপর্যন্ত সৌরভ আইসিসি প্রধান হতে আগ্রহ নাও দেখাতে পারেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় বোর্ড প্রধানের পদ যদি প্রধানমন্ত্রীর হয়, আইসিসি প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। টেকনিক্যালি ক্রিকেট ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ কর্তা কিন্তু আসলে তাকে তাকিয়ে থাকতে হয় ভারতের দিকে। এমন নয় যে সৌরভ রাজি হলেন আর ভোটে জিতে গেলেন। অনেক লবি করা এবং নেপথ্য নাটকের সুযোগ তার পরেও থাকবে। তবে এটুকু বলা যায়, আপাতত তিনি ফেভারিট। আর সেটা অগ্রাহ্য করতে পারেন এই ভাবনা থেকে যে ভারতীয় বোর্ডের মেয়াদ শেষ করলে আবার আমার আইসিসিতে আসার সুযোগ থাকবে। আগের সেই নিয়ম নেই যে, এক একটা দেশ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রধান হবে। সুতরাং, এখনকার মতো তাঁর হয়ে ক্যানভাসিং জোরদার হলেও অত্যন্ত লোভনীয় বলটা হয়তো প্যাডে খেলতে বাধ্য হবেন। সৌরভ নিজে এ ব্যাপারে কিছু বলতে চান না। টেক্সট মেসেজের জবাবে উত্তর নেই। কিন্তু যত দূর মনে হচ্ছে, শক্তিশালী ভারতীয় বোর্ড প্রধানই থেকে যাবেন। সেটাই হবে তাঁর পছন্দ। আর তিন নম্বরটা? ওটা সর্বাত্মক ধোঁয়াশা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.