সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:মাত্র দু’ সপ্তাহ আগেই তিনি হারিয়েছেন সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে। সেই ভয়ানক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন রনজি ট্রফি (Ranji Trophy) ম্যাচে। দাঁতে দাঁত চেপে তাঁর সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই বিষ্ণু সোলাঙ্কির জীবনে নেমে এল ফের বিপর্যয়। বাস্তবের হিরো বিষ্ণু সোলাঙ্কি (Vishnu Solanki) পিতৃহারা হলেন। তবুও ক্রিকেট মাঠের যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়াননি তিনি। চলে যাননি খেলার ময়দান ছেড়ে। ড্রেসিং রুমে বসে দেখেছেন বাবার শেষকৃত্য। নীরবে, নিভৃতে চোখের জলও হয়তো ফেলেছেন। কিন্তু তাঁর সেই ভেঙে পড়ার ছবি দেখল কোথায় বহির্বিশ্ব! সবাই তো দেখল রক্তমাংসের এক ক্রিকেটারের ইস্পাত কঠিন মনের জোর। যিনি নিজের বিপর্যয়েও ভুলে যান না তাঁর কর্তব্য। বিষ্ণু সোলাঙ্কি দেখিয়ে দিলেন, কন্যা ও পিতৃশোক নিয়েও তিনি তাঁর কর্তব্যে অটল।
জীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই। বরোদার মিডল অর্ডার ব্যাটার ১২ ফেব্রুয়ারি হারিয়েছেন নবজাতক কন্যাকে। কিন্তু পিতৃত্বের আনন্দ উপভোগ করার আগেই তছনছ হয়ে যায় তাঁর পরিবার। শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিষ্ণুকে ছেড়ে চলে যায় বহুদূরে। তার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে বিষ্ণু সোলাঙ্কি ফিরে আসেন তাঁর রাজ্য দলের হয়ে রনজি ট্রফি খেলতে। বাধ্যতামূলক নিভৃতবাস শেষ করেই বুকে পাথর চাপিয়ে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে যান তিনি। তারপরেই ক্রিকেটবিশ্ব দেখে এক অদম্য লড়াই। ১৬১ বলে ১০৪ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন বরোদার এই ব্যাটার। মারেন ১২টি চার। তাঁর এই লড়াইয়ের কথা শুনে শ্রদ্ধায় মাথায় ঝোঁকায় ক্রিকেট মহল থেকে আমজনতা। এমন মরিয়া লড়াই করে তাঁর দলকে প্রথম ইনিংসে ৫০০ রানের গণ্ডি পার করান বিষ্ণু।
কিন্তু এতেও তাঁর দুঃখের শেষ হল না। ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবাও তাঁকে ছেড়ে পরলোকে চলে গিয়েছেন। রনজি ম্যাচের চতুর্থ দিনের সকালে এই খবর জানতে পারেন বিষ্ণু। হৃদয়ে প্রবল ধাক্কা দিলেও তাঁকে দেখে বোঝা যায়নি শোকসন্তপ্ত তিনি। কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়েই মাঠে নেমে পড়েন। ওই মাঠই তো তাঁর সব। এখানে নামলেই মেলে শোক থেকে নিষ্কৃতি। সব ভুলে থাকতে পারেন। সারাদিন মাঠে দলের সমস্ত কর্তব্য পালন করেন। ম্যাচ শেষে তাঁর সতীর্থরা জানতে পারেন কী নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে সারাদিন মাঠে ছিলেন বিষ্ণু। অথচ সতীর্থরা এর বিন্দুবিসর্গ টের পাননি। স্বভাবে অন্তর্মুখী বিষ্ণু অসাধারণ ফিল্ডিং করেন, দুরন্ত ডাইভ দিয়ে নিশ্চিত একটি চারও বাঁচান।
বরোদার অধিনায়ক কেদার দেওধর বিষ্ণুর প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা কেউই জানতাম না ওর বাবা আর নেই। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে বসে বাবার শেষকৃত্য দেখেছে বিষ্ণু। ওর পরিবার থেকে ভিডিও কল করে ওকে বাবার সৎকার দেখানো হয়। এক কোণায় চুপচাপ বসে ও সব দেখছিল।”
বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব অজয় লেলে জানান,”আমরা জানতে পারি বিষ্ণুর বাবা মারা গিয়েছেন। টিমের ম্যানেজারকে আমরা সেই খবর দিই। কিন্তু বিষ্ণু জানিয়ে দেয় ও ফিরে আসবে না। ও খেলা শেষ করবে। টিমের সঙ্গেই থাকবে। খেলা এবং দল- দুইয়ের প্রতিই ওর অসাধারণ দায়বদ্ধতা।”
অধিনায়ক, রাজ্য সংস্থা তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, তিনি, বিষ্ণু সোলাঙ্কি নিশ্চুপ। একটি শব্দও বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। বিষ্ণুর হয়ে কথা বলেছে তো তাঁর ব্যাট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.