সৌরাশিস লাহিড়ী: বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে একটা কথা খুব শুনে আসছি- টেস্ট ক্রিকেট নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে! সেই ধারণা যে কতটা ভুল সেটা চলতি অ্যাসেজের প্রথম টেস্টই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
এজবাস্টন টেস্টের পঞ্চম দিন দারুণ একটা লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল ক্রিকেটবিশ্ব। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষপর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসল অস্ট্রেলিয়া। অসাধারণ একটা ‘ক্যাপ্টেন্স নক’ উপহার দিল প্যাট কামিন্স। হাতে ২ উইকেট নিয়ে নাথান লায়নকে সঙ্গী করে অজি অধিনায়কের এই চোয়ালচাপা লড়াইটা অ্যাসেজের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শেষমেশ ২ উইকেটে অস্ট্রেলিয়া জিতল বটে, তবে ইংল্যান্ডের লড়াইকে খাটো করে দেখার জায়গা নেই।
টেস্ট যে ক্রিকেট মঞ্চে ‘আসল পরীক্ষা’র জায়গা, তা আরও একবার প্রমাণিত। এর জন্য ক্রিকেট অনুরাগীদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ইংল্যান্ডের কাছে। বেন স্টোকসরা লাল বলের ফর্ম্যাটে যে ‘বাজবল’ স্ট্র্যাটেজির আমদানি ঘটিয়েছে, তার হাত ধরেই বিবর্তন ঘটেছে টেস্ট ক্রিকেটের। প্লেয়ার এবং টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া না থাকলে এমন অকুতোভয় ক্রিকেট খেলা যায় না। ইংল্যান্ড সেটাই করে দেখাচ্ছে। এবং সেই ‘বাজবল’-এর প্রতিষেধক হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার এই অর্থোডক্স ক্রিকেট, সেটাও কিন্তু নজর কেড়ে নিল। এমন একটা দ্বৈরথ দেখার আশাতেই তো ক্রিকেট অনুরাগীরা অপেক্ষা করেন। এজবাস্টনের গ্যালারি দেখুন, সেই আকর্ষণে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এটাই টেস্ট ক্রিকেটের মাহাত্ম্য। টি-টোয়েন্টির ভরা জোয়ারেও তা চোখের আরাম এনে দিতে পারে।
টেনিসে যেমন জকোভিচ বনাম নাদালের দ্বৈরথ ঘিরে আলাদা উন্মাদনা রয়েছে, অ্যাসেজের মঞ্চে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈরথও ঠিক তেমনি – কৌলিন্য আর শ্রেষ্ঠত্বের সংঘাত। এজবাস্টনের শুরুটা দেখুন। কেউ কি ভেবেছিল, প্রথমদিনেই ওইরকম অতর্কিতে চারশোর দোরগোড়ায় প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেবে ইংল্যান্ড। জো রুট, জনি বেয়ারস্টো যে ব্র্যান্ড অফ ক্রিকেট প্রথম ইনিংসে খেলে গেল, তা অভূতপূর্ব। এবং তার পালটা ফিরিয়ে দিল উসমান খোয়াজাও। ওর ১৪১ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটার মূল্য কিন্তু অপরিসীম। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৬৫ রানের অসাধারণ একটা ইনিংস খেলল। আর একজনের কথা না বললেই নয়। নাথন লিয়ন। ৩৫ বছরের অজি স্পিনার দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট নিল। পরে কামিন্সের সঙ্গে ১৬ রানের অপরাজিত যে ইনিংসটা খেলল, সেটা তো অমূল্যবান। অস্ট্রেলিয়ার এই দুরন্ত জয়ে লিয়নের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।
পঞ্চমদিনের শুরুতে একে বৃষ্টি, যার জেরে খেলা শুরু হতে দেরি হল বেশি অনেকক্ষণ। তারপর পেণ্ডুলামের মতোই দুলছে ম্যাচের ভাগ্য, একটা সময় মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড, যে কেউ জিততে পারে। খোয়াজা এবং ক্যামেরন গ্রিন (২৮) যখন ব্যাট করছিল, মনে হচ্ছিল খুব সহজেই জিতবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গ্রিন, খোয়াজা আউট হওয়ার পরেই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে যায়। ইংল্যান্ড তখন জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু কামিন্স জয় আর ইংল্যান্ডের মাঝে পাহাড় হয়ে দাঁড়াল। অস্ট্রেলিয়াকে দুর্ধর্ষ একটা জয় এনে দিয়ে বুঝিয়ে দিল কেন ব্যাগি গ্রিনধারীরা টেস্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আনন্দে আত্মহারা প্যাট কামিন্স তো বলেই দিলেন, “হ্যাঁ। আমরাই এক নম্বর।”
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড – ৩৯৩/৮ (ডিক্লেয়ার) ও ২৭৩।
অস্ট্রেলিয়া – ৩৮৬ ও ২৮২/৮। (খোয়াজা ৬৫, কামিন্স ৪৪ ন.আ., ব্রড ৩-৬৪, রবিনসন ২-৪৩)।
অস্ট্রেলিয়া জয়ী ২ উইকেটে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.