সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুভাষ ভৌমিকের বক্তব্য, “কীসের ঘরের ছেলে? মনা আমি দু’জনেই পেশাদার কোচ। কেউ ঘরের ছেলে নয়।” মনোরঞ্জন বলছেন, “ওঁর (সুভাষ) কথা বলতে পারব না। আমি ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে ছিলাম। এখন ত্যাজ্যপুত্র!” শুক্রবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ কি একজন অপমানিত ইস্টবেঙ্গলীর? নাকি ত্যাজ্যপুত্রের? মনোরঞ্জন এ নিয়ে কম কথা বলতে পারলে খুশি হন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে যখন ক্লাবের ৯৯তম প্রতিষ্ঠাদিবস পালিত হচ্ছিল, ময়দান থেকে তখন বহুদূরে ‘ঘরের ছেলে।’ বিকেলে মধ্যমগ্রামে প্র্যাকটিস ছিল। তাই নাকি আসতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের আগে পাছে তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়, তাই বিতর্ক নামক বলকে স্কোয়ার পাস করে দিলেন। তাতেও কি শুক্রবারের হাই ভোল্টেজ ম্যাচ থেকে দূরে রাখা যাবে সুভাষ-মনোরঞ্জন দ্বৈরথ?
ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্রতিপক্ষর বেঞ্চে বসে মনোরঞ্জন ফুটবলারদের তাতাচ্ছেন, প্রতিপক্ষকে হারাতে। কোনও ইস্টবেঙ্গলীর পক্ষে এ সব কল্পনা করাও বেদনার। অথবা গোল না পেলে যদি ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি থেকেই পাল্টা চিৎকার ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে? “আমার বিরুদ্ধে গ্যালারির চিৎকার নতুন নয়। ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময় আমার বিরুদ্ধে গ্যালারিতে চিৎকার উঠছে ভাবতে পারতাম না। ২০০৮-এ যখন কোচ, তখন কিছু কর্তার ভাড়া করা লোক গ্যালারি থেকে আমায় গালিগালাজ করত। বুঝে যাই, ময়দান আর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা বদলে গিয়েছেন। তাই শুক্রবার আমার বিরুদ্ধে গ্যালারি থেকে আওয়াজ উঠলে অবাক হব না।’’
টানা ৮ বার কলকাতা লিগ পাওয়ার পর ইস্টবেঙ্গলের কাছে লিগ পাওয়া নতুন নয়। প্রত্যাশার চাপ আছে। গত মরশুমে সুভাষ-খালিদ নাটকের পর এবার স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন সুভাষ ভৌমিক। যদিও নাটকীয় ভাবে এদিন প্র্যাকটিসের পর কোচ বাস্তব রায়কে প্রধান চরিত্র বলে এগিয়ে দেন। কিন্তু দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা থেকে মিডিয়ার সঙ্গে অহি-নকুল সম্পর্ক তৈরি, সব তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ঠিকভাবে প্র্যাকটিসের ছবি তুলতে না দেওয়া থেকে নানারকম বিধিনিষেধ তো তাঁরই ভাবনা। লিগ অভিযান শুরুর আগেরদিন প্র্যাকটিসে জানতেন না, বিদেশি স্টপার কাশিমকে খেলাতে পারবেন কি না। পরে ছাড়পত্র আসায় সই হয় তাঁর। বর্ষসেরা আমনার খেলতে অসুবিধা নেই। কিন্তু তাঁকে নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখলেন সুভাষ। “ওকে খেলানোর ইচ্ছে নেই। তবে তৈরি হওয়ার জন্য ম্যাচ প্র্যাকটিসের বিকল্প কিছু নেই। ২০-২৫ মিনিট খেলাতে পারি। গোল না পেয়ে দল চাপে পড়েছে বলে ওকে নামাব, তা নয়। ম্যাচের মধ্যে রাখার জন্যই খেলাব। মাথায় রাখতে হচ্ছে, কর্তারা খরচ করে দল গড়েছেন। তাই ওঁদের মতামত জরুরি।”
উল্টোদিকে দল গড়া নিয়ে মনোরঞ্জন কিছুটা হতাশার সুরেই বলছিলেন, “শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ফুটবলার রিক্রুট করেছি।” হাতে দুই বিদেশি। রিচার্ড আর গোলকিপার ছাড়া সব পজিশনে খেলতে পারা ড্যানিয়েল বিদেমি। যাঁকে মিডফিল্ডে খেলাচ্ছেন মনোরঞ্জন। তাঁর কাছে একটাই ভাল খবর, অসীম বিশ্বাস ফর্মে। প্রতিপক্ষ কোচের নাম মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সুভাষ বললেন, “অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, ওর পকেটে একটা জাতীয় লিগ।’’ বিপক্ষ কোচ হিসেবে সুভাষ কতটা গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা করা হলে মনোরঞ্জন বললেন, “সুভাষদা খেললে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উনি মাঠের বাইরে থাকবেন। যা বোঝানোর ফুটবলারদের বুঝিয়েছি। মাঠের ভেতর কোচ কী করতে পারে? আমি ফুটবলার হলে বলতাম গোল করতে দেব না। মাঠের ভেতর সব কিছুই ফুটবলারদের হাতে।” ড্রেসিংরুমে দুটো স্লোগান সেট করে ফেলেছেন সুভাষ। ‘আই’ আর কুইট কেটে ‘উই’ আর ‘ডু ইট।’ সত্যিই কি এ সব মাথায় নিয়ে শুক্রবার লিগের দৌড় শুরু করতে পারবে ইস্টবেঙ্গল? প্রতিপক্ষ বেঞ্চে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য? চাপ তো থাকবে মনোরঞ্জনেরও। তিনি ত্যাহ্যপুত্র নন, ঘরের ছেলে তা বোঝাতে। সে সুভাষ যতই হাল্কা করে দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.