স্টাফ রিপোর্টার: খবরটা ছড়িয়ে পড়ল মুহূর্তের মধ্যে। তারপর শুরু হয়ে গেল বিজয় উৎসব। যেন লিগ জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, ট্রফি বলতে গেলে ঘরে ঢুকেই গিয়েছে। গত আট বছর ঘরোয়া লিগ না পাওয়ার যন্ত্রণা মনের মধ্যে কুরে কুরে খেয়েছে। এবার শাপমুক্তির পালা। তাই ২৪ ঘন্টা আগে থেকেই যেন আনন্দের জোয়ারে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছে মোহনবাগানিরা। গঙ্গাপারের তাঁবুতে বসে মহামেডানের কাছে ইস্টবেঙ্গল হারার পর এক মোহনবাগান সদস্য বলেই ফেললেন, ‘লিগ আমাদের ঘরে চলেই এসেছে। তাই বুধবার আমরা নিজেদের তাঁবুতেই বিজয় উৎসব পালন করব।” এখন পয়েন্টের নিরিখে যে জায়গায় ডিকা-হেনরিরা দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে দরকার স্রেফ কাস্টমসকে হারানো। তাহলেই মোহনবাগান পতাকা তুলে দিতে পারে। ড্র হলে একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে ঠিকই। সেক্ষেত্রে শেষম্যাচেও মহামেডানের থেকে এক পয়েন্ট পেতে হবে মোহনবাগানকে। তাই আজ জিতেই সবুজ আবিরে নিজেদের রাঙিয়ে তুলতে চায় মোহনবাগানিরা।
এমন একটা ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়েও তার কোনও আভাস নেই মোহনবাগানে। সকালে না দেখা গেল ক্লাবের কোনও বড় কর্তাকে। না চোখে পড়ল সমর্থকদের। আসলে সকালের সঙ্গে সন্ধ্যে আবহতে যে ব্যাপক বদল। আগে ছিল কাস্টমসকে হারালেও নিশ্চিত লিগ জয় বলা যাবে না। কিন্তু সন্ধ্যেতে ব্যাপারটা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। শংকরলাল টিভিতে বসে দেখেছেন মহামেডান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ। তারপরও শোনা গেল সকালের মতোই সেই একই কন্ঠস্বর। যেখানে তিনি বললেন, “ফুটবলার জীবনে আমি দিনের চেয়ে অন্ধকার বেশি দেখেছি। তাই যতক্ষণ না ট্রফি হাতে উঠছে ততক্ষণ কিছু বলা ঠিক হবে না। সঞ্জয় সেনের সঙ্গে সহকারীর কাজ করেছি। তখনও দেখেছি হাতের মুঠো থেকে কীভাবে ট্রফি বেরিয়ে গিয়েছে। সুতরাং বুধবারের ম্যাচ জিতলে বলতে পারব কিছু একটা করা গেল। নিশ্চিত ট্রফি তুলতে পারলাম।” কাস্টমস এবার ৭ ম্যাচ খেলে এখনও পর্যন্ত একটাও ম্যাচ হারেনি। পয়েন্ট পেয়েছে ১৩। তার ওপর তাঁরা রুখে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের মতো দলকে। সুতরাং সেই দলকে সহজে হারানো সম্ভব নয়। সেকথা মেনে নিয়ে শংকরলাল বলছিলেন, “গত ১৩-১৪ বছর ধরে কাস্টমস দলের কোচ হলেন রাজীব দে। এই দলকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। সেই দলকে হারানো সহজ হবে না।” কাস্টমস শুরু থেকেই চেষ্টা করবে নিজেদের রক্ষণে জঙ্গল বানিয়ে রাখতে। যাতে গোল করতে গেলে বারবার বাধা পান ডিকা-রা। মেনে নিলেন শঙ্করলাল। “জানি ওরা পেনাল্টি বক্সের সামনে জঙ্গল বানিয়ে রাখবে। গোলে শট নিতে দেবে না। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসতে হয় তাও জানে ছেলেরা।” বলেই ফেললেন বাগান কোচ। তবে আশার কথা শুনিয়ে গেলেন ডিকা। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “আজ জিতে লিগ জয় করতে পারলে মেয়েকে এই জয় উৎস্বর্গ করব। এতদিন আই লিগ বা ঘরোয়া লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছি। ভারতে এসে কখনও ট্রফি জিতিনি। কাল সেই অন্ধকার ঘোচাতে চাই।”
কাস্টমস কি ভাবছে? তাদের দলকে ঘানা ব্রিগেড বললেও ভুল বলা হবে না। দলে আছে চারজন বিদেশি। তারমধ্যে তিনজন হলেন ডিফেন্সে কানে, মাঝমাঠে জন এমপং, ও আক্রমণাত্মক হাফ থিও ঘানার। একমাত্র ফরোয়ার্ডে খেলা স্ট্যানলি হলেন নাইজেরিয়ান। কাস্টমস দলের প্রধান কর্তা কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ফুটবলারদের জানিয়ে দিয়েছেন, মোহনবাগানকে হারাতে পারলে এক লাখ টাকা আর ড্র করলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কোচ রাজীব দে জানিয়ে দিলেন, “প্রথম ২০-২৫ মিনিট আমার কাছে খুব ভাইটাল। হেনরি-ডিকাদের গোল করার রাস্তা তৈরি করে দেয় দুই সাইডব্যাক। এদের দু’জনকে রুখতে চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.