কার্লেস কুয়াদ্রাত।
দুলাল দে: সিনিয়ররা পারছেন না। জুনিয়ররা কিন্তু ইতিহাসের দোরগোড়ায়। মানে, শনিবার পাঞ্জাব এফসিকে হারালেই রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগে (RFDL) চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। ৮টি অঞ্চলের মোট ৫৬টি দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়। ফলে এহেন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই জুটবে জুনিয়র পর্যায়ে দেশের সেরা ক্লাবের তকমা। এটাই বা কম কীসে! বার্সেলোনা থেকে ইস্টবেঙ্গলের চিফ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat) দাবি, জুনিয়র পর্যায়ের এই সাফল্য পুরো কোচিং সিস্টেমের ফসল। আর এই সাফল্য যতদিন যাবে ততই ধরা দেবে ইস্টবেঙ্গলের ঝুলিতে। নবি মুম্বইতে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের ডেভেলপমেন্ট লিগের শিরোপা নির্ণায়ক ম্যাচের আগে বার্সোলোনায় ফোনে ধরা হল কার্লেস কুয়াদ্রাত-কে।
প্রশ্ন : ফাইনাল ম্যাচের আগে ভিডিও কলে ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র দলকে কোনওভাবে উদ্বুদ্ধ করলেন?
কুয়াদ্রাত : প্রতি মুহূর্তে কোচ বিনো জর্জের সঙ্গে টেক্সটে কথা হচ্ছে। ও জানে, দলকে কীভাবে খেলাতে হবে। আমরা প্রতিমুহূর্তে ফোনের মাধ্যমে টাচে থাকি। ফলে ফাইনালে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে হবে, তার ব্লু-প্রিন্ট বিনো জর্জ তৈরি করে ফেলেছে। এই দলটার ফল আমরা পরের আইএসএলে পাব।
প্রশ্ন : কীভাবে?
কুয়াদ্রাত : ম্যানেজমেন্টকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, যে ফুটবলার আমার দলের প্রথম একাদশে একশো শতাংশ নিশ্চিত থাকবে, একমাত্র সেই ফুটবলারের পিছনেই টাকা নিয়ে দৌড়নো যাবে। নাহলে আমার ডেভেলপমেন্ট টিমের ফুটবলাররাই ভালো। এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গলে পুরো কোচিং সিস্টেমটা একটা পিরামিডের মতো। সিনিয়র দল পিরামিডের মাথায় বসে আছে। বিভিন্ন স্তরের জুনিয়র দল সেই পিরামিডের নিচের তলার একেকটা ভিত। ক্লাবের জুনিয়র ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম যে ঠিকমতো হচ্ছে, তারই প্রমাণ রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগের ফাইনালে খেলা।
প্রশ্ন : আপনি নিজেই যখন প্রসঙ্গটা তুললেন তখন জিজ্ঞাসা করি, আইএসএলে এই নিচের দিকে থাকার তকমাটা কবে ঘুচবে বলতে পারেন?
কুয়াদ্রাত : এই মরশুমে আমি যখন প্রথমদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বসেছিলাম, তখন প্রচুর প্রশ্ন উড়ে এসেছিল, কী দেখে আমি ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়েছিলাম। টানা কয়েক বছর ধরে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য নেই। মাঠের বাইরে ঝামেলা। সব মিলিয়ে চারিদিকে একটা হতাশার ছাপ। সেইখান থেকে ডুরান্ডে রানার্স। সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন। এখন বলুন তো, একজন লাল-হলুদ সমর্থকও আশা করতে পেরেছিলেন যে, আমরা সুপার কাপ জিততে পারি? কেউ ভেবেছিলেন যে, আমরা মোহনবাগানকে হারাতে পারি? সবই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সমস্যাগুলোও ভাবুন। প্রতিটা দলে দীর্ঘ চুক্তিতে ভালো ভারতীয় ফুটবলার রয়েছে। সেখানে আমাদের পক্ষে জাতীয় দলের কোনও ভালো ফুটবলারকে সই করানো সম্ভব নয়। যাও কাউকে ট্রান্সফার ফি দিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে, তাদের বেতন শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে। তাই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে ঠিক হয়েছে, একশো ভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনও ফুটবলারের পিছনে বেশি টাকা খরচ করা হবে না।
প্রশ্ন : পরের মরশুমেও তো ভালো ভারতীয় ফুটবলার পাবেন না। সবাই তো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কোনও না কোনও ক্লাবে যুক্ত?
কুয়াদ্রাত : আমাদের দলটা ভাবুন। আমাদের দলেও কিন্তু ৫ জন জাতীয় দলের ফুটবলার রয়েছে। তিনজন সিনিয়র দলে। নাওরেম, নন্দকুমার এবং লালচুংনুঙ্গা। এবার অনূর্ধ-২৩ জাতীয় দলের দিকে তাকান, রয়েছে আমাদের পিভি বিষ্ণু এবং প্রভসুখন গিল। এর পাশাপাশি জুনিয়র ডেভলপমেন্ট দল থেকে ১২ জন জুনিয়র ফুটবলারকে সিনিয়র দলে নেওয়া হয়েছে। ফলে আমাদের ভারতীয় রিক্রুট কিন্তু খারাপ নয়। আর এএফসিতে খেলব বলে ইমামি আমাদের বাজেট কিছুটা বাড়িয়েও দিয়েছে। ফলে খারাপ দল হবে না।
প্রশ্ন : সুপার কাপ জিতে সিনিয়র দল এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলবে। আর রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগের ফাইনালে উঠে জুনিয়ররা খেলবে আন্তর্জাতিক ‘নেক্সট জেন’ কাপে।
কুয়াদ্রাত : আমিও তো সেটাই বলছি। হয়তো একটু দেরিতে শুরু হয়েছে। সব কিছু সাজিয়ে নেওয়ার জন্য একটু সময় দিতেই হবে। তারপর দেখবেন ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দৌড়চ্ছে। এই মরশুমেই দেখুন না, কত বদল হয়েছে। এই মরশুমে জয়ের হার ২৬ থেকে বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। এবারই ইস্টবেঙ্গল সর্বোচ্চ ২৪ পয়েন্ট পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গল গোল করেছে ২৭টা। ক্লিনশিট থেকেছে ৭টা ম্যাচে।
প্রশ্ন : পরের মরশুমে কোথায় প্রি সিজন করবেন ঠিক করেছেন?
কুয়াদ্রাত : পুরোটাই বাজেটের উপর নির্ভর করছে। কাতারে হতে পারে। থাইল্যান্ডে হতে পারে। আবার ভারতের অন্য কোনও প্রান্তেও হতে পারে। সব রকম আলোচনা চলছে।
প্রশ্ন : ঠিক কতদিনের প্রি সিজন হলে আপনি খুশি হবেন?
কুয়াদ্রাত : চার সপ্তাহ হলেই যথেষ্ট। তার বেশি একটুও দরকার নেই।
প্রশ্ন : রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের লিগ ফাইনালে আগে একটু অন্য প্রশ্ন করছি।
কুয়াদ্রাত : বলুন।
প্রশ্ন : এই মরশুমে মোহনবাগান পেল লিগ-শিল্ড। আর মুম্বই সিটি পেয়েছে কাপ। আপনি মনে করেন, আইএসএলের দুটো যোগ্য দল হিসেবেই এরা সব কিছু পেয়েছে?
কুয়াদ্রাত : দেখুন, আমি পছন্দ করি আর নাই করি। বাস্তবটা স্বীকার করতেই হবে। আমার কিছু বলতে হবে না। আপনি গত কয়েক বছরের ভারতীয় ফুটবলের তথ্য দেখলেই বুঝতে পারবেন, মোহনবাগান আর মুম্বই হচ্ছে এই মুহূর্তে দেশের সেরা দুটো দল। বলতে পারেন, ভারতীয় ফুটবলের বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ। তাই এই দুটো দলই সব পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.