কৃশানু মজুমদার: মাঝমাঠের দখল নিতে, গোলের সুযোগ তৈরি করতে, প্রতিপক্ষকে থামাতে এবং সমর্থকদের মন জিততে চলে এসেছেন।
আনন্দের আতিশয্যে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়া বেঁধেছেন তাঁকে নিয়ে।
কে তিনি? তিনি সল ক্রেসপো (Saul Crespo)। ওড়িশা থেকে এবার তাঁর নতুন ঠিকানা কলকাতা। জার্সির রং-ও বদলেছে তাঁর। নতুন মরশুমে লাল-হলুদ জার্সিতে মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যাবে তাঁকে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ অঙ্কুরে বিনষ্ট করে, সতীর্থদের জন্য গোলের গন্ধ মাখা পাস বাড়াবেন তিনি। এই আশায় বুক বাঁধছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা।
সল ক্রেসপো নিজে কী বলছেন? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে সুদূর স্পেন থেকে বললেন, ”গতবছর ওড়িশায় সই করেছিলাম। ভারতে সেটাই ছিল আমার প্রথম ক্লাব। আইএসএলে সেবারই ছিল আমার প্রথম বছর। এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব পাওয়ার পরে আর একমুহূর্তও ভাবিনি। সই করে দিই চটপট। ইস্টবেঙ্গল ঐতিহাসিক এক ক্লাব। প্রচুর সমর্থক। ওরা আবেগপ্রবণ। এরকম সমর্থকদের সামনে খেলতেও ভাল লাগে।”
স্পেনে ক্রেসপোর বাড়ি পনফেরাদায়। পরিবারে দু’ জন ফুটবল খেলেন। সল ক্রেসপোর ভাই অস্কার খেলেন স্পেনের চতুর্থ ডিভিশনে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রড্রি-কে আদর্শ মানেন সল ক্রেসপো। নিজে মাঝমাঠের খেলোয়াড় বলেই হয়তো সল ক্রেসপোর পছন্দের ফুটবলার রড্রি।
কার্লেস কুয়াদ্রাতের হাতে এবার উঠেছে দলের রিমোট কন্ট্রোল। মাঝমাঠের ব্রিগেডিয়ার সল ক্রেসপো। লাল-হলুদের নতুন কোচ সম্পর্কে ক্রেসপো বলছেন, ”ব্যক্তিগত ভাবে কুয়াদ্রাতকে আমি চিনি না। তবে বারকয়েক ওঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কুয়াদ্রাতের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, ইস্টবেঙ্গলের কোচ হওয়ার জন্য কুয়াদ্রাতই আদর্শ ব্যক্তি।”
ওড়িশা এফসি-তে খেলার সময়ে ২১ নম্বর জার্সি পরতেন সল ক্রেসপো। তাঁর পছন্দের জার্সি-নম্বর ২১ এবং ২৩। স্পেন থেকে ভারতে পাড়ি দিয়ে প্রথম বছরেই ওড়িশা এফসিকে সুপার কাপ দিয়েছেন ক্রেসপো।
কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব যে ট্রফি বুভুক্ষু। দীর্ঘদিন কোনও ট্রফি আসেনি লেসলি ক্লডিয়াস সরণীতে। প্রতিবার আইএসএল আসে আর ব্যর্থতা সঙ্গী হয়। এটাই যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। সমর্থকরা ব্যথিত হন। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আবার শপথ নেয় ইস্টবেঙ্গল। এবার কী হবে? আসবে কি কাঙ্খিত ট্রফি? সমর্থকরা কি দিনান্তে হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন? মরশুম শুরু হওয়ার আগে সল ক্রেসপো সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বলছেন, ”গতবছর ওড়িশাকে সুপার কাপ দিয়েছি। আশা করি ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে একাধিক খেতাব জিততে পারব।”
স্প্যানিশ ফুটবলের প্রসঙ্গ উঠলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় এই রাজ্য। কেউ বার্সেলোনার ভক্ত। কেউ আবার রিয়াল মাদ্রিদের জন্য বিনিদ্র রাত কাটান। এল ক্লাসিকোর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ফুটবলের মক্কাতেও। সল ক্রেসপো কোন দলের সমর্থক? ইস্টবেঙ্গলে সই করা স্প্যানিশ ফুটবলারটি বলছেন, ”সেভাবে আমি কোনও দলেরই সমর্থক নই। তবে দুটো দলের মধ্যে কোনও একটি দলকে বেছে নিতে বলা হলে আমি বার্সেলোনার হয়েই গলা ফাটাব।”
সুদূর স্পেন থেকে নতুন দেশে পাড়ি দিয়েছেন সল ক্রেসপো। তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাকিয়ে থাকেন এই দেশের সবুজ মাঠের দিকে। পরিবারের সদস্যরা প্রার্থনা করছেন ক্রেসপোর জন্য। তিনি বলছেন, ”ওরা যখনই সময় পায় তখনই আমার খেলা টিভিতে দেখার চেষ্টা করে। আইএসএল ফলো করে ওরা।”
এখনও লাল-হলুদ জার্সি পরে নামেননি তিনি। বল পায়ে মাঝমাঠও শাসন করেননি। কিন্তু সল ক্রেসপোর ইস্টবেঙ্গলে সই করার পর থেকে সমর্থকরা যেরকম ফুটছেন, তাতে বহু শ্রুত, বহু চর্চিত সেই আপ্তবাক্যই মনে আসা স্বাভাবিক। সঙ্কটময় মুহূর্ত থেকে উদ্ধারের জন্য উপযুক্ত মানুষেরই আবির্ভাব ঘটেছে ইস্টবেঙ্গলে। বাকিটা বলবে সময়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.