Advertisement
Advertisement

পাঁচ অধিনায়ককে ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব বুকিদের! বিস্ফোরণ আইসিসি-র

অধিকাংশ বুকিই ভারতীয়!

Bookie offers 5 captains to fix match, claims ICC
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:September 25, 2018 9:53 am
  • Updated:September 25, 2018 9:53 am  

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, দুবাই: ধরা যাক, আপনি ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক। অচেনা লোকজনের সঙ্গে মিশছেন। ফোন নম্বর-টম্বর দিচ্ছেন। হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট চলছে মাঝে মাঝে। আচমকাই ঘুম থেকে উঠে একদিন আবিষ্কার করলেন যে, নতুন বন্ধুর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে অদ্ভুত একটা মেসেজ এসেছে। যেখানে লেখা: কাজটাজ কিছু করবে? কেউ জানতে পারবে না। তুমি ধরা পড়বে না। উলটে তুমি-আমি প্রচুর টাকা রোজগার করব। আমরা ধনী হয়ে যাব।

ধরা যাক, আপনি নিছক ক্রিকেটার। সবে টিমে ঢুকছেন। টাকাপয়সা তেমন এখনও রোজগার করে উঠতে পারেননি। হঠাৎই একদিন খেয়াল করলেন যে, আপনার আর্থিক অবস্থার খবর বাইরের লোকের কাছে চলে গিয়েছে। তারা চেষ্টা করছে, আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার। আপনার টাকার সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিছু খবর পাচারের বিনিময়ে। ক্রিকেটে গড়াপেটা নতুন কোনও শব্দ নয়। এর আগেও ঘটেছে। ভবিষ্যতেও যে ঘটবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। কিন্তু এশিয়া কাপ যখন মধ্যগগনে, ফাইনাল যখন আর মাত্র পাঁচ দিন দূরে, গড়াপেটা নিয়ে আইসিসির নতুন বিস্ফোরণে কেঁপে গেল ক্রিকেটবিশ্ব। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ঘোষণা করে দিল যে, গত এক বছরে পাঁচজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধিনায়কের কাছে গড়াপেটার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছিল বুকিরা! শুধু তাই নয়, কী ভাবে বুকিরা তাদের কুকীর্তির অপারেশন চালায় তাও বলে দিল আইসিসি। আর এসবই হল আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগে আফগানিস্তান উইকেটকিপার আহমেদ শেহজাদকে বুকিদের যোগাযোগের চেষ্টা নিয়ে সরকারি রিপোর্ট জমা পড়ার দিন।

Advertisement

[ধাওয়ানের উচিত একাই ব্যাট করা! কেন এমন বললেন রোহিত?]

কোন কোন দেশের অধিনায়কের কাছে গড়াপেটার প্রস্তাব নিয়ে বুকিরা উপস্থিত হয়েছিল, বলেনি আইসিসি। শুধু এটা জানানো হয়েছে যে, পাঁচ জনের মধ্যে চার জন টেস্ট খেলিয়ে দেশের অধিনায়ক। আর পঞ্চম জন অ্যাসোসিয়েট দেশের। আরও বলা হল, প্রায় বত্রিশটা কেস তদন্ত করে, তিন তিনটে টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনর ভিত্তিতে খানাতল্লাশি চালিয়ে, ছ’জন সন্দেহভাজন ক্রিকেটারকে খুঁজে বার করেছে আইসিসি। পেয়েছে পাঁচ জন ক্রিকেট প্রশাসকের নাম। তারা আরও জানতে পেরেছে যে, অধিকাংশ বুকিই ভারতীয়। কিন্তু তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে গোটা বিশ্বে। সোমবার দুবাইয়ে আইসিসি হেডকোয়ার্টারে বসে পুরোটা বলছিলেন আইসিসির দুর্নীতিদমন শাখার প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল। বলছিলেন, কী ভাবে চলছে বাইশ গজে অন্ধকারের পূর্ণাঙ্গ কাহিনী। শোনা গেল, হালফিল আর পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ গড়াপেটা আর হয় না। স্পট ফিক্সিং হয়। যে স্পট ফিক্সিং বছর আটেক আগে লর্ডসগেট কাণ্ড ঘটিয়ে মহম্মদ আমেরের ক্রিকেট কেরিয়ার থেকে কেড়ে নিয়েছিল পাঁচটা বছর। মহম্মদ আসিফ আর সলমন বাটকে পাঠিয়েছিল নির্বাসনে। স্পট ফিক্সিংয়ে সুবিধে অনেক। শুধু একজনকে খুঁজতে হয়। খুঁজতে হয় মাত্র একজন ‘সফট টার্গেট’কে। যার নাম ক্যাপ্টেন!

[ময়দানে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত সিএবি-র প্রাক্তন সভাপতি বিশ্বনাথ দত্ত]

অধিনায়ককে বোঝাও। তাকে ম্যানেজ করো। তার পর তাকে আছড়ে ফেলো কলঙ্কের দুনিয়ায়।আইসিসি প্রদত্ত গড়াপেটার ইতিহাস অনুযায়ী, যে ক’জন আজ পর্যন্ত গড়াপেটায় জড়িয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশ টিমের অধিনায়ক। কারণ ক্যাপ্টেনকে হাতে রাখতে পারলে বুকিদের অনেক সুবিধে। টিমের ভেতরকার খবরাখবর পাওয়া যায়। আইসিসি চিন্তিত দুনিয়াজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়ে। যত বেশি লিগ, তত বেশি আইসিসি মহাকর্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। “মার্শালের কাজ অনেক বেড়ে গেল এখন,” বলছিলেন আইসিসি মহাকর্তা ডেভ রিচার্ডসন। এটাও শোনা গেল, হালফিলে একপেশে ম্যাচ হলেই ফোন আসতে থাকে আইসিসি কর্তাদের থেকে। উত্তেজিত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হতে থাকে- ম্যাচটা কি ফিক্সড ছিল? একটা টিম তো কোনও লড়াই-ই দিল না! দুবাইয়ে আবার এ দিন টি টেন লিগের ঘটা করে উদ্বোধন হল। ওয়াসিম আক্রম থেকে শুরু করে ডিন জোন্স যেখানে কোচ। এবং বিতর্কও বেঁধে গেল। আক্রমকে জিজ্ঞাসা করা হয়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড টি-টেন লিগে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের খেলতে দিচ্ছে না। আপনি কেন তা হলে যুক্ত হলেন? শুনেটুনে আক্রম বলে দেন, “আমি কি পিসিবির সঙ্গে জড়িয়ে? আমি পেশাদার। ভাল অফার পেলে কোচিং করাব না কেন?” ডেভ রিচার্ডসনকেও দুবাইয়ে টি-১০ লিগ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বললেন, “আমরা সব দেখেশুনেই ছাড়পত্র দিয়েছি।”

[শোয়েব মালিককে ‘জামাইবাবু’ বলে ডাকলেন ভারতীয় সমর্থক, তারপর…]

আর এতেই মিটছে না। এরপর টি টেন লিগে খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের টাকাপয়সা কোথা থেকে আসছে, তদন্ত করে দেখবে আইসিসি। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বোর্ডকে তা জানানো হবে। রিচার্ডসন পরে আরও দু’একটা কথা বললেন। বললেন, ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসে ক্রিকেটকে অর্ন্তভুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। বললেন যে, ২০২৮ অলিম্পিক্সে ক্রিকেটকে রাখার স্বপ্ন দেখছে আইসিসি। কিন্তু ক্রিকেটের দুঃস্বপ্নের দিনে স্বপ্নের কথা আর কে শুনবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement