বক্তার নাম নিগার সুলতানা জ্যোতি (Nigar Sultana)। যে সিরিজের শেষ ম্যাচে রাগে স্টাম্প ভেঙে, পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আম্পায়ারিং নিয়ে বিষোদগার করে দু’ম্যাচ নির্বাসিত হয়েছেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর (Harmanpreet Kaur), ‘টাই’ হওয়া সেই ম্যাচ খেলেছিলেন তিনিও। বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবে। যিনি ‘সংবাদ প্রতিদিন’ সাক্ষাৎকারে সাফ বলে দিলেন যে, সে দিন টিম নিয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে কোনও ভুল করেননি।
সিরিজের রেজাল্ট নিয়ে আপনাদের তো খুশি হওয়া উচিত। বাংলাদেশেও এরপর নিশ্চয়ই মহিলা ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। ভারত সিরিজের দিকে পিছন ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
সুলতানা: ঠিকই। এটা আমাদের কাছে বড় রেজাল্ট বলতে পারেন। অনেক জুনিয়র প্লেয়ার খেলেছিল টিমে, সিনিয়ররা ছিল না। এমনকী আমাদের টিমের অনেকে তো হরমনপ্রীত-স্মৃতির বিশাল ভক্ত। সেই হরমন-স্মৃতির ভারতকে হারানো, শেষে সিরিজ টাই করা, আমাদের কাছে বিশাল ব্যাপার। আশা করি, বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট এরপর এগোবে।
কিন্তু সিরিজটার গায়ে তো বিতর্কের কাদা লেগে গেল। ভারতীয় বোর্ডও বলে দিয়েছে যে, হরমনপ্রীতের শাস্তি নিয়ে আইসিসি-র কাছে আবেদন করবে না। কী মনে হয়, খেলার উত্তেজনায় হরমনপ্রীত কাণ্ডটা ঘটিয়ে বসেছেন? এটা কি সেই ধরনের ভুল, যা খেলাধুলোয় হয়েই থাকে?
সুলতানা: ঠিকই বলেছেন। উত্তেজনার বশেই এটা হয়েছে, আর খেলাধুলোয় এ সমস্ত হয়েই থাকে। কিন্তু ব্যাপারটা যদি মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, আমার কিছু বলার থাকত না কিংবা খারাপ লাগত না। আমি আমার প্লেয়ারদের তখন বলতাম যে, খেলাধুলোয় এ সব ঘটে। তাই এসবকে ভুলে সামনে এগোও। কিন্তু সেটা তো হয়নি। এখানে বলে রাখি, আমার টিমের অনেক ক্রিকেটারের কাছেও হরমনপ্রীত আদর্শ। কিংবদন্তি। ওরা হরমনপ্রীতকে সামনে রেখে এগোয়। অথচ সে দিন ওরা আমাকে এসে বলেছিল যে, হরমনপ্রীতের মতো একজন কিংবদন্তি আমাদের সঙ্গে কী করে ওই কাজটা করতে পারল? শুনে খারাপ লেগেছিল আমার। কষ্টও পেয়েছিলাম।
আপনাকে সে দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার প্রশ্ন করা হলেও বিষয়টা নিয়ে আপনি কিছুই বলেননি। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কী হয়েছিল, দেখেছি আমরা। আপনার কি কোথাও গিয়ে মনে হয়নি যে, টিম নিয়ে বেরিয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি?
সুলতানা: খেলায় কিছু জিনিস করা যায়, কিছু জিনিস যায় না। পুরস্কার বিতরণীর সময় খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাঠের বাইরে, আমরা প্লেয়াররা ছিলাম, যারা কি না একই খেলা খেলে থাকি, আর যাদের একে অন্যকে সম্মান করা উচিত। আমি আশা করেছিলাম, যা হয়েছে ভুলে হরমনপ্রীত আর স্মৃতি এসে আমাদের টিমের পিঠ চাপড়ে বলবে, ভাল খেলেছ। মহেন্দ্র সিং ধোনি বা বিরাট কোহলিকে এ জিনিস করতে দেখেছি আমি। কিন্তু সেটা যখন হল না, উল্টে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অসম্মানজনক কথা বলে গেল হরমনপ্রীত, আমি টিম নিয়ে বেরিয়ে যাই। যা হচ্ছিল, তাতে নতুন করে ঘৃতাহুতি দিতে চাইনি। কাউকে না কাউকে ব্যাপারটা শেষ করতে হত। তাই আমিই টিম নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে সেটা করি।
হরমনপ্রীতের কাজকে সমর্থন করছি না। কিন্তু তিনি আম্পায়ারিং নিয়ে যা বলেছেন, খুব ভুল কি? আমরা পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটের সাম্যবাদ নিয়ে এত কথা বলি। তা হলে পুরিষদের ক্রিকেটের মতো নিরপেক্ষ আম্পায়ার আমদানি করলেই কি সব মিটে যেত না? এত বিতর্ক তো হতই না।
সুলতানা: আমিই পাল্টা আপনাকে বরং একটা প্রশ্ন করি। একই আম্পায়াররা তো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ছিলেন, ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন, যে সিরিজ ভারত জিতেছিল। কোথায়, তখন ভারত আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ করেনি তো! আরও একটা প্রশ্ন আছে। ভারত যদি ওয়ান ডে সিরিজ জিতত, আম্পায়ারিং নিয়ে অসন্তোষ দেখাত তো? নাকি সেটা দেখানো হয়েছে, ভারত ওয়ান ডে সিরিজ জিততে পারেনি বলে? সেই হতাশা থেকে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে? উত্তরটা আপনিই দিন না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.