Advertisement
Advertisement

Breaking News

এশিয়া কাপের মেগা ফাইনালে আজ পরাক্রম বনাম আবেগ

ফর্ম ডাকছে গঙ্গা, আবেগ ডাকছে পদ্মা।

Asia Cup 2018: India to meet Bangladesh in Final
Published by: Tanumoy Ghosal
  • Posted:September 28, 2018 10:34 am
  • Updated:September 2, 2022 3:20 pm  

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, দুবাই: অতিকায় গোঁফ, কানে দুল, টাকমাথার ‘গব্বর’ বাইশ গজে কুঠার নিয়ে ঘুরলে কী হবে, এমনিতে বেশ প্রফুল্ল চরিত্রের। শত খুঁচিয়েও তাঁকে  উত্তেজিত করা যায় না। নিজের দোষকে চেপেচুপে রাখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ইংল্যান্ড সফরে ব্যর্থতার প্রসঙ্গ ভয়ে ভয়ে মিডিয়া তুললে অকপটে স্বীকার করে নেন, তিনি পারেননি। টানা তিন মাস বিলিতি ওয়েদারে কাটানোর পর দুবাইয়ের গরম সামলানো নিয়ে মজাদার উত্তর দেন। প্রসন্নচিত্তে জবাব আসে, পাপী পেটের পাল্লায় পড়ে ছোট থেকে উত্তর ভারতের বিয়াল্লিশ ডিগ্রি গরমে খেলে এমন অভ্যেস হয়ে গিয়েছে যে, দুবাইয়ের গরম বাবাজি বেকায়দায় ফেলতে পারছে না! সোজাসুজি বললে, বর্তমান ক্রিকেটারদের ঔদ্ধত্যের ছবির সঙ্গে কিছুতেই মেলানো যায় না এশিয়া কাপের সহ অধিনায়ককে।

[ভারত-আফগান টাইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে এই খুদে, শান্ত করলেন ক্রিকেটাররা]

Advertisement

কিন্তু প্রাক এশিয়া কাপ ফাইনালে আচমকা ধাওয়ান-টু’র আর্বিভাব ঘটল। রাগী ধাওয়ান নন, শ্লেষাত্মক। না, ভারত নিয়ে বিতর্কিত প্রশ্ন করা হয়নি। অত্যন্ত বিনীত ভাবে এক বাঙালি সাংবাদিক বাঁ হাতি ওপেনারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি যে এত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ করছেন, এশিয়া কাপ ফাইনাল প্রতিপক্ষ নিয়ে এত যে ভূয়সী প্রশংসার লাল কার্পেট বিছিয়ে দিচ্ছেন, হালফিলে ওরা ভারতের বিরুদ্ধে করেছে কী? দু’বছর আগের শেষ এশিয়া কাপ ফাইনালে হেরেছে। শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হেরেছে। শেষ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছে। পদ্মাপার ন্যূনতম লড়াইটা দিল কোথায়? ওই একটা প্রশ্নে যেন ফুরফুরে মেজাজ বিষিয়ে গেল শিখরের। প্রথমে চোখ ছোট করে পালটা জিজ্ঞাসা করলেন, “বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলছে কত বছর হল?” উত্তরে “আঠারো” শুনে এবার বাকিটা, “আঠারো বছর খেলে এতগুলো বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলা কি কম কৃতিত্বের? আপনারা কী ভাবে দেখেন, জানি না। আমি এ ভাবেই দেখি। জেনে রাখুন, সেই দিন বেশি দূরে নেই যখন বাংলাদেশ ফাইনাল জিতবে। টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হবে।”

কর্ণগহ্বর দিয়ে শব্দগুচ্ছ ভেতরে যাওয়ার পরেও বিশ্বাস হয় না! অধুনা ক্রিকেটবিশ্বে ভারত বনাম পাকিস্তানের উত্তেজনার চিত্রনাট্যের খুব কাছাকাছি থাকে ভারত বনাম বাংলাদেশ। ক্রিকেটের সীমানা ছাড়িয়ে আরও অনেক কিছু সমান আবহে জুড়তে থাকে। শোধ, প্রতিশোধ, অপমান, বিতর্ক। পুরনো ইতিহাস ছেড়েই দিলাম। বছর আটেক আগে শিখরের মতোই ভারতীয় ক্রিকেটের এক বিখ্যাত ‘জাঠ’ বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বেঁফাস বলে যে কী রকম জাতীয় বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন, স্মৃতি বেয়াদপি না করলে মনে থাকার উচিত। ভদ্রলোকের নাম বীরেন্দ্র শেহবাগ। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর এটাও স্মরণে থাকা উচিত শেহবাগের ‘বাংলাদেশ টেস্টে কোনও টিমই না’ বলার পরে ভারতীয় টিমকে কী ভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয়েছিল। ঠিক আছে, সে সব ছাড়ুন। কিন্তু তার পরবর্তী সময়ের উথাল পাথাল উত্তাপ? শেষ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মাকে ‘ন্যায্য’ আউট না দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিলে বেরিয়ে পড়া? কিংবা সেই বিশ্বকাপের বছরেই পদ্মাপারের ওয়ান ডে সিরিজে ভারত বধের পরে মুস্তাফিজুর রহমান-তাসকিন আহমেদের হাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাটা মুন্ডু ঝুলিয়ে দেওয়ার ধিক্কারজনক ছবি? সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসিত ভাবে যা তখন ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল? সেই আগুনে প্রতিপক্ষকে কি না আগাম টুপি খুলে সেলাম?

এ দিনও তো। শিখর বলছিলেন দু’দেশের ক্রিকেট ঘিরে উত্তেজনার পরিবেশ নিয়ে। যখন বলছিলেন, এ সবই মাঠের বাইরের ব্যাপার। মাঠে কিছু না। তখন পদ্মাপারের কিছু সাংবাদিক দেখিয়ে দিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় শুক্রবারের ভারত ফাইনাল নিয়ে কী ধরনের পোস্ট শুরু হয়েছে। পাক সেনা বধ করে এ বার ভারতীয় ঔদ্ধত্যও চূর্ণ হচ্ছে, এঁরা দেখতে চান শুক্রবারের ফাইনালে। দেশকে সমর্থন, আশাবাদ সবই ভাল। কিন্তু এঁরা এক একজন প্রবল জঙ্গি মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়ছেন ফাইনাল নিয়ে। মুশকিল হল, ক্রিকেট যেমন উদাত্ত আবেগকে পাত্তা না দিয়ে সময় সময় যুক্তি¬-শক্তিকে সঙ্গী করে হাঁটে। নারীহৃদয়ের মতো তার খেয়ালি আচরণ যেমন ধরা কঠিন। ভারতীয় ক্রিকেটও ঠিক সে রকম। সামনে এক রকম। ভেতরে ভেতরে আর এক।

দু’দিন। আফগানিস্তান ম্যাচ খেলে ওঠার পরের দু’দিন নেটে ঢুকল না ভারত! ঠিকই পড়লেন। না, ফাইনালের আগের দিনও নয়। টুর্নামেন্টের ঠাসা শিডিউল একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু সে সব সামলেও অন্তত ফার্স্ট ইলেভেনের বাইরে থাকা দু’চার জন যেতেন টেতেন সন্ধের দিকে। গরম কমলে। কিন্তু এ দিন কেউ গেলেন না। টিমের মিডিয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখে দেওয়া হল, নো ট্রেনিং শিডিউল। কেউ মাঠমুখো হবে না। যা দেখার পর বলাবলি শুরু হল, বাংলাদেশ না হয়ে পাকিস্তান হলে ভারতীয় টিম এটা করতে পারত? আর সেটা সত্যি হলে শিখর যে বাংলাদেশ নিয়ে দারুণ সব কথা বলে গেলেন, সেটাও তো ভ্রান্তিকর। এ তো পদ্মাপারকে প্রচ্ছন্ন বার্তা দিয়ে রাখা- তোদের সঙ্গে খেলার জন্য আবার ট্রেনিং সেশন লাগবে নাকি? ধুর।

শুক্রবারের ফাইনাল ভারত কোনওক্রমে হেরে গেলে, প্র্যাকটিস না করা নিয়ে কথা শুরু হবে। কিন্তু সত্যি বলতে কী, সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। খুব, খুব কম। নিঃসন্দেহে আজকের এশিয়া কাপ ফাইনালে আবেগের টিমটার নাম বাংলাদেশ। কিন্তু শুধু আবেগ দিয়ে পরাক্রমী টিমকে হারানো যায় কি? ভারতের মতো সুপার পাওয়ারের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দারুণ একটা টিম লাগে। বাংলাদেশের সেটা কোথায়? সেই টিম কোথায়?

অতীতে বহু ভারত বনাম বাংলাদেশ যুদ্ধের সাক্ষী থাকা ওপার বাংলার টিম ম্যানেজার খালিদ সুজন বলছিলেন, গত রাতে শোয়েব মালিকের অবিশ্বাস্য ক্যাচ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মোর্তাজা ধরার পর কী রকম টগবগে হয়ে গিয়েছিল পুরো টিমের ফিল্ডিং। “মাশরাফিকে প্রথম থেকে দেখছি তো। স্রেফ অনবদ্য। আমাদের দেশের রোলমডেল। হৃদয় দিয়ে ক্রিকেটটা খেলে,” বলতে শোনা যায় সুজনকে। শোনা গেল, মালিকের ক্যাচটা ধরতে গিয়ে নাকি পদ্মাপারের ম্যাশের আঙুলটা উল্টে গিয়েছিল! খুব সম্ভবত ভেঙেছে। কিন্তু মাশরাফি সে সব পাত্তা না দিয়ে ফাইনাল খেলার মরিয়া জেদ নিয়ে বসে আছেন! তার উপর পাকিস্তান ম্যাচ জেতার পর বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোন আরও তাতিয়ে দিয়েছে ম্যাশকে। প্রধানমন্ত্রী পাক জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এবার ফাইনাল জয়ের চেষ্টা করতে। বাংলাদেশ মিডিয়ার খবর, ফাইনাল দেখতে আসার নাকি তোড়জোড়ও করছেন ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী।  

কিন্তু এত কিছুর পরেও কি ট্রফি জেতা সম্ভব হবে? মাশরাফি সাংবাদিক সম্মেলনে ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, “মাশরাফি ট্রফির জন্য খেলে না। আর একটা কথা বলি টুর্নামেন্টটা সেদিনই জিতে গিয়েছিলাম যেদিন তামিম এক হাতে ব্যাট করেছিল। ” পাকিস্তান ম্যাচের নায়ক ৯৯ করা মুশফিকুর রহিমও বলে দিয়েছেন, “ভারতকে হারানো যে যায় না, এমন  নয়। আগেও তো হারিয়েছি  ভারতকে।” এটা অনস্বীকার্য যে, পরপর দুই জয়ে বাংলাদেশ ফুটছে। কে আছে, কে নেই না দেখে স্রেফ জেদ আর ইচ্ছেশক্তি দিয়ে চূড়ান্ত সীমান্ত পার করতে চাইছে। মুশফিকুর বলে দিলেন, “যুদ্ধে নেমে কে আছে, কে নেই দেখলে চলে না। যা আছে তাই দিয়ে লড়তে হয়। তাতে হয় আপনি মারবেন। নইলে মরবেন!” কিন্তু এটাও তো কঠোর বাস্তব যে, ভারত আর পাকিস্তান— দু’টো টিম এক নয়। এশিয়া কাপে ভারত বারবার দু’বার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালটা অঘটনই ছিল। আর বাংলাদেশের বর্তমান চোট-আঘাত তালিকা? মাশরাফি মোর্তাজা- আঙুলে বড় চোট। ভেঙেছে কি না কে জানে। ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলবেন। সঙ্গে আবার সর্বাঙ্গে ব্যাথা। মুশফিকুর রহিম- পাঁজরের চোট এতাটই বেড়েছে যে পুল মারতে গেলে নাকি লাগছে। পেইনকিলার খেয়ে, ভারত ম্যাচে পাঁজরে টেপ বেঁধে নামার কথা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াধ- আফগানিস্তান ম্যাচে শ্বাসকষ্টে ভুগেছিলেন। এখনও নাকি পুরো সুস্থ নন। এবং সঙ্গে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল নেই!

এর পরেও অলৌকিক রূপকথা ঘটিয়ে বাংলাদেশ ফাইনাল জিততে পারে। পদ্মাপারে ‘ক্রিকেটের মুজিবর রহমান’ হিসেবে লোকগাথায় ঢুকে যেতে পারেন মাশরাফি। কিন্তু ইতিহাস? ইতিহাস তো সে কথা বলে না। গত তেরো এশিয়া কাপের ছ’টায় জিতেছে ভারত। বাংলাদেশ একবারও জেতেনি। আর আবেগ বনাম পরাক্রমের সম্মুখসমর হয়েছে যখন? ভারতের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করুন। ব্রাজিলের দাভিদ লুইজকে জিজ্ঞাসা করুন। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে আবেগের টিমটার নাম সৌরভের ভারত ছিল। রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া নয়। ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে নেমারহীন ব্রাজিল ছিল চলমান আবেগের নাম। যে আবেগকে ১-৭ ধুলিস্যাৎ করে যায় জার্মানি। বিচারবুদ্ধি যা বলে, টুর্নামেন্টে খেলার ধরণধারণ যা বলে, তাতে আজ এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতই পারে একমাত্র ভারতকে হারাতে। আর প্রতিপক্ষ? বাস্তব বলে, তাদের জন্য শুক্রবার আবার তাই লেখা, যা বছরের পর বছর ভারত ম্যাচে তাদের ক্রিকেট ভাগ্যে নিয়ম ছিল।

পদ্মা আজ না আবার শুকিয়ে যায়!

[ বিয়ে করে ফেলেছেন সুধীর গৌতম, চমকপ্রদ স্বীকারোক্তি সুপারফ্যানের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement