সংক্ষিপ্ত স্কোর- ভারত: প্রথম ইনিংস – ৫৬৬/৮ (ডিঃ), ওয়েস্ট ইন্ডিজ: প্রথম ইনিংস – ২৪৩ (কে ব্রেথওয়েট ৭৪, ডোরিচ নট আউট ৫৭, মহম্মদ সামি -৪/৬৬, উমেশ যাদব ৪/৪৪), ওয়েস্ট ইন্ডিজ: দ্বিতীয় ইনিংস- ২৩১ (স্যামুয়েলস ৫০, ব্রেথওয়েট ৫১, অশ্বিন ৭/৮৩)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁর চোখের সামনে এভাবে ক্যারিবিয়ান দর্প চূর্ণ হবে, তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি স্যার ভিভ রিচার্ডস৷ কী ভাবছিলেন তিনি, যখন ভারতের কাছে ইনিংসে হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ? জানা না গেলেও তাঁর মানসিক অবস্থাটা বোধহয় কল্পনা করা যেতেই পারে৷ খেলা ছেড়েছেন দীর্ঘদিন৷ কিন্তু ক্যারিবিয়ান জাত্যভিমান এখনও তাঁর শিরায় শিরায় বইছে৷ সেই জাত্যভিমানের পরাজয় স্টেডিয়ামে বসে দেখাটা তাঁর কাছে চরম কষ্টের, তা না বললেও চলে৷ একটাই সান্ত্বনা কিং রিচার্ডসের৷ দেশকে হারতে হল এমন ক্রিকেটারের কাছে, যাঁকে তিনি ভীষণই পছন্দ করেন৷ তিনি বিরাট কোহলি৷
৩২৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ২৩১ রানে৷ অ্যান্টিগা টেস্ট বিরাট কোহলিরা জিতে নিলেন এক ইনিংস ও ৯২ রানে৷ একইসঙ্গে অধিনায়ক হিসাবে বিরাটের ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম টেস্ট জয়৷ প্রথম ইনিংসে ডবল সেঞ্চুরির পর টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া৷ সঙ্গে দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব৷ সন্দেহ নেই, ক্রমশ ‘বিরাট’ হয়ে উঠছেন কোহলি৷ এবং অনিল কুম্বলে৷ ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ছিল তাঁর প্রথম সিরিজ৷ তাঁর শুরুটাও দুর্দান্তই হল৷ সিরিজ শুরুর আগে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এবার ভারতীয় দলের টেস্ট সিরিজ জয়ের ব্যবধান বাড়তে পারে৷ এমনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ১৪টি ম্যাচে ভারত অপরাজিত৷ আর অ্যান্টিগাতে ভারত যে দাপটের সঙ্গে জিতল, তাতে বলা যেতেই পারে, বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভবত সফল হতে চলেছে৷
প্রথম ইনিংসে ভারতের ৫৬৬ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছিল ২৪৩ রান৷ ফলো অনের পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে হয়তো কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা৷ কিন্তু কোথায় কী! বরং ভারতের বোলারদের আক্রমণাত্মক পারফরম্যান্সের সামনে কার্যত গুটিয়েই রইলেন তাঁরা৷ প্রথম ইনিংসে ভারতের বোলিংয়ের নায়ক যদি হন মহম্মদ সামি, তা হলে দ্বিতীয় ইনিংসে নায়ক অবশ্যই রবিচন্দ্রন অশ্বিন৷ ব্যাটে সেঞ্চুরির পর বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোমর একাই ভেঙে দিলেন তিনি৷ তুলে নিলেন সাত উইকেট৷ প্রথম ইনিংসে একটিও উইকেট না পাওয়া অশ্বিনের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন৷
এমনিতে পাটা চেহারা ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামের ২২ গজের৷ ভারতীয় শিবিরের বক্তব্য, হাওয়ার জন্য সুইং নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে এখানে৷ এমনকী রিভার্স সুইংয়েরও দেখা মেলেনি৷ তারপরও প্রবল চাপ নিয়ে ব্যাট করে গেলেন ব্র্যাভো, স্যামুয়েলসরা! ফলো অনের পর ইনিংস হার বাঁচাতে যেকোনও দলই দাঁত চেপে লড়বে, এটাই দস্তুর৷ কিন্তু রবিবার খেলা শুরু হতে না হতেই ড্যারেন ব্র্যাভোকে হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ তাদের রান তখন ২২৷ ব্র্যাভোর ১০৷ আগেরদিন শেষ বেলায় ইশান্ত ফিরিয়েছিলেন ব্রেথওয়েটকে৷ তারপর স্যামুয়েলস ছাড়া আর কেউ ভরসাও দিতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে৷ তিনি করলেন ৫০ রান৷ বাকিরা ব্যর্থ৷
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এতদূরও আসত না যদি সকালে ঘণ্টা খানেক কেটে যাওয়ার পর একবার মহম্মদ সামির বলে না বাঁচতেন স্যামুয়েলস৷ সামি এই পাটা উইকেট থেকে পেস আর বাউন্স আদায় করে নিয়েছেন৷ সেরকমই একটা লাফানো বল স্যামুয়েলসের ব্যাটের ভেতরের দিকে লেগে চলে গেল ঋদ্ধিমিান সাহার গ্লাভসে৷ আউট? নানা অ্যাঙ্গেল থেকে পাওয়া ছবি দেখা হল অনেকক্ষণ ধরে৷ দেখার বিষয় একটাই, বল ঋদ্ধির হাতে যাওয়ার আগে মাটি ছুঁয়েছে কিনা৷ শেষ পর্যন্ত বেনিফিট অফ ডাউট গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে৷ বেঁচে গেলেন স্যামুয়েলস৷ ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই উইকেটটাই চাইছিল ভারত৷ স্যামুয়েলস আর ব্র্যাভো ছাড়া এই দলের কারও বেশি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই৷ তাই দেখা গেল, স্যামুয়েলসের এভাবে বেঁচে যাওয়াটা কুম্বলেরা ভালভাবে নেননি!
স্যামুয়েলস অবশ্য এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন৷ বোধহয় চাপ কাটাতেই পাল্টা মারের রাস্তায় হাঁটলেন তিনি৷ দেখতে দেখতে নামের পাশে ৩৯ রান হয়ে গেল৷ পাশে ওপেনার চন্দ্রিকার ২২৷ আর ঠিক তখনই বৃষ্টি এসে ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য৷ তবে এই বৃষ্টি যে থিতু হওয়ার জন্য নামেনি, তা অবশ্য তখনই টের পাওয়া গেল৷ লাঞ্চের তখনও চল্লিশ মিনিট বাকি৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ২ উইকেটে ৭৬৷ তখনও ভারতকে আবার ব্যাট করতে নামানোর জন্য জেসন হোল্ডারের দলের প্রয়োজন ২৪৭ রান৷ বৃষ্টি থামতেই ফের খেলা শুরু৷ এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই অশ্বিনের বলে আউট হলেন চন্দ্রিকা (৩১)৷ ব্ল্যাকউড এলেন আর গেলেন৷ তাঁকে ফেরালেন সেই অশ্বিন৷ চেসকে (৮) ফেরাতেও বেশি সময় নেননি তিনি৷ পরে ডোরিচ (৯) এবং হোল্ডার (১৬) চেষ্টা করেছিলেন দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর৷ কিন্তু অমিত মিশ্র ডোরিচকে ফেরান৷ তারপরই হোল্ডারকে তুলে নেন অশ্বিন৷ শেষ দিকে ব্রেথওয়েট এবং দেবেন্দ্র বিশু দুর্দান্ত লড়াই করে ভারতীয় বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেই অশ্বিন আবার ত্রাতা৷ দুই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার মিলে জুটিতে তুললেন ৯৫ রান৷ তারপরই অশ্বিনের আঘাত৷ তুলে নিলেন বিশুকে (৪৫)৷ তাঁর ষষ্ঠ উইকেট৷ শেষ উইকেটটাও তিনিই তুলে নিলেন৷ গ্যাব্রিয়েলকে ফেরালেন তিনি৷ ব্রেথওয়েট অপরাজিত রইলেন ৫১ রানে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.