সুলয়া সিংহ: দেশে ফিরেছেন। কিন্তু মেয়ের এখনও চাকদহে নিজের বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়নি। তাই দমদম পার্কে মেয়ের ফ্ল্যাটেই চলে এসেছেন ঝুলন গোস্বামীর মা। তবে মায়ের সঙ্গেও মন খুলে গল্প করার সময় নেই ঝুলনের। বিশ্বকাপের মঞ্চে দুর্দান্ত পারফর্ম করে দেশে ফেরার পর থেকেই দারুণ ব্যস্ত তিনি। আজ অমুক জায়গায় সংবর্ধনা তো কাল অমুক চ্যানেলে ইন্টারভিউ। এমনকী দিদি ইংল্যান্ড থেকে কী উপহার এনেছেন, সেটাও এখনও জেনে উঠতে পারেননি ভাই-বোনরা। মা অবশ্য কোনও উপহারের অপেক্ষাই নেই। মেয়ের সাফল্যেই তিনি আপ্লুত। বললেন, “মেয়ে বাড়ি ফিরেছে। আবার কী চাই। আর তাছাড়া ইংল্যান্ডে কি আর শাড়ি পাওয়া যাবে? আমি তো শাড়ি পরি। তাই কোনও উপহার দরকার নেই।” আপনি মেয়েকে কোনও গিফ্ট দিলেন নাকি? এ প্রশ্নের উত্তরে হাসি মুখে বললেন, “এতদিন বাইরে বাইরে খাচ্ছে মেয়েটা। তাই ভাত-ডাল-মাছ রান্না করে খাওয়ালাম। বাড়ির খাবারই ভালবাসে।” বলতে বলতে ব্যস্ত মেয়ে বাড়ি ঢুকলেন। তবে হাতে বেশি সময় ছিল না। আবার ছুটতে হবে মোহনবাগান ক্লাবে। মোহনবাগান দিবসে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁর হাতে। তার আগে খানিকক্ষণের আড্ডায় বেরিয়ে এল অনেক স্মৃতি।
চাকদা থেকে লর্ডসের সফরটা মোটেই সহজ ছিল না। সফরে অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছেন তিনি। বিশেষত মেয়ে হিসেবে লড়াইটা হয়তো আরও কঠিন ছিল। তবে ঝুলন বলছেন এটাই জীবন। “প্রত্যেক মানুষের সামনেই নানা বাধা আসে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনও নিশ্চয় মসৃণ ছিল না। তাই এর সঙ্গে ছেলে-মেয়ের কোনও ব্যাপার নেই।” বললেন বাংলার পেসার। ছোট থেকেই কি ক্রিকেট নিয়ে প্যাশন ছিল? ঝুলন বলছেন, “এক্কেবারে না। আমার মনে হয় না, ছোটবেলায় কেউই কোনও লক্ষ্য নিয়ে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলে না। আমি তো খেলতাম, যাতে পড়াশোনা কম করা যায়।” পড়ায় ফাঁকি মেরে স্কুলে ফেলও করেছেন। তাহলে ক্রিকেটটাকে কবে সিরিয়াসলি নিলেন তিনি? বললেন, ১৯৯২ বিশ্বকাপে। প্রথমবারের রঙিন বিশ্বকাপ দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ঝুলন। বাকিটা ইতিহাস।
২০০৭ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন। সেবার ভারত থেকে একমাত্র ঝুলনই পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেই স্মৃতি আজও তাঁর চোখের সামনে ভাসে। বলছেন, “শচীন তেণ্ডুলকরের উপস্থিতিতে পুরস্কার নেওয়ার অনুভূতিটাই ছিল অন্যরকম। সেবার পুরুষ ক্রিকেটাররাও তালিকায় ছিলেন না। তাই আমার হাত ধরে দেশে অন্তত একটা পুরস্কার আসায় দারুণ লেগেছিল।”
লর্ডসের স্মৃতি আপাতত অতীত। দু’বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার নয়া উদ্যমে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লড়াই শুরু করবেন। ইংল্যান্ডে ভারতীয় দলকে ভক্তরা যেভাবে সমর্থন জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে তাঁদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেই সমর্থনই ফের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছ থেকে চাইছেন ওয়ানডেতে সর্বাধিক উইকেটের মালকিন ঝুলন। বলছেন, “আমরা মানুষকে আনন্দ জিতে চাই। তাঁরা ম্যাচ দেখলেই খুশি হব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.