সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাণ থাকলে মনে হত যেন ঘুমিয়ে রয়েছে। হাজার হাজার বছর আগেকার নিথর শরীরটায় একইরকম রয়েছে হুবহু, যেমনটা ছিল জীবিত অবস্থায়। রাশিয়ার সাইবেরিয়া (Siberia) অঞ্চলে মাটির নিচে তুষার যুগের লোমশ গণ্ডারের (Woolly rhino)মৃতদেহটি দেখে বেশ চমকে উঠেছেন পুরাতাত্বিকরাই। দেহটি পরীক্ষা করে তাঁরা বলছেন, প্রাণীটির বেশিরভাগ অঙ্গই নষ্ট হয়নি। প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত মৃতদেহের এক চমৎকার উদাহরণ হিসেবেই সম্প্রতি তুষার যুগের গণ্ডারের দেহটিকে চিহ্নিত করছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, পূর্ব সাইবেরিয়ার আবিস্কি অঞ্চলে সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারাই বরফের চাদরের ভিতর উদ্ধার করেছে দেহটি। প্রথমে তাঁরাই অবাক হয়ে যান এমন একটি প্রাণীর অবয়ব দেখে। এরপর বিশেষজ্ঞদের খবর দেওয়া হয়। তাঁরাই ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাণীটিকে লোমশ গণ্ডার হিসেবে চিহ্নিত করেন। গণ্ডারের দেহ থেকে কয়েকটি নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর প্রাণীবিজ্ঞানীদের ধারণা, অন্তত ২০ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে, তুষার যুগে এ ধরনের প্রাণীর বসবাস ছিল সাইবেরিয়ার এই অঞ্চলে।
উদ্ধার হওয়া দেহটি গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে রেডিওকার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে, ঠিক কত বছরের পুরনো এই লোমশ গণ্ডারটি। এই মুহূর্তে ইয়াকুটুস্ক শহর অর্থাৎ যে শহরের অদূরে পাওয়া গিয়েছে গণ্ডারের দেহটি, সেই রাস্তা পুরোপুরি বরফে ঢাকা। বরফ কেটে রাস্তা তৈরি করে, তবেই খনন এলাকা থেকে তা শহরের গবেষণাগারে নিয়ে আসা সম্ভব, যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তুষার যুগের (Ice Age) প্রাণীটিকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করেছেন ভ্যালেরি প্লটনিকভ নামে এক বিশেষজ্ঞ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গণ্ডারটি নেহাৎই শাবক। বয়স তিন থেকে চার বছরের মধ্যে। দেখে তাঁর মনে হয়েছে, শাবকটি কোনওভাবে জলে পড়ে গিয়েছিল, ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এরপর সে চাপা পড়ে গিয়েছেন পুরু বরফের স্তূপে। বিস্ময়ের সুরে ভ্যালেরি এও জানাচ্ছেন, ”নাকের নিচ থেকে সবে খড়গ বেরনো শুরু হয়েছিল গণ্ডারটির। সেই চিহ্নও একেবারে রয়েছে। যদিও শরীরে এই অংশ সবচেয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এর দেহের সফট টিস্যুগুলি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।”
সম্প্রতি সাইবেরিয়ান অঞ্চলে তুষার যুগের বেশ কিছু প্রাণীর জীবাশ্ম উদ্ধার হচ্ছে। গত আগস্ট থেকে তাই খননকাজও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরেও লায়াখভস্কি অঞ্চলে প্রচুর প্রাণীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল, যা দেখে মনে করা হয় যে প্রাণীগুলিকে একসঙ্গে মেরে কবর দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া লোমশ গণ্ডার, গুহায় বসবাসকারী কিছুটা ছোট সিংহের দেহও উদ্ধার হয়েছে এর আগে। তবে কোনওটাই এতটা জীবন্ত বলে মনে হয়নি। সেদিক থেকে এই শাবক লোমশ গণ্ডারটি বেশ অবাক করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। মনে করা হচ্ছে, উষ্ণায়নের (Global warming) কারণে সাইবেরিয়াতেও বরফগলনের হার বাড়ছে। তাই হাজার হাজার বছর আগেকার ইতিহাসের দলিল এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.