সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গালভরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন অনেকেই। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তাঁর না করা কাজ বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়। লড়াই যদি হয় বিশ্বের পয়লা নম্বর শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রনায়কের পদের জন্য, তাহলে তো কথাই নেই। আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বিডেন (Joe Biden) কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচনে জিতে ডেমোক্র্যাটরা সরকার গড়লে পরিবেশ রক্ষায় জোর দেবেন। ট্রাম্পের ভেঙে বেরিয়ে আসা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে (Paris Climate Agreement) ফের যোগ দেবেন। শনিবার রাতে তাঁর জয় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেই আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন পরিবেশ কর্মীরা।
বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখে পরিবেশ সুস্থ রাখার অঙ্গীকারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ১৮৭ টি দেশ মিলে একত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় গ্রিনহাউস গ্যাসের (Greenhouse gas) নিঃসরণ কমিয়ে সবুজ পৃথিবীর আবহাওয়া সুন্দর রাখার। বিশ্বের দ্বিতীয় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে আমেরিকার এই চুক্তি গ্রহণ করা তাৎপর্যপূর্ণ। চুক্তি অনুযায়ী, এই শতকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা কিছুতেই ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি বাড়ানো যাবে না। ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বেঁধে ফেলতে হবে। তার জন্য শিল্পক্ষেত্র বা আর্থিক ক্ষেত্রে যা যা বদল আনার, তা আনতে হবে। তৈরি করতে হবে নয়া নীতি। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এবং চুক্তিস্বাক্ষরকারী প্রত্যেক রাষ্ট্রকে একইভাবে তা কার্যকর করতে হবে। সেসময় প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে আমেরিকার এই চুক্তিতে অংশ নেওয়া তখনকার ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।
২০১৬ সালে হোয়াইট হাউসের মালিকানা বদল হয়। প্রেসিডেন্ট পদে আসেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। তার বছর দুয়েকের মধ্যে তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসতে চান এই কারণ দেখিয়ে যে, এই চুক্তি আমেরিকার পক্ষে তেমন লাভজনক নয়, উলটে তা মানতে গিয়ে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। এমনকী আমেরিকার জন্য এই চুক্তি স্থায়ীভাবে একটা ক্ষতি করে দিয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। ১৮৭ টি দেশের মধ্যে আমেরিকাই একমাত্র সদস্য, যারা চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইল। এরপর পদ্ধতি মেনে ধাপে ধাপে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে আসে ঠিক ৪ তারিখ – ৪ নভেম্বর, ২০২০।
আর এখানেই ডেমোক্র্যাট শিবিরের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বাজিমাত করতে চেয়েছেন বিডেন। প্রচারে তিনি বারংবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ৭৭ দিনের মধ্যেই ফের আমেরিকা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া ‘গ্রিন জব’ অর্থাৎ পরিবেশ রক্ষা করে কর্মসংস্থানে কয়েকশো কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও শোনা গিয়েছিল তাঁর গলায়। অর্থাৎ পরিবেশ ইস্যুতে বিডেন নিজের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন।
প্রায় পাঁচদিনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে এখন তিনি আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দিলে আমেরিকাকে কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি রুখতে যথেষ্ট তৎপর হতে হবে। সবদিক বজায় রেখে বিডেন পারবেন তো এই চুক্তি কার্যকর করতে? এই উত্তর স্পষ্ট হবে বিডেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হওয়ার পরই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.