সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রকৃতিকে তছনছ করে বিপন্ন করে তুলছে মানবজাতিই। প্রতিটি প্রান্তে তার ক্রমবর্ধমান দাপটের জেরে কোণঠাসা, বিপন্ন পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীরা। বিশেষত চরম অস্তিত্ব সংকটে বন্যপ্রাণ। বিশ্ব বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের (WWF) নয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫০ বছরেরও কম সময়ে দুই তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। কোথাও আবার ধীরে ধীরে নয়, একেবারে অবলুপ্তির পথে চলে যেতে হয়েছে তাদের। এ সবকিছুর জন্য WWF’র রিপোর্ট দায়ী করছে মানব সভ্যতার আগ্রাসী মনোভাবকে।
নীলগ্রহের অধিকারী কি মনুষ্যজাতি একাই? বীরভোগ্যা বসুন্ধরা কি আমরা একাই ভোগ করব? অন্য আর কোনও প্রাণীর কোনও অধিকারই নেই? অথচ ক্ষুদ্র কীট থেকে বৃহৎ চারপেয়ে – সকলেই তো পৃথিবীর অংশ। তাহলে সহাবস্থানের বদলে কেন আমরা তাদের বাসযোগ্য জায়গাটুকুও দখল করে নিচ্ছি? এসব প্রশ্ন আর সংবেদনশীল মনের গভীরে নয়, এবার প্রকাশ্যে নিয়ে এল WWF’র সাম্প্রতিক রিপোর্ট। বলা হচ্ছে, বন্যপ্রাণীদের সংখ্যায় এত দ্রুতগতির পতন আগে কখনও দেখা যায়নি। WWF’র প্রধানের কথায়, “এই পৃথিবী, যাকে আমরা নিজেদের ঘর মনে করি, তাকে আমরাই তছনছ করছি। অন্যের বিপদ বাড়াচ্ছি, নিজেদেরকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি। এবার প্রকৃতি আমাদের বিপদ সংকেত পাঠাচ্ছে।”
১৯৭০ থেকে ২০১৬ – এই সময়ের মধ্যে এই গবেষণা করা হয়েছে। তাতেই উঠে এসেছে যে পাখি, উভচর, স্থলচর প্রাণীসমেত অন্তত ৬৮শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এভাবে উল্কাগতিতে বন্যপ্রাণ বিলুপ্তির পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। জঙ্গলের জমি কেটে সাফ করে মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো, বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকট, দাবানলের মতো কারণেই এই পরিস্থিতি। জুলজিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের (ZSL) ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু টেরির মতে, “যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সমস্ত বন্যপ্রাণ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বড়সড় বিপদের মুখে পড়বে।”
আসলে মানুষের দাপট এতটাই বাড়ছে যে প্রবল শক্তিশালী প্রাণীরাও এবার পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার যে কৌশল তারা জন্ম থেকে রপ্ত করে এসেছে, মানবজাতির চাতুর্যের কাছে সেই কৌশল আর কাজে লাগছে না। আর সেটা তাদের দ্রুত বিনাশের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র মানুষের জন্যই বিপন্ন অন্তত ১০ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী। ওদের ভবিষ্যৎ কী? আমরাই বা কোন পথে আসলে এগোচ্ছি? এসব প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়ই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.