ধীমান রায়, কাটোয়া: পুরুলিয়ার (Purulia) গড়পঞ্চকোট ও জয়চণ্ডী পাহাড়ের পর দাবানলের গ্রাসে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের (Aushgram) বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। জঙ্গলের ভিতরে নাগাড়ে জ্বলছে আগুন। পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে ‘শয়ে ‘শয়ে গাছপালা। কিন্তু স্থানীয় বনকর্মীদের প্রথমে নজরেই পড়েনি। জঙ্গলের ভিতরে এই অগ্নিকাণ্ডের ছবি ধরা পড়ে বনবিভাগের স্যাটেলাইটে। দেরাদুন বিভাগের নজরে ধরা পড়ার পর পূর্ব বর্ধমান জেলার বনবিভাগে জানানো হয়। তারপরই তৎপরতা শুরু হয়েছে। এই বনাঞ্চল ময়ূরদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। দাবানলের (Wild Fire) জেরে তারাই সবচেয়ে বিপাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আউশগ্রামের আদুরিয়া বিট এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের কাছে জঙ্গল এলাকা ভয়াবহ আগুন গ্রাস করেছে। এখন পাতা ঝরার দিন। পড়ে থাকা শুকনো পাতায় আগুন ধরে তা নিমেষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে বনের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা। জানা যায়, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬ হেক্টর এলাকার বনভূমি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে এই ঘটনার খবর পেয়েই দমকল যদিও আগুন আয়ত্তে আনে। কীভাবে আগুন লাগল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বনদপ্তর।
পূর্ব বর্ধমান জেলার বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, “কিভাবে আগুন লাগল তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ যদি কেউ আগুন লাগিয়েছে বলে ধরা পড়ে তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নিশাদেবী জানান, ১৫ থেকে ১৬ হেক্টর জমিতে আগুন লেগেছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে আউশগ্রামের আদুরিয়া বিট এলাকার হেদগড়িয়া, জালিকাঁদর, ফাঁড়ি গ্রামের কাছে জঙ্গলে আগুন লাগতে দেখা যায়৷ জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থাকা শুকনো পাতায়, শুকনো কাঠে, আগুন হু হু করে ছড়িয়ে যায়৷ সেই ভয়ংকর ছবি ধরা পড়ে দেরাদুনে ফরেস্ট বিভাগের স্যাটেলাইটে (Satelite)৷ সেখান থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলা বন আধিকারিককে জানানো হয়। তারপরেই নড়েচড়ে বসে জেলা বনদপ্তর। এরপরেই আসে দমকল বাহিনী।
কীভাবে আগুন লাগল, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে এলাকায়। সূত্রের খবর, কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ নিয়ে আগেও বনদপ্তর থেকে মাইকিং করে প্রচার করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিপন্ন বন্যপ্রাণ। আউশগ্রামের আদুরিয়া বিট এলাকার জঙ্গলে ইতিমধ্যে বেড়েছে ময়ূরের (Peacock) সংখ্যা। প্রায়ই ময়ূরের দল চোখে পড়ে। পাশাপাশি আদুরিয়া জঙ্গলে ইন্ডিয়ান উলফ বা হেঁড়ল, খরগোশ, অজগর, বনমুরগি, বনবিড়ালের মতো প্রাণীরও অস্তিত্ব রয়েছে। হেঁড়লের সংখ্যাও আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। এছাড়া আউশগ্রামে জঙ্গলে রয়েছে প্যাঙ্গোলিন, সজারু। এই অগ্নিকাণ্ডের পর বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা। যদিও বনকর্মীদের দাবি, এখনও পর্যন্ত আগুনে কোনও বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.