কোয়েল মুখোপাধ্যায়: সময়ের যেন আজকাল বড্ড তাড়া! হাত বাড়িয়ে ধরতে গেলেই ফসকে যাচ্ছে। দিনগুলো ফুরিয়ে আসছে বেজায় তাড়াতাড়ি। টের পাচ্ছেন তো? না, না। ‘জন্মিলে মরিতে হবে…’ জাতীয় কোনও দার্শনিক সত্যের তাড়না নয়। বিশেষজ্ঞরাই বুক ঠুকে বলছেন এই চরম ভৌগোলিক বাস্তবের কথা। তাঁদের দাবি, ধীরে ধীরে কমছে দিনের (Day) মেয়াদ। আশৈশব জেনে-পড়ে মুখস্থ করে আসা ১ দিন মানেই ২৪ ঘণ্টা– এই তথ্য এবার ‘মেমরি’ থেকে ‘ডিলিট’ করার পালা বোধহয় সমাগত। কারণ ‘প্ল্যানেট আর্থ’—এ আজ-কাল-পরশু, কোনও দিনই কিন্তু এখন আর ২৪ ঘণ্টার ‘ফুল টাইম লিমিট’ পেরোচ্ছে না! যবনিকা পতন ঘটছে আগেই। কিন্তু কেন?
আসলে এর পিছনে রয়েছে পৃথিবীর (Earth) আবর্তনের গতি। গত পাঁচ দশকে যা ক্রমশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আগের তুলনায় বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর ঘূর্ণনের ‘স্পিড’ গিয়েছে বেড়ে। আর এতেই স্বল্পায়ু হচ্ছে দিন। ২০২০ সালের ১৯ জুলাই, দিন সম্পূর্ণ হয়েছিল ২৪ ঘণ্টার কাঁটা স্পর্শ করার ১.৪৬০২ মিলিসেকেন্ড আগে। ১৯৬০ সাল থেকে হিসাব করলে বিগত ২০২০ বছরটিতে স্বল্পতম দিনের সংখ্যা ছিল ২৮টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা চলতি বছরে আরও বাড়বে। ২০২১ সালে গড়ে প্রতিদিনের মেয়াদ ২৪ ঘণ্টা থেকে ০.০৫ মিলিসেকেন্ড কম হবে।
প্রতি ৮৬,৪০০ সেকেন্ডে পৃথিবী নিজের কক্ষপথে একবার ঘুরে আসে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস (আইইআরএস) জানাচ্ছে, ২০২০ ডিসেম্বরে সরকারি সময়ের হিসাবে কোনও ‘লিপ সেকেন্ড’ যোগ হবে না। এই ‘লিপ সেকেন্ড’ অনেকটা ‘লিপ ইয়ার’—এর মতোই। আইইআরএস অনুসারে, ১৯৭০ সাল থেকে প্রতি ২৭ দিনের ব্যবধানে ‘লিপ সেকেন্ড’ যোগ করা হচ্ছে। শেষবার করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
কিন্তু কমে যাওয়া সময়ের হিসাব মেলাতে ‘লিপ সেকেন্ড’ কেন ২০২০ সালে যোগ করা হয়নি? কারণ, ‘লিপ সেকেন্ড’ যোগ করা হয় জুন অথবা ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিন। আর এই হিসাবে পরবর্তী ‘লিপ সেকেন্ড’ পড়ছে ২০২১ সালের ২০ জুন। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক, ড. সুনন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, “দিনের সময়সীমা ক্রমশ কমছে ঠিকই। কিন্তু সেটা নেহাতই কম। অ্যাটমিক ক্লক ছাড়া এর পরিমাপ সম্ভব নয়। মিলিসেকেন্ড মানে এক সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগ। সুতরাং, আমরা এই মেয়াদকে নগণ্যই ধরতে পারি।”
কিন্তু এটা ঘটছে কেন? কেন পৃথিবীর আবর্তনের গতি বাড়ছে? পৃথিবীজোড়া বিশেষজ্ঞদের সুরেই সুর মিলিয়ে সুনন্দবাবুর বক্তব্য, এর অন্যতম কারণ হতে পারে বিশ্ব উষ্ণায়ন। হিমবাহের গলন। তিনি বলছেন, “গ্রিন হাউস গ্যাসের জেরে দূষণ, মানুষের কার্যকলাপে গ্লোবাল ওয়ার্মিং–এ সবের জেরে পৃথিবীর সর্বত্রই হিমবাহগুলি অত্যন্ত দ্রুত হারে গলছে। আর এটাই পৃথিবীর ‘স্পিন’—এর গতি বৃদ্ধি তথা দিনের মেয়াদ হ্রাসে অনুঘটক হতে পারে। কারণ, হিমবাহের দ্রুত গলনে পৃথিবীর পরিধি তথা উপরিভাগ থেকে কিছুটা হলেও ওজন হ্রাস পায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.