Advertisement
Advertisement
Science

পতঙ্গের শরীরে গাছের জিন! সাদা মাছি নিয়ে নতুন তথ্যে তোলপাড় বিজ্ঞানী মহলে

জিন চুরি করেই এত শক্তিশালী সাদা মাছির দল, সত্য়ি প্রকাশ্যে আসতেই বিস্ময়ের শেষ নেই।

What is the science behind the strength of white flies, new theory unveiled |Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:March 30, 2021 9:18 pm
  • Updated:March 30, 2021 9:18 pm  

গৌতম ব্রহ্ম: দুশমনের হাতিয়ার হাতিয়ে দুশমনকেই ঘায়েল! আবার যে সে হাতিয়ার নয়, শত্রুর শরীরের জিন! প্রতিপক্ষ এখানে উদ্ভিদ। আর চোর এক উদ্ভিদভুক পতঙ্গ, খেতের ফসল উদরস্থ করে চাষির সর্বনাশ করতে যার জুড়ি নেই। শক্তির নেপথ্য রহস্য উন্মোচিত হলে তাদের সংহার করতে কতক্ষণ?

সম্প্রতি এমনই আলোড়ন ফেলা তথ্য প্রকাশ্যে এনে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। যাঁদের দাবি, উদ্ভিদ থেকে পতঙ্গের জিন চুরির বৃত্তান্ত এই প্রথম প্রকাশ্যে এল। বোঝা গেল, কড়া রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ সত্ত্বেও কেন পতঙ্গকুল বেঁচে যাচ্ছে। আসলে আত্মরক্ষার মূ্‌লে রয়েছে এই জিন। যা নিজের শরীরে আত্মীকরণ করে রক্ষাকবচ তৈরি করে ফেলছে ফসলখেকো পতঙ্গ। সম্প্রতি বিশ্ববন্দিত ‘সেল’ পত্রিকায় এই গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশিত হতেই বিজ্ঞানীমহলে শোরগোল। ‘নেচার’ পত্রিকাতেও এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘দূষণের প্রভাব, ছোট হচ্ছে পুরুষাঙ্গ’, বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা নিয়ে টুইট গ্রেটা থুনবার্গের]

কী বলা হয়েছে সেখানে? হোয়াইট ফ্লাই (সাদা মাছি) বা জাব পোকা। বৈজ্ঞানিক নাম বেমিসিয়া ট্যাবাকি। এই উদ্ভিদভুক পোকার শরীরে পাওয়া গিয়েছে উদ্ভিজ্জ জিন ‘গ্লুকোসাইড মেলোনাইল ট্রান্সফারেজ।’ যার সাহায্যে পোকাটি উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক ‘ফেনোলিক গ্লাইকোসাইড’ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ফসল ধ্বংসকারী পোকাকে বহু চেষ্টাতেও বাগে আনা যায়নি। বোঝা যায়নি, কীসের বলে তারা এত বলীয়ান। এবার সেই পরাক্রমের পাসওয়ার্ড জানা গেল। জিন চুরি ধরা পড়ল। বিজ্ঞানীদের দাবি, জিন চুরি গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ বছর আগে। তারই দৌলতে হোয়াইট ফ্লাই এমন ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে। জিন বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে, এই জিন সাদা মাছির ক্রোমোজোমের মধ্যে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। সেই কারনেই গাছের তৈরি বিষাক্ত রাসায়নিক ফেনোলিক গ্লুকোসাইড সাদা মাছির কোনও ক্ষতি করতে পারে না।

গবেষণাটিকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, সাদা মাছি একাধিক ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়ার বাহক। কিন্তু এরা যে সেই জীবাণুকুলের সাহায্য নিয়ে উদ্ভিদের জিন আত্মস্থ করে অজেয় হয়ে উঠেছে, এই তথ্য জীববিজ্ঞান গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। বস্তুত জীবাণুর শরীর থেকে জিন চুরির নজির কিছু পতঙ্গের রয়েছে। ছত্রাক-ব্যাকেটিরিয়া থেকে জিন চুরি করেছে, এমন উদাহরণও ভুরি ভুরি মজুত। কিন্তু গাছের দেহ থেকে জিন চুরির ঘটনা এই প্রথম জানা গেল।

[আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক! প্রথমবারের জন্য লেন্সবন্দি ব্ল্যাক হোলের চারপাশের চৌম্বক ক্ষেত্র]

আবিষ্কারের নেপথ্য কারিগর ‘চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্স’-এর একদল বিজ্ঞানী। গবেষকরা এমন এক ধরনের টোম্যাটো গাছ তৈরি করেছিলেন, যা দ্বিগুণ ক্ষমতাসম্পন্ন আরএনএ মলিকুল নিঃসরণে সক্ষম এবং যা সাদা মাছির চোরাই জিনের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে পোকাগুলিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। পতঙ্গবিদ অর্ণব চক্রবর্তী জানালেন, সাদামাছি মূলত গাছের পাতা ও সবুজ কান্ড থেকে মুখে মজুত স্টাইলেট দিয়ে রস শুষে খায়। জীবনচক্র অনুসরণ করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পিউপা ফাটিয়ে বেরিয়ে যায়। এরা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। অর্ণবের পর্যবেক্ষণ, এই পোকাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাছ ফেনোলিক গ্লুকোসাইড নামে রাসায়নিক তৈরি করে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement