প্রতীকী ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথম দর্শনে ধূমকেতুই মনে হয়েছিল ব্যাপারটাকে।
দেখতে সূঁচালো। লম্বাটে চুরুটের মতো আকৃতি। মাস খানেক আগে ধেয়ে এসেছিল সৌরজগৎ লক্ষ্য করে। সেকেন্ডে ৪৪ কিলোমিটার গতিবেগে। প্রমাদ গুণছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, বস্তুটা অনেকটা টেনিস বলের মতো সৌরজগতের বলয়ে একটা ছোট্ট ড্রপ মেরে পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে লাফ মেরেছিল সামনের দিকে।
তখন একবার সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ গবেষকরা। গ্রিনব্যাঙ্ক টেলিস্কোপে কাছ থেকে দেখে জানিয়েছিলেন, জিনিসটি কোনওমতেই ধূমকেতু নয়। তবে?
গ্রহাণু কি? প্রাথমিকভাবে তাও ধরে নেন বিজ্ঞানীরা। ফলে ধূমকেতু সি/২০১৭ ইউ ১ নাম বদলে হয় গ্রহাণু ওউমুয়ামুয়া। এরপর আরও দেড়মাস কেটে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৩৪ বার উড়ন্ত বস্তুটি ধরা পড়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রে। আর সেই সব পর্যবেক্ষণের পর ফের মত বদলেছেন গবেষকরা।
ওউমুয়ামুয়া সম্পর্কে তাঁদের সাম্প্রতিকতম সিদ্ধান্ত বলছে, জিনিসটা ভিনগ্রহী যানও হতে পারে। অন্তত তেমনটা হওয়ার বড়সড় সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেই একটি বিবৃতি জানিয়ে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। আর তাতে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছে দুনিয়া জুড়ে। গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা বেশ কিছুদিন ধরেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। চেষ্টা করছেন ওই গ্রহাণু থেকে কোনও সিগন্যাল এসেছিল কি না তা খোঁজার। গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ সময় রাত ৮টা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রিন ব্যাঙ্ক স্টিয়ারেবল রেডিয়ো টেলিস্কোপের সাহায্যে আগন্তুক মহাকাশযানের থেকে ভিনগ্রহী সঙ্কেত খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছেন ব্রেকথ্রু লিসন প্রকল্পের গবেষকরা। গত ১৮ অক্টোবর প্রথম ওই বিচিত্র আকৃতির উড়ন্ত বস্তু দেখতে পান মহাকাশে প্রাণের সন্ধানে নিযুক্ত সার্চ ফর একস্ট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স (SETI) প্রকল্পের আওতায় থাকা হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। বস্তুটি পৃথিবী থেকে দুই মহাজাগতিক একক অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের দুই গুণ দূরত্বে সেকেন্ডে ৪৪ কিমি গতিবেগে উড়ে গিয়েছে।
টেলিস্কোপে ধরা পড়া সেই দৃশ্য খুঁটিয়ে দেখার পরে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন, যাতে সেটিকে তাঁদের কৃত্রিম বলে মনে হয়েছে। কেন না, মহাকাশে যে সমস্ত উল্কাপিণ্ড ঘুরে বেড়ায়, সাধারণত তারা গোলাকৃতি হয়। অজানা বস্তুটি লম্বাটে গড়নের। যানটি দৈর্ঘ্যে কয়েকশো মিটার লম্বা, কিন্তু চওড়ায় মাত্র তার ১/১০ ভাগ। এক্ষেত্রে উড়ন্ত বস্তুটিকে ভিনগ্রহী যান ভাবার স্বপক্ষে বিজ্ঞানীদের যুক্তি, সম্ভবত নক্ষত্রমণ্ডলে উপস্থিত গ্যাস ও ধুলোর ঘর্ষণ এড়ানোর জন্য সুচিন্তিত ভাবেই ওই যান বানানো হয়েছে। আর সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ এড়াতে গতিবেগ রাখা হয়েছে অত্যন্ত বেশি।
এদিকে, ওউমুয়ামুয়া নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে নাসার একটি ঘোষণায়। তারা জানিয়েছে, শীঘ্রই মহাকাশ সংক্রান্ত একটি বড় ঘোষণা করতে চলেছে তারা। আর সেই ঘোষণার মূলে রয়েছে কেপলার দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়া কিছু আবিষ্কার। হাওয়াই গবেষকদের বিষয়টি এর সঙ্গে জুড়ে অনেকেই মনে করছে ভিনগ্রহী যান নিয়েই ঘোষণা করতে চলেছে নাসা। এখন দেখার রহস্যময় ওই উড়ন্ত সিগারেটের মতো দেখতে বস্তুটি থেকে কী সিদ্ধান্তে পৌছান গবেষকরা। প্রসঙ্গত, ওই সম্ভাব্য ভিনগ্রহীযান ওউমুয়ামুয়ার নামের অর্থও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্রচলিত ভাষায় দূত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.