গাছের পুনর্বাসন দেউচা-পাঁচামিতে। ছবি: শান্তনু দাস।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: নতুন সংসারে দেউচা-পাঁচামি খনি এলাকার বৃক্ষরাজি। পুনর্বাসন দেওয়া শুরু হল গাছেদের। শুক্রবার চাঁদা মৌজার খনন এলাকা থেকে একটি পূর্ণবয়স্ক মহুয়া গাছকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল এক কিলোমিটার দূরে। গাছ বিশেষজ্ঞ ও জেলাশাসকের উপস্থিতিতে শিল্প স্থাপনে গাছ না কেটে এমন প্রতিস্থাপন রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম বলেই দাবি জেলা প্রশাসনের। এ বিষয়ে জেলাশাসক বিধান রায় জানান, ‘‘আমরা এলাকার মানুষ, পরিবেশ সংস্কৃতি কিছুই নষ্ট না করে আধুনিক শিল্পের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করব। আর তা শুরু হল শুক্রবার দুপুরে।’’
দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি থেকে প্রথম পর্যায়ে ৩২৬ একর জমির নিচে কালো পাথর তোলার কাজ শুরু হয়েছে। চাঁদা মৌজায় ১২ একর সরকারি জমিতে গত সপ্তাহ থেকে খনন চলছে। সেই এলাকায় ১৮০ টি মহুয়া, অর্জুন, শিরিষ গাছ পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই গাছগুলিকে এক কিলোমিটার দূরে একই অবস্থানে, একই দিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে। গত দুদিন ধরে গাছগুলিকে প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি চলছিল। গাছ প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ রামচন্দ্র আপারি ও দেশ-বিদেশের গাছ বিশেষজ্ঞ শিশির কুমার মিত্রকে নিয়োগ করা হয়। তাঁদের উপস্থিতিতেই দুদিন আগে থেকেই গাছের গোড়ায় জল দেওয়া শুরু হয়। বৃহস্পতিবার কাটা হয় ৭৫ শতাংশ শিকড়। তার উপর নতুন শিকড় গজানোর জন্য প্যারাব্যানজানিক হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও ইনডোল অ্যাসিড দেওয়া হয়।
জেলাশাসক বিধান রায় জানান, ‘‘দেউচা-পাঁচামির জন্য ভূমি দপ্তরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক বাবুলাল মাড়ান্ডি উদ্যান পালন বিষয়ে গবেষক। ফলে এই গাছ প্রতিস্থাপনে তার নজরদারিতে এই কাজ আরও ভাল হচ্ছে। আমরা এলাকার ৯৮০ টি গাছকে তাদের অবস্থানেই প্রতিস্থাপন করব। মথুরা পাহাড়িতে যে নতুন স্কুল নির্মাণ হচ্ছে সেখানেও কিছু বড় বৃক্ষ আমরা বসাব। যাতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ছায়া পায়।’’ গ্রামবাসী মাধব বিত্তার জানান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসকের উদ্যোগ খুবই ভালো। এতে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও সম্মান রক্ষা পাবে।’’ দেওয়ানগঞ্জের রবি টুডু জানান, ‘‘যেভাবে গাছ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে আশা করি, সেটা ভালোই হবে। আমরা গাছ কাটতে বাধা দিয়েছিলাম। এই গাছ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।’’
উল্লেখ্য, এই গাছ প্রতিস্থাপন দেখতে আশেপাশের আদিবাসীরা খনন কাজের মাঠে হাজির হয়। তাদের উপস্থিতিতেই ক্রেন দিয়ে গাছ তুলে অন্যত্র বসানো হয়। গাছ বিশেষজ্ঞ রামচন্দ্র আপারি জানান, ‘‘যেভাবে গাছ বসানো হচ্ছে তাতে ৭৫ শতাংশ গাছ বাঁচবেই। আমরা তারও বেশি গাছকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। এখানে প্রশাসনও গাছ বাঁচাতে খুব আগ্রহী।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.