Advertisement
Advertisement
Blue Whale

শঙ্খচিলের মুড়িগঙ্গায় রূপকথা লিখছে নীল তিমি! সাগরমুখী জনতার নজরে বৃহত্তম স্তন্যপায়ীরা

মুড়িগঙ্গায় ঢুকে পড়া তিমিগুলি তেমন হিংস্র নয়, শান্ত বলেই দাবি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।

Tourists excited about finding blue whales at Muriganga, Sagar
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 6, 2025 11:42 am
  • Updated:January 6, 2025 11:59 am  

গৌতম ব্রহ্ম, সাগর: পাঁচদিন আগেই দু দফায় মুড়িগঙ্গার পাড়ে ভেসে এসেছিল নীল তিমি। রবিবার ফের আরেক তিমিকে উদ্ধার করা হল। তবে এবার মৃত অবস্থায়। আর তাতেই স্পষ্ট হল, মুড়িগঙ্গা ও সংলগ্ন মোহনায় একাধিক তিমি ঢুকেছে। ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছে জেলা প্রশাসনের। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, বুধবার ঘোড়ামারা দ্বীপে উদ্ধার হওয়া তিমিটিই বোধহয় প্রাণ খুইয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে উদ্ধারকারী দল। তাদের যুক্তি, রবিবার সুমতিনগরে উদ্ধার হওয়া মৃত তিমিটি আকারে বুধবারের তুলনায় আকারে ছোট। এই একটি তথ্যই চিন্তা উসকে দিয়েছে। তবে কি একাধিক তিমি ঢুকেছে মুড়িগঙ্গার মোহনায়?

ঘোড়মারা দ্বীপে বুধবার উদ্ধার হয় একটি তিমি, তাকে পাঠানো হল সমুদ্রে। নিজস্ব চিত্র।

সিগাল বা শঙ্খচিলে থৈ থৈ মুড়িগঙ্গায় এখন রূপকথা লিখে দিয়েছে নীল তিমি! সাদা-ধূসর রঙের ছোট ছোট পাখির ঝাঁক উড়ে বেড়ায় মুড়িগঙ্গার উপরের অসীম আকাশে। এ চিত্র চেনা। কিন্তু আকাশ থেকে চোখ এখন মাটিতে নেমে এসেছে। সাগর সঙ্গমে বর্তমানের আকর্ষণ নীল তিমি। থেকে থেকে সেই রূপকথাই ঘাই মারছে পর্যটক থেকে স্থানীয়দের মনে। কিন্তু মুড়িগঙ্গায় কী করে এল বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী? নদীতে ঢুকে পড়া তিমির দৈর্ঘ্য তেমন বেশি নয়। মাত্র ২০ ফুট। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি নীল তিমির বাচ্চা এবং অসুস্থ। তাই ভাটার সময় বারবার পাড়ে এসে উঠছে। অত বড় চেহারা নিয়ে নিজে থেকে আর জলে ফিরতে পারছে না। ঘোড়ামারা দ্বীপের মৎস্য জীবীরা অবশ্য সেই বিপন্ন প্রাণীটিকে সময়মতো জলে ফিরিয়ে দিয়ে নতুন জীবনদান করেছে। সেই নীল তিমিকে দুদিন আগেই বিশেষ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বনদপ্তর বঙ্গোপসাগরে ফিরয়েছে। অন্তত এমনটাই জানিয়েছে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসের নিশা গোস্বামী। তিনি ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে জানান, মনে হচ্ছে একাধিক তিমি মোহনায় ঢুকেছে। উদ্ধার হওয়া তিমির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। কিন্তু রূপকথা ছড়িয়েছে নিজের ছন্দে।

Advertisement

গঙ্গাসাগর বেলাভূমিতে দেখা ননীগোপাল প্রধানের সঙ্গে। ননীগোপাল মৎস্যজীবী। ট্রলার নিয়ে সদলবলে মাছ ধরতে যাচ্ছে। জানালেন, এখন থেকে ৮-৯ কিমি দূরে গভীর সমুদ্রে তিমির দেখা তাঁরা একাধিকবার পেয়েছেন। সুতরাং, একাধিক তিমির এভাবে মুড়িগঙ্গায় ঢুকে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাগরে আসার পথে লট এইটের জেটি ঘাটে এদিন দেখা হয়েছিল কাকদ্বীপের বাসিন্দা সত্যেন্দ্রনাথ প্রধানের সঙ্গে। লঞ্চের ব্যবসা তাঁর। জানালেন, এই অঞ্চলে আগে কখনও তাঁরা তিমি দেখেননি। এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। তাই একটু চিন্তা তো হচ্ছেই।

মৎস্যজীবী ননীগোপাল প্রধান একাধিকবার তিমির দেখা পেয়েছেন বলে দাবি। ছবি: পিণ্টু প্রধান।

হ্যাঁ। লট এইট থেকে কচুবেড়িয়া, নামখানা থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্র ঘাই মারছে নীল তিমি। তীর্থযাত্রী থেকে সাধুসন্ত – সবাই মনে মনে ভাবছেন, ইশ! একবার যদি সেই নীল রূপকথার দেখা মিলত! কুম্ভের জন্যে এবার গঙ্গাসাগরে কম সাধু আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু নীল তিমির রূপকথা এবারের সাগর মেলায় অন্য মাত্র যোগ করেছে। সামুদ্রিক জীব বিশেষজ্ঞ অন্বেষণ পাত্র অভয় জানিয়েছেন, তিমি খুব শান্ত প্রাণী। হাঙ্গর বা সার্কের মতো হিংস্র নয়। যে প্রজাতির তিমি এখানে দেখা গিয়েছে, তা ছোট ছোট মাছ খেতে অভ্যস্ত। বড় কিছু খায় না। তবে ‘সারফেসিং’ করার সময় এদের উপরে আসতে হয়। তখন আশপাশে জলযান থাকলে সমস্যা হয়। তবে মুড়িগঙ্গা নদীতে দানবাকৃতির তিমির আনাগোনায় উদ্বিগ্ন জেলা বনদপ্তর থেকে পুলিশ প্রশাসন। যদিও অভয় দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্বেষণ পাত্র জানিয়েছেন, তিমি চিংড়ির মতো ছোট ক্রিল ছাঁকনির মতো ছেঁকে খায়। সমুদ্রে এই ক্রিল প্রচুর পরিমাণে মেলে। একটি তিমি একদিনে ৪ টন পর্যন্ত ক্রিল খেতে পারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement