সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জেটযুগে আরও উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট দরকার। সেই আশায় আরও বেশি করে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। তাদের মাধ্যমে আন্তর্জালিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। কিন্তু তার বিপদও আছে। এত স্যাটেলাইট প্রেরণে অশনি সংকেত দেখছেন মহাকাশবিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, স্যাটেলাইটের ভিড়ে রাতের আকাশে নক্ষত্রদের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করতে ভুল করবে টেলিস্কোপ। ফলে পরীক্ষানিরীক্ষায় বড়সড় গন্ডগোল বেঁধে যাবে। কারণ, কৃত্রিম উপগ্রহের ঔজ্জ্বল্য প্রায় একেকটি নক্ষত্রের সমান।
নক্ষত্রমণ্ডলীর নাড়ি-নক্ষত্র বুঝতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আকাশের দিকে তাক করে টেলিস্কোপ পেতে রাখেন বিজ্ঞানীরা। যন্ত্রে ধরা পড়া ছবি, তথ্য থেকে হিসেবনিকেশ করেই যাবতীয় জটিল অঙ্ক কষা হয়। কিন্তু নতুন বছরে সেই কাজে বাধা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা মহাকাশবিজ্ঞানীদের। রেডিও অ্যাস্ট্রোনমিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রেরিত স্যাটেলাইটগুলির দ্যুতি প্রায় নক্ষত্রের মতো। ফলে যন্ত্র ভুল করতেই পারে। হয়ত আসল নক্ষত্রের বদলে ছবি তুলে ফেলতে পারে ওই কৃত্রিম উপগ্রহগুলির। তাছাড়া এত ঔজ্জ্বল্যের ফলে একটি ছবি আরেকটি উপর প্রতিফলিত হতে পারে। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডক্টর ডেভ ক্লিমেন্সের কথায়, ”রাতের আকাশে অনেক কিছুই খোলা চোখে দেখা যায়। বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই কিছু না কিছু দেখেন। কিন্তু এবার তাঁদের দৃষ্টিভ্রম হওয়ার আশঙ্কা।”
যে বেসরকারি সংস্থাগুলি এই কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে মহাকাশে, তাদের পালটা দাবি, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা ক্রমেই তা পাঠানো হয়েছে। তাই সমস্যার সমাধানের দায়িত্বও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদেরই। পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে পৃথিবীর চারপাশে অন্তত ২২০০টি স্যাটেলাইট ঘোরাফেরা করছে। তাদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যোগাযোগ পরিষেবা মসৃণ হবে। আগামী বছর এই সংখ্যাটা আরও অন্তত ১৫০০ বাড়বে। আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশ কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর তোড়জোড় করছে বলে সূত্রের খবর। রয়্যাল অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ধারা প্যাটেলের মতে, ”এই স্যাটেলাইটগুলোর একেকটার আকার টেবিলের মতো। প্রতিফলন ক্ষমতা অনেক বেশি। সূর্যের আলো বেশি পরিমাণে প্রতিফলিত করতে পারে। ফলে টেলিস্কোপের ছবিতে সেসব প্রভাব থাকতে পারে। যাতে খুব সূক্ষ্ণ গণনা সম্ভব নয়।”
এই মুহূর্তে চিলির তটভূমিতে বসানো রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ – LSST. তার মাধ্যমেই মূলত মহাজাগতিক গবেষণা চলছে। কিন্তু ক্লিমেন্সের আশঙ্কা, এই টেলিস্কোপটিও কাজে ভুল করবে। মহাকাশের আসল ছবি তুলে ধরতে ব্যর্থ হবে। উন্নয়নের স্বার্থে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ভবিষ্যতের বড় গবেষণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.