নব্যেন্দু হাজরা: পূর্ব কলকাতা (Kolkata) জলাভূমিকে রক্ষা করতে না পারলে শহরে জলের সংকট তৈরি হবে। নষ্ট হয়ে যাবে প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই এই জলাভূমিকে বাঁচাতে ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে রাজ্য পরিবেশ দপ্তর। পাশাপাশি প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করা হয়, সে পরিকল্পনাও নেওয়া হল বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন। যে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতি সহায়ক’।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শনিবার পরিবেশ ভবনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী রত্না দে নাগ বলেন, “পরিবেশ দূষণ জটিল সমস্যা। কেউ একা এর মোকাবিলা করতে পারে না। আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হতে হবে। বনাঞ্চল, মাটি, জলাভূমি আমাদের রক্ষা করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি কলকাতার ফুসফুস হিসাবে কাজ করছে। তাই তাকে রক্ষা আমাদের করতেই হবে।” পাশাপাশি সাধারণ মানুষের গাছ কাটা, প্ল্যাস্টিকের ব্যবহারই যে করোনা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী। বলেন, “আমি উদ্বিগ্ন। অতিমাত্রায় বন ধ্বংস, প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে। তাই করোনার বংশ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটা আমাদের রুখতে হবে।”
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রনে সাধারণ মানুষের কী কী করনীয় সেকথা তুলে ধরেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক কুমার বলেন, ” প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ করলে কী ধরনের বিপদ হতে পারে এই করোনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ডিমান্ড কীভাবে বেড়েছে। অথচ যে গাছ তা আমাদের সারাজীবন অক্সিজেন দেয়, তা কাটার কথা ভাবি। সেটা করলে হবে না। গাছ লাগানোর কথা আমাদের ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিবেশ থাকলে আমরা থাকব।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমফানের সময় প্রচুর গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পোষাতে গত চার মাসে ১৭ হাজার গাছের চারা বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় লাগানো হয়েছে।”
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি রক্ষায় পরিবেশ দফতরের কী প্ল্যান রয়েছে সেকথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “পূর্ব কলকাতা জলাভূমি পরিবেশের সম্পদ। এটাকে আমরা শহরের ফুসফুস এবং কিডনি বলতে পারি। এই সম্পদকে আমরা কীভাবে রক্ষা করবো তার পাঁচ বছরের প্ল্যান তৈরি করেছি। ১২০ কোটি টাকার প্ল্যান। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় আছে। কেউ এই জলাভূমিকে আক্রমন করলে কীভাবে আটকাবে! এটা আইনগত দিক। তাছাড়া যাঁরা মৎস্যচাষ বা কৃষি কাজ করছে এই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে তাদের অর্গানিক সিস্টেমে কী করে কাজ করাতে পারি তা দেখা হবে। রিসার্চ করা হবে। তাছাড়া দিঘা এবং সুন্দরবনের জন্য কোস্টাল জোনাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সেই মতোই কাজ হবে।”
এর পাশাপাশি যশের ক্ষতি পূরণ করতে এবং প্রকৃতির ধ্বংসলীলা থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে প্রকৃতিকেই কাজে লাগানোর কথা বলেন তিনি। সেই প্রকল্পের নাম হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতি সহায়ক। জানান, আমফানের পর সুন্দরবনে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগানো হয়েছে। বলেন, “দক্ষিণ-উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রের ঢেউ, হাওয়া ইত্যাদি থেকে কিভাবে প্রাকৃতিকে রক্ষা করা যায় সেকারনে একটা এক্সপার্ট কমিটি তৈরি হয়েছে। প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দুর্যোগ রোখা যায়, এই কমিটি রিপোর্ট দেবে। সেই মতো কাজ হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.